Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিসিএস ক্যারিয়ারে দীর্ঘ পথ, প্রিপারেশনের সময়টা উপভোগ করুন

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বার ২০১৭, ১৮:২৮

সুজন দেবনাথ : ‘দাদা, আমার কোন খারাপ ছবি কারো কাছে থাকলে, সে কি আমার কোন ক্ষতি করতে পারে?’ প্রশ্নটি কোন মেয়ের নয়। ২৭ বছরের এক ছেলের। ছেলেটা আমার মতই মাঝারি মেধার। একটু সহজ সরল। বুদ্ধি কিছু আছে, কিন্তু চালাক নয়। চাকরির পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন। কিন্তু আশার চাকরিটা পাচ্ছে না। দুই কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেছিল। সেই চাকরি টিকেনি। এরপর আবার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভাইভার পরে আর খবর নেই। একই চক্র।
এই অবস্থায় একদিন ছেলেটা কারণ খুঁজতে শুরু করলো - কেন চাকরি পায় না? কি রহস্য? পেলেও কেন চলে যায়? কোন অন্য ঝামেলা নেই তো?

অনেক ভাবনা। হঠাৎ মনে পড়লো – কিশোর বয়সে একদিন তাকে একটু আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেছিলো পাশের বাড়ির আন্টি। আন্টি ভয় দেখিয়েছিল – ‘কি করছিলে সেদিন! আমি কিন্তু ছবি তুলে রেখেছি। খুব খারাপ ছবি। ভালো হয়ে যাও। না হলে – এই ছবি পাঠিয়ে দেব। তোমার ভবিষ্যৎ শেষ করে দিব।’

তাহলে কি আন্টি সেই ছবিটা কোম্পানিগুলোয় পাঠিয়ে দিচ্ছে? সত্যিই তার ভবিষ্যৎ শেষ করে দিচ্ছে? দু'জন বন্ধুর কাছে কথাটা বললো। ওই বন্ধুরাও বেকার। তাদেরও সময় ফুরায় না। তারা দেখল, পাইছি মদন। একটু নাচাই। একজন বললো, ‘হ, দোস্ত, ঘটনা তাইলে এইডাই। নাইলে তর মতন পোলারে চাকরি দিব না! ওইতো - মোড়ে আন্টিরে দেখলাম। তরে দেখাইয়া ফিস ফিস কইরা কী জানি কইতাছে। হাতে একটা খাম আছিলো। আমারে দেইখ্যা লুকাইয়া ফালাইছে।’

আরেক বন্ধু বলে, ‘এক্কেরে ঠিক। এতোদিন বুঝি নাই। ওই আন্টি খালি চিঠি পাঠায়। মোটা মোটা চিঠি। চিঠির লগে তর সেই ছবি। খেয়াল করলেই দেখবি, তর ইন্টারভিউর পরের দিনই উনি বাইরে বাইর হয়। আর কোম্পানির লোক তর ছবি দেইখ্যা তরে বাতিল কইরা দেয়।’ ছেলেটি বলে, ‘কিন্তু আন্টি কোম্পানির ঠিকানা পাইব কই?’ বন্ধুর উত্তর, ‘কেন? তর ছোট চাচায় খবর দেয়। তর চাচা কেমন মানুষ? জানস না!’

ছেলেটির আর কোন সন্দেহ নেই। ওই ছবির জন্যই তার চাকরি হয় না। ছবিই তার সর্বনাশের কারণ। ছবির কারণেই তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে সারাদিন ওই ছবি নিয়ে চিন্তা শুরু করে। পড়াশোনার সময় নেই। ছবিটা উদ্ধার করতেই হবে। যেভাবে হোক। যা দিয়ে হোক। বন্ধুদের সাথে প্লান করে। স্পাই ঠিক করে। যারে পায়, তার কাছেই জিজ্ঞেস করে, খারাপ ছবি দেখলে কোন কোম্পানি কি তাকে চাকরি দেবে? নাকি পুলিশে দিবে? সে অনলাইন খুঁজে খুঁজে আইন বের করে। ন্যুড ছবি থাকলে কি শাস্তি হতে পারে? সামনে বিসিএস পরীক্ষা। কিন্তু বিসিএস দিয়ে কী হবে? পুলিশ ভেরিফিকেশানে তো ধরা পড়ে যাবে। চাকরিতো হবেই না। উল্টো শাস্তি হবে।

এমন অবস্থায় কদিন আগে আমার সাথে ইনবক্সে দেখা। জানতে চায়, ‘দাদা, আমার কোন খারাপ ছবি কারো কাছে থাকলে, সে কি আমার কোন ক্ষতি করতে পারে?’ প্রশ্নটা মধ্যে চটক আছে। আমি আটকে গেলাম। প্রথমদিন শুনে মনে হল, মহিলাটা কত ভয়ংকর! কী এক তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ছেলেটাকে ভোগাচ্ছে। এরপর টানা কয়েকদিন ছেলেটি আমার কাছে এবিষয়ে নানা তথ্য দিল, আজ নাকি এক বন্ধু বলেছে, কাল ছবি নিয়ে আসবে। ওই বন্ধু বিরাট কাবিল মানুষ। ছবি সে আনবেই। আর এক বন্ধু ন্যুড ছবির বিষয়ের আইনের লিংক তাকে পাঠিয়েছে।
ওই আইন পড়ে সে আরও ভয় পেয়েছে। বিসিএস দিয়ে কী হবে? পুলিশ রিপোর্টেইতো ধরা।

আমি বুঝলাম। ছেলেটি ভীষণ রকম মানসিক সমস্যায় পড়েছে। আসলে ছবি টবি কিচ্ছু নেই। কয়েক বছর আগে এক মহিলা তাকে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছে। হয়তো ভালোর জন্যেই ভয় দেখিয়েছে। কিন্তু তার মনে ভয়টা রয়ে গেছে। এখন সে চাকরি পাচ্ছে না কেন, এর একটা উত্তর দরকার। একটা লজিক দরকার। সেই লজিকের উপর সে আশ্রয় নেবে। সেই লজিক নিয়ে বর্তমানের খারাপ সময়টাকে কোন রকমে এড়িয়ে যাবে। এই সময় তার মনে এসেছে ছবির বিষয়টা। ওই গোপন ভয়টা মনে ছিলই। ভয়ের আগুনে অক্সিজেন দিয়েছে তার প্রাণের দোস্তরা। দোস্তরা তার কানের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছে, ওই ছবিই কারণ। ওটা উদ্ধার কর। না হলে তোর কিচ্ছু হবে না। আর সে ওই ছবির পেছনে ছুটছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ছুটছে। লেখাপড়া জলে দিয়ে এক তার ধ্যান জ্ঞান ওই ছবি উদ্ধার করা।

বিষয়টি বুঝার পর - ছেলেটিকে ওই বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতে, শুধু পরিবারের সাথে সময় কাটাতে বলেছি। কাজ হয়েছে বলে মনে হয়নি। মুখে বলেছে বুঝেছে। কিন্তু কাজে কোন পরিবর্তন হয়নি। ওর থেকে নাম্বার নিয়ে আমি ওর বাবার সাথেও কথা বলেছি। বাবাও বলেছে – ছেলেকে সময় দিবে। জানিনা - ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কিনা - পারলেও কবে পারবে!

মনের ডাক্তাররা হয়তো বলবেন, এটা এক ধরনের সিজোফ্রেনিয়া। হয়তো ছেলেটি মানসিকভাবে একটু বেশি দুর্বল। তাই মনের শক্তি মাঝপথে হারিয়ে গেছে। কিন্তু কিভাবে? কোন প্রক্রিয়ায়? এর উত্তর - দিনের পর দিন চাকরির পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে ওর মনের শক্তি কমে গেছে। প্রতিবার আশাহত হতে হতে এক সময় হতাশ হতে শুরু করেছে। চলমান হতাশা একটু একটু করে নার্ভাস ব্রেকডাউনের শেষ সীমানায় এসে গেছে।

এর জন্য খুব সহজেই আপনি চাকরি প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সময়কে দায়ী করে চুপ থাকতে পারেন। কিন্তু পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ। আর নিয়োগের সিস্টেমতো আপনার হাতে নেই। হুট করে নিয়োগের সময় কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই আপনার নিজেকেই ভাবতে হবে - এই দীর্ঘ সময় কিভাবে শক্তি ধরে রাখা যায়। কিভাবে সহ্য শক্তি বাড়ানো যায়।

জীবনটা আপনার। আপনাকেই রঙ দিতে হবে। আপনাকেই সাজাতে হবে। হাজারটা বিসিএস চাকরির চেয়ে আপনার জীবন মূল্যবান। আগে বাঁচুন। যখনই মনে হবে - আমি অসহায়। বাবা-মায়ের কাছে শেয়ার করুন। বাবা-মা ছোটবেলা থেকে অনেক সহ্য করেছে - আর কিছুদিন সহ্য করতে পারবে। গলির বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন না। ভালো বন্ধুর চেয়ে বড় সম্পদ পৃথিবীতে নেই - এটা সত্য। কিন্তু বন্ধুত্বের একটা সরল সংজ্ঞা হচ্ছে - বন্ধুরা দুর্বলতায় আঘাত করে।

এই আঘাত যারা সইতে পারে - তাদের সমস্যা নেই। কিন্তু যারা সইতে পারে না - তারাই মজার পাত্র হয়। দুর্বলতা নিয়ে নেগেটিভ মজা চলতে থাকলে তা বিপদ আনতে পারে। তাই শক্ত হোন। বিশ্বাস করুন, বাংলাদেশের প্রতিটা তরুণ এই সময়টা পার করে। কেউ একটু কম, কেউ বেশি। এই কষ্টকর সময়টা পার করেই ভীড়ের মানুষ থেকে আলাদা আইডেনটিটি পেতে হবে।

এ সময়ের প্লানিং : এ সময়টার প্লানিংয়ের জন্য আমি ইনভেস্টমেন্ট গুরু ওয়ারেন্ট বাফেটের কথা ধার নেব - Dont put all your eggs in one basket. সব শক্তি এক জায়গায় দিয়ে বসে থাকবেন না - সকল দিকে চোখ রাখুন। কথাটা জীবনের বেশির ভাগ জায়গায় সত্য।

শুধু বিসিএসের জন্য বসে না থেকে সামনে পছন্দের যা আসে, সেগুলোর জন্য চেষ্টা করা ভালো। বিসিএস জেনারেল ক্যাডারে পোস্টইতো কম। বিসিএসই টার্গেট? কিন্তু মোটামুটি পছন্দের চাকরি হয়ে গেলে জয়েন করাটাও মন্দ না। জয়েন করে চেষ্টা করার কথা বলছি। পয়সার ফ্লো ব্যক্তিত্বকে বাড়িয়ে দেয়। পকেটে কিছু টাকা থাকলে অনেক ধরনের দুশ্চিন্তা কমে যাবে। তবে চাকরিটা এমন হতে হবে, যেন বিসিএসের প্রিপারেশনের সময় বের করতে পারেন। আর অবশ্যই পরীক্ষার সময় ছুটি পেতে হবে।

আমি কি করেছিলাম? আমি তখন সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করতাম। জাপানি কোম্পানি। কোম্পানিতে সকালে জাপানি ভাষা শিখতে হয় আর বিকেলে কাজ। মোটেও আমার পছন্দের চাকরি না। কিন্তু করে গেছি। এর মধ্যে ভর্তি হলাম আইবিএর এমবিএতে। সেই ক্লাস সন্ধ্যা বেলা। এর মধ্যেই বিসিএস দিয়েছি। এতে যেটা হয়েছে, পকেটে কিছু পয়সা থাকতো - হতাশা কম লাগতো। আর এতো ব্যস্ত থাকায় পুরো বিসিএস শেষ হতে যে দুই-আড়াই বছর লেগে গেছে - সেটা টের পাইনি।

চাকরি আর এমবিএ দুটোই করে বিসিএস দিয়েছি - কথাটা বলতে এখন মজা লাগছে - কিন্তু কাজটা করতে যে কী করতে হয়েছে - সেটা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। সময় নষ্ট না করে যতটুকু পড়া যায় - তার সবটুকু পড়েছি। রিটেনের জন্য একমাস ছুটি নিয়েছি। অনেক কায়দা আর আগে থেকেই প্লান করে ছুটি ম্যানেজ করেছি। ওই এক মাস একেবারে তালাবন্ধ করে পড়েছি। এই প্লানের জন্য বিসিএসের প্রিপারেশন আমার কাছে বোঝা হয়ে ওঠেনি। তাই আপনি আপনার মত প্লান করুন। You have to play a very long innings. ধৈর্য্য নিয়ে আগাতে হবে। এই লম্বা সময়টা যা করলে শান্ত থাকতে পারেন তাই করুন।

সবার আগে জীবন। জীবনের মত সুন্দর জিনিস আর নেই। জীবনকে উপভোগ করতে চেষ্টা লাগে। হুমায়ুন আহমেদ বলতেন - সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সাধনা দরকার। তাই এই চাকরির প্রিপারেশানের কষ্টকর সময়টাকে সুন্দর করতেও সাধনা দরকার। চেষ্টা দরকার। এই সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একদিন সবকিছু পাবো - এখন দরকার নেই - এই মনোভাব অনেক দিন চললে মানসিক চাপ আসবেই। মনের শক্তিটা ধরে রাখতে হলে - এই সময়টাকে উপভোগ করতেই হবে। তো এই সময়টা উপভোগ করতে আপনি আপনার মত প্লান করুন। প্রিপারেশনও হোক - আনন্দও থাকুন। You must enjoy both - destination and journey.
.
রবি বাবু বলেছিলেন -
'পথের বাঁশি পায়ে পায়ে তারে যে আজ করেছে চঞ্চলা -
আনন্দে তাই এক হল তার পৌঁছনো আর চলা।'
তাই চলুন, প্রিপারেশানের চলাটাকেও উপভোগ করি। এই সময় আপনার পথে অন্য কেউ বাঁশি বাজাবে না। আপনার পথের বাঁশি - আপনাকেই বাজাতে হবে। তো বাঁশি বাজান - আপনার নিজের সুরে।
...
অগ্রজের আগ্রিম শুভকামনা -


লেখক : সুজন দেবনাথ (অব্যয় অনিন্দ্য)
First Secretary, বাংলাদেশ দূতাবাস, এথেন্স


ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ