
গতবছরের ২৯ আগষ্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম ভিসি (ভাইস চ্যান্সেলর) হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাওয়াকে গুরুত্বদিনে তাদের আস্থার প্রতীক ও শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে উঠেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নানা ইস্যু,সমস্যা, সম্ভাবনা ও আগামীর নানাবিধ পরিকল্পনা নিয়ে ক্যাম্পাসলাইভের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪-এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি উমর ফারুক।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শিক্ষার্থীদের মনে একটি ইতিবাচক ভাবনা তৈরি হয়েছে। একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ বিষষটা আপনার কাছে কেমন মনে হয়?
প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার: আমি আসার পর শিক্ষার্থীরা বলছে শিক্ষার্থীবান্ধবসহ অনেক কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু অতটুকু হতে পেরেছি কিনা জানিনা । আমি একজন উপাচার্য হিসেবে শিক্ষক ও ছাত্র ছিলাম। সে বিষয়গুলো অনুভব করে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এটা একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আর্থিক যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ সরকার নিয়ন্ত্রিত। তার মধ্যে থেকেই আমি চেষ্টা করছি আমাদের বিদ্যার্থী/শিক্ষার্থী যারা আছে তাদের পঠন-পাঠনের পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশ ও শারীরিক বিকাশে মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি।
ক্যাম্পাসলাইভ: অল্পকিছুদিন পর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা একটি বিষয় খেয়াল করেছি। রাবিতে এতোদিনেও নির্দিষ্ট ভর্তি পরীক্ষা কাঠামো নেই। এ বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন?
প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার: আসলে এ বিষয়টা আমি লক্ষ্য করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট কাঠামো দিয়ে চলে না। আমার কাছে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁধা যায়না। বিশ্ববিদ্যালয় কোন স্ট্যাটিক না। বিশ্ববিদ্যালয় কোন পুকুর না যেখানে পানি আবদ্ধ থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রবাহমান। সময়ের সাথে সাথে জ্ঞানের যে বির্বতন হবে, পরিবর্তন হবে। সে পরিবর্তনের পাশাপাশি আমরা সমসাময়িক জ্ঞান বা সমসাময়িক ঘটনার সাথে মিল না রাখতে পারি তাহলে কিন্তু হয় না।
'কাঠামো' বলতে মূলত লেখাপড়ার মানোন্নয়নে যেসকল উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেগুলোকে একটা নিয়মতান্ত্রিকের মধ্যে আনা। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো সময়ে সময়ে ক্রমবির্বতন হয় সে পরিবর্তনের সাথেই তাল মিলিয়ে চলাটাই আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
ক্যাম্পাসলাইভ: আগামীতে ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহর পর্যায়ে নেয়ার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?
প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার: আমরা এখন পর্যন্ত এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি,তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। কারণ গোটা পরীক্ষাটা শিক্ষক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই হয়। এ জন্য অন্য পদ্ধতিতে যাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে আছি এবং এ বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে ছাত্রদের এবং তাদের অভিভাবকদের কষ্ট লাগব করা।
আরেকটা বিষয় আপনাদের বলে রাখি, গত দু'বছরে আমরা ভর্তি ফরমের ফি বৃদ্ধি করিনি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা বৃদ্ধি করে নিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আমরা আগামীতে চিন্তা ভাবনা করব এখন যা নিচ্ছি আগামীতে যেন এর থেকে কম নিতে পারি। তবে একটা জিনিস ভর্তি পরীক্ষাটা যত স্বচ্ছ, টেকসই করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করছি। এবং সম্পূর্ণ পরীক্ষাটা যেহেতু শিক্ষকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা বাহিরে গেলে সমস্যা হতে পারে। তবে আগামীতে আস্থার জায়গা পেলে আমরা শহরগুলোতে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা ভাবনা করব।
ক্যাম্পাসলাইভ: শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীদের তুলনায় হলে সিট সংখ্যা অপ্রতুল। অনেক শিক্ষার্থী ফাইনাল ইয়ারে উঠেও আসন পায় না। এ সমস্যা ও সংকট নিরসনে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি না?
প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার: আপনি এ বিষয়টা ঠিকই বলেছেন। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে এভাবে নতুন হল নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে আমাদের ১৭টি আবাসিক হল রয়েছে। যেখানে ধারণ ক্ষমতা ১১ হাজারের মত। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ছে ৩৮ হাজারেরও বেশী শিক্ষার্থী। তাহলে এখানে বুঝা যায় তিন ভাগের মাত্র একভাগের আবাসন নিশ্চিত করতে পেরেছি বাকী দুই ভাগ পারিনি। এটা আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিলো আমরা যখন ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি করলাম, আমরা যখন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট খুললাম। এসব বৃদ্ধি করার আগে ভাবার উচিত ছিলো।
তবে ইতিমধ্যে আপনি জানেন দুইটি হলের কাজ চলছে, আমরা প্রকল্প নিয়েছি আগামীদিনে ছয় থেকে সাতটা হল নির্মানের পরিকল্পনা আছে। আমাদের যে হল রয়েছে তার থেকে দ্বিগুণ হল নির্মাণ করতে হবে। সে পদক্ষেপ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে আবাসনের সমস্যা লাঘব হবে।
ক্যাম্পাসলাইভ: বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি রাকসু নির্বাচন। তারা বেশ কয়েকবার প্রশাসনের সাথে বসেছিলো। সব ছাত্র সংগঠনগুলো একমত রাকসু নিয়ে। রাকসু নির্বাচন নিয়ে আপনার কোন ভাবনা আছে কি না?
প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার: আমি তো সবসময় ওয়েলকাম জানাই। রাকসুটা থাকা ভাল। এটা থাকলে প্রশাসনের জন্য সুবিধা হয়। যখন কোন সমস্যা, সংকট তৈরি হয় তখন আমরা নেতা খুঁজে পাই না। রাকসু নিয়ে আমাদের উদ্যোগ আছে। এক্ষেত্রে ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। বিক্ষিপ্ত ভাবে শুধু রাকসু চাইলেই হবে না।
আসলে রাকসু বলতে কি বুঝি, এটা নিয়ে অনেক ছাত্র সংগঠনগুলো মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। তারা শুধু রাকসু চাই, রাকসু চাই বলে কিন্তু আসলে চাওয়ার মত তাদের সেই প্রস্তুতি আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এটা তো শিক্ষার্থীদের ব্যাপার। আমরা যখন দেখব বিদ্যার্থীদের মধ্যে আকাঙ্খাটা জেগেছে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে, গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাকসুতে আসবে আমরা সবসময় তাদের ওয়েলকাম জানাই। আমরা প্রস্তুত আছি।
ক্যাম্পাসলাইভ: সম্প্রতি মেয়েদের আাবসিক হলে সান্ধ্য আইন নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। মেয়েদের সাড়ে ৮টার মধ্যে হলে প্রবেশের বিষয়টা আপনার নজরে এসেছে কি না। আর বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন?
প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার: আসলে সান্ধ্য আইন নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে যে লেখাগুলো আসছে তা গুজব। আমাদের শিক্ষার্থীদের বলব চিলে কান নিয়ে গেল তা খোঁজার আগে নিজের কানে হাত দেয়া। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
একটা জিনিস মনে রাখবেন প্রশাসনের যে সিদ্ধান্তটা হবে সেটা আমরা নিব। সে চিঠি ইস্যু করবে রেজিস্ট্রার। তবেই সেটাকে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বলা যায়। আমি জানিনা, এটা কি হয়েছে। ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা যেটা বলেছে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে হ্যাঁ একসময় একটা বিধিনিষেধ ছিলো এখনো আছে, তবে সেটা যতটুকু শিথিল করা যায় আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিব।
ঢাকা, ২০ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: