ইবি লাইভ: জাহিদ হোসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তৃতীয় শ্রেণিতে বাবা হারান। এরপর তার ভরনপোষণের দায়ভার পড়ে মায়ের উপর। ছোট বেলা থেকে অনেক সংগ্রাম করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পড়াশোনার যাত্রায় সহায়তা করেছেন স্কুলের শিক্ষকরা ও এলাবাসীও। কলেজের পড়াশোনা চালিয়েছেন স্কলারশিপের টাকায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বিপাকে পড়েন খরচ নিয়ে। খন্ডকালীন একটি চাকরি ও মায়ের পাঠানো সামান্য টাকায় চলতো বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ। তবে বর্তমানে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এর বৃত্তিপ্রাপ্তির পর ভালোভাবেই তার খরচ চলছে। তেমনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ১৩০ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীর খরচ চলে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এর বৃত্তির টাকায়।
শনিবার বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগন হরকরা গ্যালারিতে সিজেডএম জিনিয়াস স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আয়োজিত সক্ষমতা তৈরি বিষয়ক সভা ও বই বিতরণ কর্মসূচিতে অনুভূতি প্রকাশকালে এসব কথা জানান জাহিদ।
জাহিদ বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবা হারানোর পর থেকে অনেক স্ট্রাগল করেছি। স্কুলের শিক্ষক ও এলাকাবাসীর সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় খরচ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলাম। মা বলেছিল ভিক্ষা করে হলেও আমাকে পড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘পার্টটাইম জবে ও মায়ের দেওয়া সামান্য টাকায় খরচ চলতো। তারপর সিজেটএম বৃত্তির ব্যাপারে জানতে পারি। স্কলারশিপটি আমার বাবার মত পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের আড়াই বছরের বৃত্তি দেওয়া হয়। এতে করে অর্ধেক পড়াশোনা আবার কষ্ট করেই চলতে হয়। অনার্সের পুরো চার বছরই বৃত্তি দেওয়ার অনুরোধ রইলো সিজেডএম এর প্রতি।’
অনুষ্ঠানে সিজেডএম এর জেনারেল ম্যানেজার রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মু. আতাউর রহমান। এসময় জিনিয়াস স্কলারশিপ প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন ইলিয়াসের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন আযহারী।
এছাড়াও জিনিয়াস স্কলারশিপ প্রোগ্রামের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. রাকিবুল ইসলাম, ইইই বিভাগের প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান, আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাজ্জাদুর রহমান টিটু, গণিত বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. আনিসুর রহামন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বৃত্তিপ্রাপ্ত ১৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ট্রেজারার বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৮০ ডলার। বর্তমানে তা আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেলেও দারিদ্রতা কাটেনি। অনেকেই এখনো তিন বেলা খেতে পাচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীও নিরবে নিভৃত্বে খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করছে। এই দারিদ্রতাই মানবসম্পদ উন্নয়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এর কার্যক্রম সমাজের জন্য অনেক উপকারী। এতে করে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা আরো পড়াশোনায় আগ্রহী হবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা তাদের অর্থের সঠিক ব্যবহার করলে ও মেধাবীরা সঠিক যায়গায় পৌঁছালে দেশ ও জাতি আরো এগিয়ে যাবে। এছাড়া এসব সুযোগ যেন সংকটাপন্ন মেধাবী শিক্ষার্থীরাই পায় এটাই প্রত্যাশা।’
ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: