আমরা সহবস্থানে বিশ্বাসী। সবাইকে নিয়ে মিলে মিশেই রাজনীতি করছি ক্যাম্পাসে। প্রগতিশীল অনেক ছাত্র সংগঠন এখানে সক্রিয় রাজনীতি করছে। আমরা কারো কোন বাঁধা দেই না। ছাত্রদলের লোক বা কর্মী না থাকলে আমার কি করার আছে? তবে গত বছরের ১৪ আগস্ট ইবির ইতিহাসে শিবির মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করেছি আমরা। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা, ডাইনিং এর মান বৃদ্ধি, বেতন বৃদ্ধি ও হলের সিটসহ নানান সমস্যা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
অন্যদিকে আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি হলে কোন ফাও খাওয়া চলবে না। তবে ডাইনিংয়ে ফাও খাওয়ার ব্যাপারে আমি সাদ্দাম হোসেন হল ও লালন শাহ হলের নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে অবগত আছি। এ ব্যাপারে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষনে রেখেছি। সুস্পষ্ট প্রমাণ পেলে আমরা অ্যাকশনে যাব। ব্যবস্থা নেয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র পায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব কথা গুলো ক্যম্পাসলাইভকে বলেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান । রিপোর্ট করছেন আমাদের ইবি করেসপনডেন্ট রায়হান মাহবুব ।
ক্যাম্পাসলাইভ: কেমন আছেন? কিভাবে কাটছে আপনার বর্তমান সময়গুলি?
সভাপতি: ভালো আছি। দলীয় নেতা-কর্মী, ছোট-বড় ভাই-বোন আর আপনাদেরকে নিয়ে কিছুটা ব্যস্ততার মধ্যেই কাটছে বর্তমান দিনগুলি।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনি কিভাবে, কখন ও কোথায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেন?
সভাপতি: আমার রাজনৈতিক জীবনের অভিষেক ঘটে ইউনিয়ন ছাত্রলীগে যোগাদানের মাধ্যমে। তারপর থানা ছাত্রলীগ। কলেজে তেমন কোন দলীয় প্রভাব না থাকায় সেখানে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মি হয়ে উঠতে পারি নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে ছাত্রলীগ সম্পর্কে জানতে-বুঝতে পেরেছি। তখন থেকেই ছাত্রলীগের একজন ত্যাগি কর্মী হিসেবে বেড়ে উঠি। আমার বাবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই মিছিলে শামিল হতাম।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আছে ক্যাম্পাসে, এসব কিভাবে দেখছেন?
সভাপতি: সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া আমি কোন উত্তর দিতে পারছি না।
ক্যাম্পাসলাইভ: ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে কোন নির্দেশনা কি আছে? থাকলে কেমন নির্দেশনা?
সভাপতি: ক্যাম্পাসে আমাদের সাথে বিভিন্ন প্রগতিশীল বাম সংগঠন রাজনীতি করে আসছে। তবে লোকাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের এখানে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক চর্চা হয় বেশি। কিন্তু গত বছরের ১৪ আগস্ট ইবির ইতিহাসে শিবির মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করা হয়। আবার এদিকে দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রদলের কোন নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে আসে না। তবে ইবিতে ছাত্রদলের কোন কমিটি আছে কিনা আমার জানা নেই। ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়নসহ যেসব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন আছে, তাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আমরা মিলেমিশে আছি।
ক্যাম্পাসলাইভ: অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ আপনারা হলের সিট বাণিজ্য, হলে ফাও খাওয়াসহ চাঁদাবাজি করছেন? এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
সভাপতি: ছিট বাণিজ্য বলতে কি এটা আমার জানা নেই। তবে ডাইনিংয়ে ফাও খাওয়ার ব্যাপারে আমি সাদ্দাম হোসেন হল ও লালন শাহ হলের নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে অবগত আছি। তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে ফাও না খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কোন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এসমস্ত অভিযোগের কোন সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমানাদি পাওয়া গেলে আমি তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
ক্যাম্পাসলাইভ: বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হলে অনেক ছাত্রলীগ নেতার দৌড়-ঝাপ শুরু হয় এটা কি সত্য?
সভাপতি: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ কখনো হস্তক্ষেপ করে না। এটা নিতান্তই শিক্ষকদের ব্যাপার। কারা নিয়োগ দিচ্ছে কারা নিয়োগ পাচ্ছে এ বিষয়ে আমরা মোঠেও অবগত নই। তবে আমাদের সাবেক কিছু ভাইয়ের চাকরির ব্যাপারে প্রশাসন বরাবর সুপারিশ করেছি। এখন ইবিতে ছাত্রলীগ নেতা বলতে আমি আর সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনার সঙ্গে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সমিতিসহ অন্যান্য দলের শিক্ষক সমিতির কেমন সম্পর্ক?
সভাপতি: ছাত্রলীগ বর্তমান সমস্ত ক্যাম্পাসে বিস্তৃত। একারনে আমাদের আদর্শিক শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠনের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠা এটা স্বাভাবিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অন্যান্য সব শিক্ষক সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষকদের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে।
ক্যাম্পাসলাইভ: কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কি আপনি একমত? না হলে কেন ভিন্নমত, বলবেন কি?
সভাপতি: ছাত্রদের যেকোন যৌক্তিক আন্দোলনের পাশে ছাত্রলীগ সবসময় ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই সারা বাংলার ছাত্রদের পাশে ছিল ছাত্রলীগ। আবার যেকোন অরাজকতা ঠেকাতে আমরা সব সময়ই মাঠে ছিলাম। এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল না, এটা সবার প্রাণের দাবি। এই দাবি বাস্তবায়ন হোক এটা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় চায়। তবে আমি মনে করি, এই আন্দোলনের ফলে দেশের সর্বোত্র ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনার কমিটির মেয়াদ তো শেষ। একজন সফল সভাপতির পরিচয় সফল সম্মেলনের অনুষ্ঠান করা। ইবির সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে?
সভাপতি: কমিটির মেয়াদ শেষ এটা ভুল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কমিটি বহাল থাকবে। আগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শিবিরের অনুপ্রবেশের কারণে আমরা একাধিক নিউজ হতে দেখেছি। তবে এবার সর্বোচ্চ বাছ-বিচার ও তথ্য অনুসন্ধানের ভিত্তিতে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবো। নেতা-কর্মীদের সিভি জমাদানের সময় চলছে। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেখবেন।
আর সম্মেলনের ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না। এটা কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়।
ক্যাম্পাসলাইভ: ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে কিছু বলবেন?
সভাপতি: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দুটি জেলার মাঝে অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শহরে যাতায়াতের জন্য প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িছে ফিটনেস বিহীন পরিবহন। পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা ও পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মেগা প্রজেক্টে ৪ টি হল বরাদ্দ সহ পরিবহন পুলে নতুন নতুন পরিবহন যোগ হওয়ায় এ সমস্যাটি দ্রুত সমাধান হবে বলে আমি মনে করি।
এছাড়া আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ে অনুন্নত খাবার পরিবেশন ও হলের অভ্যন্তরে স্যাঁতসেঁতে অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে হলে অবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আবার প্রশাসনের ভর্তি ফি ও বেতন বৃদ্ধিও আমি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক মনে করছি।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনার নেতৃত্বকালীন সময়ে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চান?
সভাপতি: পূর্ববর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকা ও মিডিয়া বেশি শক্তিশালী না থাকায় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে অরাজকতা সৃষ্টি হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে ক্যাম্পাস অনেকটা নিরাপদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে আরো নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাচ্ছি। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই শিক্ষার্থীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দরকারী সামগ্রির ব্যবস্থা করতে হবে যেন তাদের শহরে না যেতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখতে চাই। শিক্ষা ও গবেষনায় উন্নতি লাভ করে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১০০০ মধ্যে ইবিকে দেখতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীলতার চর্চাকে আরো বেগবান করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে যা যা করনীয়, সে বিষয়ে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করতে চাই।
ক্যাম্পাসলাইভ: নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে কি কিছু বলবেন?
সভাপতি: ইবি ছাত্রলীগ পরিবার এখন বৃহৎ পরিবার। বৃহৎ পরিবারের মধ্যে দুই-একটি খামখেয়ালী-উগ্রপন্থি মনোভাবের থাকে। তবে আমার অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা যেকোন কর্মসূচী যথাযথ দ্বায়িত্ব ও জবাবদিহিতার সহিত পালন করে থাকেন। আমি দ্বায়িত্বলাভের পর থেকে নিজেদের মধ্যে কোন গ্রুপিং, মন কষাকষি কিংবা কোন মারামারি সৃষ্টি হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে আমার কোন নেতা-কর্মী অন্য কোন মতাদর্শের চর্চা করে না এবং করবেও না।
ক্যাম্পাসলাইভ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার ক্যাম্পাসের ভূমিকা কি হবে? কেমন ভূমিকা রাখতে চান?
সভাপতি: আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে যা যা করনীয় আমার নেতা-কর্মী সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে বলে আমি মনে করি।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনার ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জানতে চাই।
সভাপতি: আমার এই পর্যন্ত আসাব মূল উৎসাহদানকারী, প্রেরণার বাতিঘর হলো আমার বাবা। পাশাপাশি আমার নের্তৃত্বে আসার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের অনেক অবদান রয়েছে। কেননা তারা আমার ক্যাম্পাস জীবনে দূর্দিনের সাথী। এই সংগঠন আমাকে অনেক সম্মান-প্রাপ্তি দিয়েছে। আমার বাবার আদর্শ-অনুপ্রেরণা, বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও চেতনাদর্শ, এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমি পিছু হটতে চাইলেও এ চেতনা আমাকে কখনো পিছু ছাড়বে না।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ক্যাম্পাস লাইভকে সময় দেওয়ার জন্য।
সভাপতি: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
ঢাকা, ০৯ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: