ইবি লাইভ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষক নিয়োগের আবারো বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ২০ লাখ টাকায় চাকরি দেয়ার কথা থকলেও অবশেষে চাকরি দিতে পারেনি জালিয়াত চক্র। চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
শিক্ষক ও প্রার্থীর কথোপকথনের ফাঁস হওয়া এক অডিওতে এরসঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী ৩ শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। ফাঁস হওয়া অডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক প্রার্থীর সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে।
ওই নিয়োগ বাণিজ্যে সহযোগী হিসেবে টাকা লেনদেনের চুক্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক বাংলা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল এবং ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। প্রার্থী ফারজানা ও তার স্বামী মামুনের সঙ্গে টাকা লেনদেনের ৩টি রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
অডিও থেকে জানা গেছে, নগদ ১০ লাখ টাকা প্রদান এবং বাকি ১০ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। তবে ওই প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত না করতে পারায় টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই রাতে ওই প্রার্থীর স্বামীকে ফোনে ডেকে নিয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে অডিওতে বলা হয়।
চাকরি প্রার্থীর স্বামী শাহরিয়ার রাজ মামুন জানান, ‘চাকরির আশ্বাস পেয়েই আমরা টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তারা এমন করলো। আমার স্ত্রীর আর চাকরির বয়স নেই। আমি তাদের বিচার চাই।’
চাকরি প্রত্যাশি ও জালিয়াত চক্রের কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো,
ড. বাকী: এই মামুন ভাই আপনি আসতিছেন?
ফারজানা : আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ড. বাকী: হ্যাঁ, দেখ বাবু আমি...
ফারজানা : স্যার আমি তো আপনাদের কথা শুনে অনেকখানি একদম ডিপেন্ডেবল। যে কালকে আপনারা আমাকে এত করে বললেন, জাহাঙ্গীর স্যার যখন বলল, আপনাকে, আপনার মাধ্যমে টাকাটাও ডিল-ট্রিল করবে। আপনার কথা শুনে আমি একদম ২০ লাখ টাকাও হাতে ধরায় দিলাম। তুলে দিলাম। আশা করলাম। স্যার কেন এমনটা করল? জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার।
ড. বাকী: এখন আমি তোমার স্যারের সাথে এতক্ষণ বসে থেকে কথা বললাম
ফারজানা : স্যার তো সিগনেচার না করলে নিয়োগ হতো না। স্যার তো আমাকে বলতে পারত। আমাকে আরও অ্যামাউন্ট দেয়া লাগত, আমি তাতেও রাজি ছিলাম।
ড. বাকী: না না, ওসব না, ওসব না। মনি, ওসব কোনো কিছুই না।
ফারজানা : তাহলে কেন আপনারা আমাকে কনফার্ম দিলেন? আমি রিটেনে ভালো করলাম। ভাইভাতেও ভালো করলাম। আমাকে সব আশ্বস্ত করে দিলেন। আর এখন শেষ মুহূর্তে এসে এমন করলেন আপনারা আমার সাথে?
ড. বাকী : এখন কুষ্টিয়া থেকে তোমাকে বলি, হয়ত অন্য কারও হয়েছে বা, যাহোক আমি তো বলতে পারব না।
ফারজানা : কুষ্টিয়ার ক্যান্ডিডেট তো আমিই ছিলাম স্যার।
ড. বাকী : হুমমম, আরে বাবা আরও ক্যান্ডিডেট আছে।
ফারজানা : নুসরাত ছিল। নুসরাতের কী হইছে?
ড. বাকী: সেটা বলতে পারছি না।
ফারজানা : স্যার কাইন্ডলি, আপনারা যদি একটু দেখতেন...
ড. বাকী: আরে বাবু
ড. বাকী: না না, আমি তো জাহাঙ্গীর স্যারের সাথে এখনই উঠে এলাম। এই জিনিসটা এখনই আবার। মামুন ভাই জিনিসটা বারবারই জানতে চাচ্ছে। আমি কিন্তু তাকে জানাচ্ছিলাম না। আমি তাকে পরে জানাব। কালকে সিন্ডিকেট হবে। সিন্ডিকেটের পরে জানাব। কিন্তু আগে জানিয়েই আমি আরও বিব্রত হলাম দেখছি।
ফারজানা : জ্বি স্যার, আপনি আমাকে কনফার্ম করলেন। তোমার এইটটি (৮০) পার্সেন্ট হয়ে গেছে। তোমার কোনো অসুবিধা নেই। এর জন্য আপনি যখন যে শর্ত দিয়েছেন, টাকা দেয়া বলেন, জাহাঙ্গীর স্যারের... কোনো সত্যতা যাচাই ও করতে যায়নি। আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা পে করে দিয়েছি। সব করে দিয়েছি স্যার।
ড. বাকী: সেটা নিয়ে তো আর সমস্যা নাই। আমরা তো কোনো মিস ইউস করিনি। জাহাঙ্গীর স্যার তো এটা মিস ইউস করেননি। তাই না? এখন সে না পারলে, আমি তো মাঝখানে থেকে মানুষের উপকার করে, এখানে তো আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
ফারজানা : জাহাঙ্গীর স্যার এটা করত না?
ড. বাকী : পারত কিনা সেটা আমার জানা নেই। রাতে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। সরি বলেছেন উনি। এখন কী করব বল? কিছু করার নেই বাবু। মামুন ভাইকে বল, আমি তো বসে আছি। উনি আসলে আমি তো উনাকে পৌঁছে দিয়ে...
ফারজানা : আচ্ছা আপনি উনার (স্বামী) সাথে কথা বলেন।
এবার তার স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য ফোন এগিয়ে দেন তার স্ত্রী ফারজানা
ড. বাকী: হ্যাঁ।
ফারজানার স্বামী : হ্যালো...
ড. বাকী: হ্যাঁ, মামুন ভাই ভয় পাচ্ছেন কেন? কুষ্টিয়ার ছেলে। আপনি আসেন। আমি তো আপনাকে নিজে পৌঁছে দেব। কি মুশকিল রে ভাই...মানুষের উপকার করতে গিয়ে আমি নিজেই তো একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছি।
বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল জানান, ‘এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার। আমি একজনের উপকার করতে চেয়েছি। সে বিষয়টি রেকর্ড করে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। অডিও ক্লিপটি এডিট করা হয়েছে।’
তবে ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, আমি দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। যদি এ ধরনের কোনো চুক্তি তারা করে থাকে, সেটি কার্যকর হোক বা না হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন অসৎ এবং অশুভ চুক্তি করার ব্যাপারটি অভিযোগ আকারে এলে আমরা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনব।
ঢাকা, ১৫ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: