মৃদুল ব্যানার্জি : নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি উচ্চশিক্ষায় দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯২ সালে ব্যবসায় প্রশাসন, কম্পিউটার সায়েন্স এবং অর্থনীতি এ তিনটি বিভাগে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। তখন মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৩৭ জন। তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছিল বনানীতে। বর্তমানে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সুবিশাল ক্যাম্পাসে উচ্চশিক্ষকায় অবদান রেখে চলেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কমের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভিসি। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে আর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি। প্রতিবছর এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদেশে গড়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য যান। নর্থ আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও স্কলারদের নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক শিক্ষা পরামর্শকদের মাধ্যমে এখানে পাঠদান করা হয় বলে দাবি করেছেন ভিসি।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : নর্থ সাউথ ইনিভাসিটিতে বর্তমানে বর্তমানে কতজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আছেন?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয় ২৬০০০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী আধ্যায়নরত। ১৫জন বিদেশি শিক্ষকসহ মোট শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : বিশ্বের কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ও গবেষণা চুক্তি রয়েছে? এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পযন্ত কতজন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়ে প্রায় ৫০ জনের মত উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যায়।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিলেবাস উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংগে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে কি না? এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ত্রেডিট ট্রান্সফার করে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা সম্ভব?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একাডেমিক কারিকুলাম অন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সামাদৃত। স্বনামধন্য নর্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিসমূহের একাডেমিক কারিকুলামের অনুরুপ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। নর্থ আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও স্কলারদের নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক শিক্ষা পরামর্শকদের মাধ্যমে এখানে পাঠদান করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে সহজেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে পারে।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কি সুযগ-সুবিধা রয়েছে? আপনি কি মানে করেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : শিক্ষার্থীদের উচ্চমানের ব্যাবহারিক, প্রয়োগিক ও কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে কম্পিউটার, পরিবেশবিজ্ঞান, ফার্মেসি, জীববিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞানবিষয়ক প্রায় একশর মত অত্যাধুনিক ল্যবরেটরি। নর্থসাউথের লাইব্রেরি দেশের সর্বপ্রথম অনলাইন সুবিধাসম্পন্ন ডিজিটাল লাইব্রেরি। এই ইউনিভার্সিটির রয়েছে ১২শ' আসনবিশিষ্ঠ অত্যাধুনিক ও মনমুগ্ধকর অডিটরিয়াম। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আলাদা লাউঞ্জ, রিক্রিয়েশন সেন্টার, জিম, হেলথ ক্লাব, আউটডোর মাঠ ইত্যাদিসহ ইনডোর গেমসের সুযোগ-সুবিধা।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : কেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেন? আপনি কি মনে করেন একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ক্যাম্পাস হতে পারে এই বিশ্ববিদ্যালয়?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : আমরা আন্তজাতিক র্যাকিংয়ের শীর্ষ ১০০ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তভুক্ত হতে চাই। নর্থসাউথের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে যেমন, হার্ভার্ড, প্রিস্টন, এমআইটি, জন হপকিন্স, বার্কেলে, ইন্ডিয়ান, কর্নেল, পেনিনসিলভানিয়া, উইন্ডসর, ইয়র্ক, জর্জ ওয়াশিংটন, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, ম্যানিটোবা, সিডনি ও মেলবোর্ন ছাড়াও বিশ্বের অনেক স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডিসহ উচ্চতর পরাশোনা ও গবেষনা করছে। কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা শেষে তাদের অনেকেই নর্থ সাউথসহ দেশের অন্য ইউনিভার্সিটিতে আধ্যাপনায় নিয়োজিত রয়েছেন। অনেকে জাতীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানিতে ও প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর দায়িত্বশীল পদে কর্মরত আছেন।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে বলে আপনি মনে করেন কী? গবেষণায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কী পিছিয়ে আছে?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকা উচিৎ নয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় পিছিয়ে নেই। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ভিসি বলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে কম্পিউটার, পরিবেশবিজ্ঞান, ফার্মেসি, জীববিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞানবিষয়ক প্রায় একশর মত অত্যাধুনিক ল্যবরেটরি। যার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রফিট ওরিয়েন্টেড না হয়ে যত সম্ভব সার্ভিস ওরিয়েন্টেড হওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন? এর জন্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কী?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : সন্ত্রাস ও সেশনজট কমানো আর বিদেশমুখী রোধের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯২ সালে দেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি উচ্চশিক্ষায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে অনুমোদন পেয়ে যাত্রা শুরু করে। এনএসইউ একটি অলাভজনক. অবাণিজ্যিক এবং অ-রজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে যেমন মেধাবী ছাত্রদের আধিক্য তেমনি এখানে শিক্ষিত সচেতন ও সামর্থ্যবানদের সন্তানরাও পড়াশোনা করে। ফলে নর্থসাউথ যেমন একদিকে মেধা পাচার রোধ কাজকরে তেমনি মেধাবী এবং সচেতন ও সামর্থকবানদের সন্তনদের দেশে রেখেই আন্তর্জাতিকমানের পরাশোনা আগ্রহী করার মাধ্যমে দেশের কষ্টর্জিত বৈদাশিক মু্দ্রার সাশ্রয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয় মেধাবী ও গরীব ছাত্র এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তনদের বৃত্তি প্রদান টিউশন ফি মওকুফের মাধ্যমে।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : ভালো ক্যারিয়ার গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পদ্ধতিটা কেমন হওয়া উচিৎ।
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে ক্যারিয়ার গঠন সহজ হয়। স্বপ্ন দেখে শিক্ষার্থীরা। আর সেই স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ে দেয় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতি ও শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদানে একজন শিক্ষার্থী চাকরি ক্ষেত্রে যোগ্য ও আদর্শ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দিতে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ভুমিকা কেমন? ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন এ বিশ্ববিদ্যালয়?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : নৈতিকতা শিক্ষায় শিক্ষকের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কেবল জ্ঞান লাভ করে না, তাদের উপদেশ ও পরামর্শ থেকে পায় জীবন ও চরিত্র গঠনের মূল্যবান নির্দেশনা। এনএসইউর শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ও নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। সাধারণভাবে বলা যায়, আদর্শ শিক্ষক তিনি, যিনি তার দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকবেন, নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকিবেন, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি স্নেহময় ও দায়িত্বশীল হবেন, পড়ানোর পূর্ব পাঠ সম্পর্কে অবগত হবেন, পাঠ্যের বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে যার পড়াশোনা থাকবে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা এ বিষয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণ। এমন দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ বিশ্ববিদ্যলয়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক খুবই চমৎকার বলে উল্লেখ করেন ভিসি।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : একজন আদর্শ ও ভাল ছাত্র হওয়ার পূর্বশর্ত কি কি? ভালো ক্যরিয়ার গঠনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন।
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : ভাল ছাত্র হতে গেলে সবচেয়ে আগে যে কাজটি করা উচিৎ তা হল স্বকীয়তা অর্জন করা। কাউকে হুবহু নকল করে কখনও কেউ বড় হতে পারে না। আর পূর্বশর্ত হল রুটিন মাফিক পড়ালেখা করা। কে কত ঘন্টা পড়ছে এটা বড় কথা নয়। বরং কতটা কার্যকারীভাবে পড়ছে, সেটা বড় কথা। পড়ালেখার পাশাপাশি অবশ্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিক কর্যত্রম এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহন করা উচিৎ। সুযগ পেলে সামাজিক কাজেও অংশগ্রহন করার চেস্টা করা উচিৎ। পৃথিবীজুড়ে কী কী ঘটছে সেগুলোর দিকে নজর রাখাও একান্ত কর্তব্য বলে মনে করি।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : আলোকিত সমাজ ও দেশ গঠনে একজন শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন ?
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম : শিক্ষক সমাজ একটি দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো গঠনের প্রধান হাতিয়ার। সুশিক্ষা একটি জতিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। সমাজে আলোকিত মানুষ গঠনে একজন শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। আরো আলোকিত মানুষ তৈরি করার মাধ্যমেই কেবল গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন সম্ভব। শিক্ষকরা দেশের ভবিষৎ নাগরিক তৈরি করেন। একজন ভাল শিক্ষকই তৈরি করতে পারেন একজন ভালো বিচারক, প্রশাসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, ডক্তার, প্রকৌশলী, রাজধানিতিবিদ। এ কারণে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ঢাকা, ২৩ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: