আজাহার ইসলাম, ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের হল, পরিবহন ও সকল আনুষঙ্গিক ফি মওকুফের দাবি দীর্ঘদিনের। গেল প্রায় আট মাসে বিভিন্ন সময় তারা ফি মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ দিকে অনলাইনে অনার্স-মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের চূড়ান্ত নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের সকল ফি সম্পূর্ণ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, এবছর ৯ জানুয়ারি সকল ফি মওকুফসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্র সমাবেশ ও ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছিল ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। পরে ১৩ জানুয়ারি একই দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাচঁ শতাধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন। এ সময় ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে নিয়েছিলেন এবং আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশ্বস্ত করলে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
এরপর ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রী সকল ফি মওকুফের দাবিতে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। ভিসির অনুপস্থিতিতে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। সে সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামর্থ্য অনুযায়ী সকল ফি কমানো হবে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ফি মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছেন।
এ দিকে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় অনলাইনে অনার্স-মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের চূড়ান্ত নীতিমালা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার ফি সম্পূর্ণ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরে বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) অনলাইনে পরীক্ষা শুরুর আগেই অনতিবিলম্বে হল, পরিবহন ও সকল প্রকার বিভাগীয় ফি মওকুফের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রী। সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক আশিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইবি ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, করোনায় শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষত-বিক্ষত। দেড় বছর হল ও পরিবহন ব্যবহার না করার পরেও ফি আদায় করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অনতিবলম্বে সকল ফি মওকুফ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বলে আমরা আশা করি। এ সময় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার দরুন শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে হল, পরিবহন ও একাডেমিক নানা সুবিধা থেকে। এদিকে একের পর এক লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধের জন্য অধিকাংশ মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনেকাংশ হৃাস পেয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়েছে এবং বেছে নিয়েছে জীবিকা নির্বাহের পথ। তাই আর্থিক ও মানবিক বিবেচনায় ফি মওকুফ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক জি কে সাদিক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘দেড় বছর ধরে শিক্ষার্থীদের পিছনে কোনো ব্যয় করতে হয়নি। ব্যয় না করে ফি নেওয়া অযৌক্তিক। আমরা গত জানুয়ারিতে সকল ফি মওকুফের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ ও গণসাক্ষর কর্মসূচি করে প্রশাসনকে দিয়েছি। ভিসি স্যার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও কোনো উদ্যোগ নেননি। সামনের নতুন বাজেটে যদি এসব ফি মওকুফ করা না হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের হিসাব বুঝে নিবে। ছাত্র ইউনিয়ন সেই হিসাব বুঝে নিতেই আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভিসি স্যার জরুরি কাজে ক্যাম্পাসের বাইরে আছেন। স্যারের সাথে এ বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। ক্যম্পাসে ফিরলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকা, ১৯ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: