Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ইবি ভিসি ‍‌‌‌''আল্লাহর নাম নিলাম আজকে এখানেই ইতি''

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০১৮, ০৩:৩৫

অজানা আতঙ্কে ভুগছি। আমি এখনও আঁতকে উঠি। আমার কেন জানি ভয় লাগে। সেই রাতের দৃশ্য কেবলই মনে পড়ে। মনে হলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। সেই রাতের ভয়াবহতা আমাকে দুর্বল করে ফেলে। আমি যেন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এভাবেই কথা বলছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী।

সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বার বার কেবল ভয় আতঙ্ক কথাটি বেশী বেশী স্বরণ করেছেন। বলেছেন, রাতটি ( বৃহস্পতিবার মধ্যরাত) ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে একটি বিভীষিকাময় রাত। তিনি গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘটে যাওয়া কথিত সন্ত্রাসীদের হাতে মর্মান্তিক, বিভীষিকাময় ও বেদনাদায়ক দূর্ঘটনার কথা ক্যাম্পাস লাইভের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবেই তুলে ধরেন। একান্ত আলাপচারিতার বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের প্রতিনিধি রায়হান মাহবুব

ক্যাম্পাসলাইভ: স্যার এখন কেমন আছেন?
ভিসি : হ্যাঁ স্রষ্টার অশেষ কৃপায় ভাল আছি। তবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ক্যাম্পাসলাইভ: স্যার কী ঘটেছিল সেই রাতে ?
ভিসি: ‘ঢাকা থেকে রাত দশটায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ফেরিতে সমস্যা ছিল না । ফেরি পার হয়ে দুটো কারণে আমি বললাম যে তুমি ( গাড়ির ড্রাইভার ফরহাদ) আজকে ঝিনাইদাহ দিয়ে যাও। একটি কারণ ছিল আমার পি এস. রেজাউল করিম রেজাকে তার ঝিনাইদাহের বাসার সামনে তাকে ড্রপ করে আমরা চলে আসি।

আমি রাস্তায় ক্লান্ত থাকি এবং অধিকাংশ সময় ঘুমাই। ঝিনাইদাহ পার হওয়ার পরে ঘুমের রেশটা কেটে যায়। গাড়াগঞ্জ পার হওয়ার পরে ঘুমের রেশটা আরো কেটে যায়। জুতাটা পরে নিয়ে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। তখন আমি আধো ঘুম আধো জাগরন। তখন আমি দেখলাম যে দুটা ট্রাক একদম থামা। দুটা গাছ আড়াআড়ি। তখন আমি জেগে যাই। গাছ পড়ে গেছে অথচ ঝড়-বৃষ্টি নাই।

অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছি আমি। তখন ফরহাদ বলল স্যার এতো ভাল মনে হচ্ছে না। তখন সে অ্যাম্বুলেন্সের মতো যে হর্ণ, সেটা বাজিয়ে গাড়ি ব্যাকে ফেরানোর চেষ্টা করলো। তখনো আমি অতোটা সিরিয়াস মনে করেনি। তখন ওনাকি দেখেছে, ৩ জন মানুষ মাফলার বাধা এবং বড় রামদা জাতীয় কি জিনিস।

তখন ওপেছনে যেয়ে থেমে গেল। বাঁ সাইটে প্রথমে বোধ হয় আমার সামনে যেখাসে পি.এস. বসে সেখানে উপর্যুপরি একটা বা দু’টা, তার পর তার ভাবি যেখানে বসে সেখানেও উপর্যুপরি ২-৪ কোপ দিলো।

তখন ফরহাদ বলল, এটা করেনকি, করেনকি এটা বলে দ্রুত আবার সামনের দিকে টানলো। তখন প্রায় ৫০০ গজ দূরে হবে গাছের গুড়ির আগার দিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু কোন ভাবেই সেটা সম্ভব হলো না । তখন সে বলল নেমে পড়েন স্যার পালান পালান।

ওরা তখন ধাওয়া করলো। আমি নেমে সঙ্গত কারণ বাঁ দিকে। ওযে কোথায় গেল অতোখানি আমি দেখতে গেলাম না বোধ হয় ডান দিকে গেল। বাঁ দিকে দেখি যে শুধু আমাদের লাইটাই জ্বলছে, লুকানো যাচ্ছে না। রাস্তার সামনে গাছটা আর বেশ কিছু দূরে একটা ট্রাক দেখা যাচ্ছে।

তখন সঙ্গত কারণে মনে হলো যে ওরা ওদিকেও আছে । সোজা আর গেলাম না । তখন রাস্তার বাঁ সাইটের যে ব্রিজটা তার মধ্যে লুকানোর চেষ্টা করলাম। হামাগুড়ি দিয়ে আমি জঙ্গলের মধ্যে ক্র করে করে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলাম। তখন আমি ১০-১৫ গজ ভিতরে ঢুকে চুপ করে রইলাম। ততক্ষণাৎ দেখি ওরা আসছে। তখন ও বলতে লাগলো কোন দিকে নামলো , কোন দিকে নামলো? এখানেই নেমেছে। আমার দিকে খুব শক্ত একটা টর্চ লাইট মেরে বলল এই যে পেয়েছি।

ক্যাম্পাসলাইভ: তখন কেমন অনুভূতি ছিলো আপনার?
ভিসি: এখানে আমার জীবনে সবথেকে বিভীষিকাময় সময় ছিলো। আমি কখনোই এমন অবস্থার মুখোমুখি হয়নি। আমি ভয়ে তাদের সাথে কথাই বলিনি। তারা নেমে আসছে এবং তাদের হাতে রামদা ও অস্ত্র। তখন আমি আল্লাহর নাম নিলাম এবং আজকে এখানেই আমার ইতি। কি করার আছে?

ক্যাম্পাসলাইভ: সন্ত্রাসীরা কি কি নিয়েছে আপনার কাছ থেকে?
ভিসি : তারা খারাপ গালিগালাজ করতে করতে আমার কাছে আসে। বলে টাকা কোথায় আছে? আমি দেখলাম যে টাকার কথা বলে আবার গাড়ির দিকে যায় কিনা। তখন দেখি যে গাড়ির প্যাঁ পোঁ শব্দ।

আমাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা আছে বলে গাড়ির ওখানে নিয়ে গেল। কিন্তু আমার মানি ব্যাগটা ওখানে নাই। আমার ধারনা মানি ব্যাগটা আগেই তারা চার্জ করেছে। ততক্ষনাৎ দেখলাম যে তাদের মধ্যে একটা চঞ্চলতা। আমি বললাম যে এই ল্যাপটপটা নিয়ে যান। খুবই দামি ল্যাপটপ এটা। তারা বলল ল্যাপটপ না টাকা লাগবে।

এছাড়া আমার গাড়ি থেকে জঙ্গলে দৌড়ানোর সময় মনে হয় আমার ফোনটা পড়ে গিয়েছিলো, হয়তোবা সন্ত্রাসীরা ফোন সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে বন্ধ করে রাখছে।

ক্যাম্পাসলাইভ: অতপর কিভাবে প্রাণে বেঁচে আসলেন ক্যাম্পাসে?
ভিসি : তারা গাড়ির পেছনে গেলে আমি গাড়ির মধ্যে ঢুকে বসলাম। আবার ১ মিনিট পর তখন আমার মনে হলো আবার কোন নতুন দল সাঁজিয়ে বেশি লোক আসছে কিনা এবং আরেকটা সুজোগ নেওয়া যায় কিনা।

আবার মনে হলো এখন যদি আমি আবার অবাধ্য হই তখন তাদের আর্মস আছে গুলি আছে কোথায় থেকে কি করবে বুঝতে পারছি না। তারপরেও আমি ঝুকি নিলাম। এবার আমি ভাবলাম যে আর ডানে বাঁমে নামবো না , সোজা যাবো।

তখন আমি জাম্প করে নেমে রাস্তা ক্রস করে সোজা দৌড়াচ্ছি। বোধ হয় মিনিট খানি দৌড়ালাম। তখন হাতের বাঁম পাশে দেখলাম ঝাঁপসা অন্ধকার বাড়ি দেখা যাচ্ছে। সেই বাড়িতে আমি ঢুকলাম। তখন আমি বললাম ভাই কেউ আছেন নাকি? বুড়া মানুষ দেখলাম সে বলল বাবা কি অবস্থা? তখন আমি বললাম ডাকাত আমাকে ধরেছে এবং মারার জন্য আসছে আপনি দয়া করে ঘরের দরজা খোলেন।

তখন আমি বললাম যে কোন জোয়ান লোক আছে কিনা? তখন পাশের বাড়িতে গেলাম তখন পৌনে চারটা বেজে গেছে। তখন আরেক বাড়িতে গিয়ে উনি নক করার পর এক লোক বের হলো। আমি ঘটনাটি খুলে বললাম এবং বললাম আমাকে বাঁচান না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

আামকেত দূরে কোথাও নিয়ে যান এখান থেকে। তখন তিনি বললেন যে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসছে। তখন বাচ্চু নামের ঔ কর্মকর্তার বাসায় গেলে তখন সে গ্রিল লক করে দেয়। তারপর ওনাকে বললাম প্রক্টরের নম্বর থাকলে তার কাছে ফোন দাও। তারপর ইবি থানার গাড়ি যেয়ে আমাকে এনেছে।

ক্যাম্পাসলাইভ: এ ঘটনায় মামলা বা জিডি করা হয়েছে কিনা?
ভিসি : হ্যাঁ মামলা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আব্দুল লতিফ। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় অজ্ঞাতনামা মোট ১০-১২ জনকে আসামি করে দন্ডবিধির ৩৯৫ এবং ৩৯৭ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে বলে রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন। শৈলকূপায় থানায় মামলা নং ১৯/২৬-১-১৮।

ক্যাম্পাসলাইভ: সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কি অবহিত করা হয়েছে?
ভিসি : হ্যাঁ জানানো হয়েছে।

ক্যাম্পাসলাইভ: আপনি কি মনে করেন আপনার জন্য নিরাপত্তা আরো জোরদার করা দরকার? এবং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি এখন কি চান?

ভিসি : আমি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েও রাস্তায় যদি এমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগী, তবে এদেশের সাধারণ মানুষের জান-মালের রক্ষা কেমন করে হবে?

আমি সরকারের উচ্চ মহল বরাবর জানাতে চাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কোন মানুষের জীবনে না ঘটে। এমনই প্রত্যাশা করলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী।

 

ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ