আজাহার ইসলাম, ইবি: রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। মহামারিকালীন বিগত তিন ঈদে ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সুযোগ না থাকলেও এবার সে সুযোগ থাকছে। ঈদ বরাবরই খুশির ও আনন্দের। তবে করোনা বিষাদময় করে তুলেছে ঈদকে। বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি, নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়াও দুরূহ। প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজ চালাচালি আর ভিডিও কলের মাধ্যমে সকলের মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে হবে ঈদ আনন্দকে। হর্ষ-বিষাদময় এই ঈদকে নিয়ে কী ভাবছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?
‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ পালনের বিকল্প নেই’
ছোট বেলায় ঈদ অনেক মজার কাটতো। বড় হওয়ার পর অনেকটা পানসে হয়ে গেছে। তবে ইদুল আজহার দিনটি ব্যাস্ততায়ই কাটে। মহামারিকালীন এই সময়ে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। একসঙ্গে অনেকে জমায়েত, কোলাকুলির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। মৃত্যুহারও ভয়ানকরূপ নিতে পারে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করা উচিত এবং কোলাকুলি না করাই উত্তম। পাশাপাশি পশু কুরবানীও একইস্থানে না করা উত্তম। এতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উৎসব পালনের কোনো বিকল্প নেই।
হুমায়রা আন্জুম অন্তু
ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
‘ঈদে অসহায়দের পাশে দাঁড়ান’
এক ঈদে নতুন জামা না কিনলে ঈদ আনন্দের খুব একটা কমতি হবে না। কিন্তু প্রতিবেশী অসহায়দের সেই সামান্য অর্থ দিয়ে সহায়তা করলে, তাদের হাঁড়িতেও আগুন জ্বলবে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ৮ দিনের ছুটি ও যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এতে কর্মক্ষম মানুষগুলো হয়তো অল্প কিছুদিন বাইরে কাজের একটা সুযোগ পাবে। তবে হয়তো ঈদ পরবর্তী কঠোর লকডাউনে পরিবার নিয়ে দুমুঠো খাওয়ার মত সক্ষমতা তৈরি হবে না। আসুন আমরা সকলেই প্রতিবেশীদের প্রতি যত্নবান হই, সকলে মিলে ঈদ আনন্দে মেতে উঠি।
আবু তালহা আকাশ
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
‘ঈদ উদযাপন হোক স্বাস্থবিধি মেনে’
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুুল আজহা। গত বছরের চেয়ে এবার করোনার প্রকোপ ভয়াবহ। স্বল্প পরিসরে পশুহাট লাগলেও স্বাস্থ্যবিধি মানেনি কেউ। সেখানেও হয়তো অনেকেই সংক্রমিত হয়েছে। ঈদের নামাজ শেষে আবেগাপ্লুত হয়ে আমরা সবাই ভাতৃত্ববোধ থেকে কোলাকুলি করি। এতে একজনের শরীরে সংক্রমণ ঘটলে কোলাকুলি বা হাত মিলানোর ফলে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারে। তাই ইদগাহ হোক বা মসজিদ শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করা জরুরি।
শ্যামলী তানজিন অনু
বাংলা বিভাগ
‘বাড়িতে বসেই আত্মার সাথে সম্পর্কিতদের খোঁজ নেব’
করোনা পরিস্থিতিতে ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সুযোগ পেলেও পুলকিত হৃদয়ে কারোর সাথে কোলাকুলি করা বিপদের বিষয়। ঈদের আবেশে উদ্যমী হয়ে ঘোরাঘুরি করাও মঙ্গলজনক নয়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখের ও কষ্টের। যেহেতু এটা কুরবানীর ঈদ তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কুরবানির মাংস আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পরিকল্পনা করেছি সকল ব্যস্ততা শেষে ছোটো ভাই, মা-বাবার সাথে মিষ্টি মধুর গল্প করে সময় কাটাবো। বাড়িতে বসেই আত্মার সাথে সম্পর্ক যাদের তাদের ফোন কল দিয়ে খোঁজ নেব।
আবু সোহান
ব্যবস্থাপনা বিভাগ
‘ঈদে পথ শিশুদের প্রতিও দৃষ্টি পড়ুক’
কভিডের নিত্য নতুন রেকর্ড মৃত্যুর হাতছানির মধ্যে আবার এসেছে ঈদ। দুঃসহ সময়ে আনন্দ ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের শ্রেষ্ঠ সময় এটি। একই সাথে ঈমানী পরীক্ষার বড় সময়ও বটে। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বাণীতে ঈদকে করতে হবে অর্থবহ। কুরবানীর মাধ্যমে মনের সকল কালিমা দূর হোক। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক জীবন। মহামারির দিনগুলোতে অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব মোটামুটি সবার উপরে। তবুও যারা সামর্থ্যবান তাদের উচিত, ঈদ আনন্দ গরীব অসহায়দের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। শোনার চেষ্টা করতে হবে মধ্যবিত্তের নিরব হাহাকারও। বিশেষ দৃষ্টি পড়ুক পথ শিশুদের প্রতি। মানবিকতার ছোঁয়ায় ঈদ হোক বর্ণিল। আনন্দ ভাগাভাগির সাথে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সচেতন হতে হবে কুরবানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও।
অনিল মো. মোমিন
অর্থনীতি বিভাগ
‘ঈদ আনন্দ যেন ক্ষতির কারণ না হয়’
করোনা মহামারির প্রভাবে চারদিকে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে হু হু করে। একইসাথে আমাদের বন্দীদশাও দীর্ঘ হচ্ছে। এরই মধ্যে ঈদের আনন্দ এ যেন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের এক টুকরো আলোকরশ্মির মতো। যা প্রতিটি প্রাণে জাগায় নতুন করে বাঁচার সঞ্জীবনী শক্তি। আমরা পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটিয়ে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কিংবা অসহায় ও পথশিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পারি। মহামারিকালীন এই সময়ে ঈদ আনন্দ আবার আমাদের ক্ষতির কারণ যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কিছু সীমাবদ্ধতার মাঝেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দমুখর হয়ে উঠুক সংকটকালীন এই ঈদ।
রিম্পা খাতুন
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
ঢাকা, ২০ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: