যবিপ্রবি লাইভ: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) প্রকৌশলীকে মারধর-হত্যার হুমকির ঘটনায় এবার সেই অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী যবিপ্রবির নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান। বুধবার (২৯ জুন) বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালত, যশোরে মামলা করেন তিনি।
প্রকৌশলী মিজানের ভাষ্যমতে, গত ২৫ জুন শনিবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন। এদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী মোঃ আজিজুল ইসলাম (যবিপ্রবির প্রক্তন শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মালার আসামী) প্রশিক্ষণস্থলে গিয়ে জানান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল কবীর তাঁকে ডাকছেন।
এরপর তিনি মামলার বিবরণিতে বলেন, "আমি ও আমার সাথে একই অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহন করা সেকশন অফিসার (গ্রেড ১) শাহিন হোসেনকে নিয়ে গ্যালারীর বাইরে বের হয়ে আসার সাথে সাথে ড. ইকবাল কবির জাহিদ (১নং আসমী) আমাকে কলার ধরে টানতে টানতে উক্ত গ্যালারি সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ওয়াশরুমের সিঁড়ির নিচে টেনে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গিয়ে তিনি আমাকে ডান কানে স্বজোরে একটি থাপ্পর মেরে জিজ্ঞেস করেন বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন বহিষ্কৃত ছাত্র মোঃ (২নং আসমাী) আজিজুল ইসলামকে নিরাপত্তা জামানতের এক লক্ষ আশি হাজার টাকা প্রদান করিনি? তখন আমি বলি এ ব্যাপারে আমার কোন কিছু করার নেই। তখনি ড. ইকবাল কবির জাহিদ ও আজিজুল ইসলাম অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ শুরু করেন এবং দুজনে একযোগে আমার সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।
বিবরণিতে আরও বলা হয়েছে, একপর্যায়ে আজিজুল ইসলাম আমার বুকের বাম পাশে হৃদপিন্ডে স্বজোরে ঘুষি মারলে আমি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দম আটকে বুকে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ি এবং চিৎকার শুরু করি। একইসঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীরাও চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে অনেকেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তখন ইকবাল কবির জাহিদ ও আজিজুল ইসলাম আমাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে উক্ত নিরাপত্তা জামানতের টাকা আজিজুল ইসলামকে প্রদানের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন অন্যথায় খুন জখমের হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বাদীর শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে চরম কষ্ট হওয়ায় স্বাক্ষীগন বাদীকে নিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল যশোর এ আসেন। হাসপাতালে উপস্থিত হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদীর ব্লাাড প্রেশার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় বাদীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে জরুরী চিকিৎসা প্রদান করেন। বাদী ০১ (এক) দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকেন।"
এদিকে ২৫ জুনের এ ঘটনায় যবিপ্রবি উপাচার্যের নির্দেশে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটিকে যথাশীঘ্রসম্ভব তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, অভিযোগ সঠিক নয়। মিজানুর ও আজিজের মধ্যে বাগবিতণ্ডা চলছিল। আমি শুধু তাদের থামাতে এগিয়ে গিয়েছিলাম। আমি তাকে মারধর করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারির সাউন্ড সিস্টেমের দুর্নীতির বিষয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছিলাম। ওই রিপোর্টে প্রকৌশলী মিজানুর রহমান অভিযুক্ত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গহণ করেনি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ায় আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এজন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেটর সরবরাহ করে। ওই প্রতিষ্ঠানের ১৮ লাখ টাকার প্রকল্পের বিপরীতে সিকিউরিটি বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জামানত রাখা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র আজিজকে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন ইকবাল কবীর। একাধিকবার তিনি সুপারিশ করেন। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া টাকা দিতে পারবেন না বলে তাঁকে জানান। এ জন্য তিনি তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন।
ঢাকা, ২৯ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এটিএম//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: