Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

পাবিপ্রবির স্বাধীনতা চত্বর: স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার গল্প

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২২, ০১:১৫

আবদুল্লাহ আল মামুন: এদেশের স্বাধীনতা একদিনে কিংবা একরাতে অর্জিত হয়নি। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল, দীর্ঘ ১৯ বছরে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে অর্জিত হয়েছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাসে আমরা হারিয়েছি ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণ, সম্ভ্রম হারিয়েছি অসংখ্য মা-বোনের।

৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ এবং বিজয় গাঁথা স্মৃতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরী করা হয়েছে বিভিন্ন ভাষ্কর্য ও স্থাপনা। তেমনি একটি ভাষ্কর্যের নাম ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ যা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থিত। স্থাপনাটি পাবিপ্রবি স্বাধীনতা চত্বর নামে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোজাফফর হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি ভাষ্কর্য তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করেন। ২০১৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের পর এই ভাষ্কর্যটির কাজ মাত্র ৮ মাসে সম্পন্ন হয়। স্বাধীনতার এই ভাষ্কর্যটির নকশা করেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী।

‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ শীর্ষক এই ভাষ্কর্যটি মূলত ৭১ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৭১ ফুট বিস্তৃত ভূমির উপরে স্থাপিত এবং এ ভাষ্কর্যটির উচ্চতা ভূমি থেকে ৫২ ফুট। মূল স্মৃতিস্তম্ভটি ছয়টি বৃত্তাকার সিঁড়ি নিয়ে নির্মিত ৭ ফুট বেদীর উপর স্থাপিত। বেদী থেকে শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত কয়েকটি হাত চারটি কবুতরকে খোলা আকাশে মুক্ত করে দিচ্ছে, যা বাঙালীর স্বাধীনতাকে নির্দেশ করেছে।

ভাষ্কর্যটিতে ৭১ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৭১ ফুট বিস্তৃত স্বাধীনতা চত্বরটির মাধ্যমে ১৯৭১ সালের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ইঙ্গিত করানো হয়েছে। স্মৃতি ভাষ্কর্যটির ৫২ ফুট উচ্চতা দ্বারা আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনকে বুঝানো হয়েছে। বেদীতে ৬টি বৃত্তাকার সিঁড়ি রয়েছে যা দ্বারা আমাদের ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবির প্রতীক নির্দেশিত হয়েছে। বেদীর ৬টি বৃত্তাকার সিঁড়ির উচ্চতা ৭ ফুট, যা দ্বারা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বোঝানো হয়েছে। ভাষ্কর্যের ১৬ ফুট উচ্চতায় ৯টি হাত আমাদের দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধ এবং ১৬ ফুট উচ্চতা দ্বারা আমাদের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে নির্দেশ করে।

ভাষ্কর্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় আমাদের মুক্তির বার্তা দেওয়া হয়েছে। একজন পুরুষ এবং একজন নারীর দুহাত চারটি কবুতরকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এতে দুটি বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রথমত, কবুতর মুক্তি আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভকে বুঝানো। দ্বিতীয়ত, চার কবুতর দিয়ে আমাদের মহান সংবিধানের রাষ্ট্রীয় ৪ মূল নীতির প্রতীককে বুঝানো হয়েছে।

মূল ভাষ্কর্যের পেছনে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালে স্থাপিত হয়েছে ম্যুরাল। যেখানে আবহমান বাংলা, আমাদের ১৯৫২-র মহান ভাষা-আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান, জাতির পিতার ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ২৫ মাচের নির্মম হত্যাযজ্ঞ, মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকারের সদস্যদের শপথ গ্রহণ, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ এবং সবশেষে আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জন।

স্বাধীনতা চত্বরের সৌন্দর্য ও বিশেষত্ব উপভোগ করতে শিক্ষার্থী ছাড়াও দর্শনার্থী পদচারণা ঘটে পাবিপ্রবির ক্যাম্পাসে। প্রতিনিয়ত মানুষের আগমন ঘটে এই চত্বরটি দেখার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক পেরিয়ে কেন্দ্রীয় মাঠ পার হয়ে এলেই নজর কাড়ে এই নান্দনিক স্থাপত্য কর্মটির।

শিক্ষার্থীদের বিনোদন এবং আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু এই স্বাধীনতা চত্বর। সকাল থেকে রাতে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখোর থাকে এই চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম আবির বলেন,ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। এই ভাষ্কর্যটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, ছয়দফা দাবি, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ভাষ্কর্যটি দেখে আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই।

পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা নাসরিন সজনী বলেন, আমাদের স্বাধীনতাকে আমরা বুকে ধারণ করি। কিন্তু এই স্বাধীনতা একদিনেই অর্জন হয়নি। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। এই ভাষ্কর্য আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনের দীর্ঘ সংগ্রামকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

ঢাকা, ২৫ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ