আজাহার ইসলাম, ইবি: ঈদ উপলক্ষে সবসময়ই বাড়ি যেতে উৎসুক থাকে যে কেউ। পরিবারের সাথে কাটাতে না পারলে ঈদটাই যেন বৃথা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উৎসুক থাকে বাড়ি ফিরতে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে প্রায় দেড় বছর যাবৎ ক্যাম্পাস কোলাহলমুক্ত। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হবে শুনে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আশেপাশে ও পার্শ্ববর্তী জেলা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে মেস ও বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে অবস্থান শুরু করেন।
পরে ঈদ-উল-আযহার পর পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আসলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে হঠাৎ কঠোর লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় আটকে পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সাড়ে ৭ শত শিক্ষার্থী। বাড়ি ফেরা নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এদিকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় করোনা ও মৃত্যুহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে পার করছিল দিন। বাড়ি ফিরবে কীভাবে?
পরে ৭ জুলাই আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনে বিভাগীয় শহরে পৌঁছানোর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে স্মারকলিপি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রী। শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবির সাথে একমত পোষণ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ঝড় তোলেন। সকলের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ইতিবাচক ও আন্তরিকভাবে নেন বিষয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেনকে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে বলেন।
শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরিতে সহায়তা করে বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেল। গুগল ফর্মের মাধ্যমে করা এ তালিকায় ছিলেন মোট ৭৪৪ জন শিক্ষার্থী। তালিকার ভিত্তিতে গত ১৪ জুলাই শিক্ষার্থীদের নিকটবর্তী বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে নিকটবর্তী জেলার ৮০ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মোট ৬৬৪ জন শিক্ষার্থী পরিবহন সেবা পেয়েছে।
খুলনা, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে দুইদিনে মোট ১১টি করে বাস পরিচালনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনে বাড়ি ফেরার সু্যোগ পেয়ে আনন্দিত ও উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
আজ রবিবার (১৮ জুন) ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাড়ি রংপুরে ফিরছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রিয়াদুস সালেহীন। তিনি বলেন, ‘ঈদ যাত্রায় নিজ ক্যাম্পাসের বাসে বাড়ি ফিরছি ভেবে খুবই ভালো লাগছে। ঈদের আগেই আরেক ঈদ আনন্দ। বাসের সবাই অনেক খুশি, মজা করছে। আশা করি ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’
গত শুক্রবার (১৬ জুলাই) ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাড়ি বরিশালে ফিরেছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল মুরাদ। অনুভুতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাসে বাড়ি ফিরতে পেরে আমি উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্র মৈত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত উচ্ছ্বাস নিয়ে নিজ বাড়ি ফিরতে পেরেছে এজন্য আমি আনন্দিত। ওদের ফিলিংসটা আমাকে খুব স্পর্শ করেছে। প্রথমদিন ৬টি ও আজ (দ্বিতীয়দিন) ৫টি গাড়ি পরিচালনা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রা পথে গাড়ি চালকরাও অনেক কষ্ট করেছে। বিশেষ করে ফেরার পথে ৭ থেকে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত অনেক গাড়ি জ্যামে আটকা ছিল। যারা (চালক) গাড়ির ভিতরে থাকা তারা এর কষ্টটা বোঝে। তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে, পরিবহন প্রশাসক হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে পেরেছি। এর পিছনে যারা সহযোগিতা করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
ঢাকা, ১৮ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: