লাইভ প্রতিবেদক: দেশে ফিরেছেন আহত যাত্রী শাহীন। তার শরীরটা তেম ভাল নেই। একটু একটু কথা বলেন। তবে কোলাহল তার ভাল লাগে না। এক একা থাকতেই ভাল লাগে। নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের আহত যাত্রী শাহীন রোববার ঢাকায় ফিরেছেন। দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তাঁকে আনা হয়।
এ সময় তাঁর সঙ্গে একজন চিকিৎসকও ছিলেন। ৪২ বছর বয়সী শাহীন ব্যাপারী মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মৃত শফিউল্ল্যাহ ব্যাপারী ও জাহানারা বেগমের ছেলে। স্ত্রী রিমা আক্তার ও আট বছরের মেয়ে সূচনাকে নিয়ে থাকেন নারায়ণগঞ্জের আদমজীর একটি বাসায়। সদরঘাটে ‘করিম অ্যান্ড সন্স’ নামের একটি কাপড়ের দোকানে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করেন।
দুর্ঘটনায় শাহীনের মাথার কিছু অংশ আগুনে পুড়ে যায়। শরীরে পেছন দিকেও আঘাত লাগে। এ ছাড়া ডান পা ভেঙে যায়। আহত হওয়ার পর শাহীনকে নেপাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঢাকা থেকে মেডিকেল টিমের সদস্যরা নেপাল যাওয়ার পর তাঁরা শাহীনকে ওড়ার অনুমতি দেন। একজন চিকিৎসক তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফেরেন। কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁকে বিমানে ওঠানো হয়। ঢাকার নামার পর কিছু কথা হয়।
ক্যাম্পাসলাইভ : আপনার শরীর কেমন? কেমন লাগছে?
শাহীন: একটু একটু ভালো লাগছে। দেখলেন তো স্যালাইন চলছে। আমি কোন রকম বেঁচে আছি।
ক্যাম্পাসলাইভ: নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলেন? নাকি কোন কাজ ছিল?
শাহীন: বেড়াতে যাচ্ছিলাম। আবার একটু কাজও ছিল। কিন্তু কোনটাই হলো না। সবই তছনছ হয়েগেছে।
ক্যাম্পাসলাইভ: দুর্ঘটনার কথা কি মনে পড়ে?
শাহীন: সে দৃশ্য বলে বুঝাতে পারবো না। ভাবি নাই বাঁচব, আল্লাহর রহমত ছিল, তাই বেঁচে গিয়েছি। বাঁচলাম ক্যামনে আল্লাহই জানেন। আমি অলৌকিকভাবে বেচেঁ আছি।
ক্যাম্পাসলাইভ: এই দুর্ঘটনার আগে আপনি কিছু বুঝতে পারছিলেন?
শাহীন: প্রথমে কিছু বঝতে পারিনি। সে রকম বড় কিছু মনে হয়নি। তবে বিমানটি খুব নিচ দিয়ে উড়ছিল। তখন মনে ভয় এস যায়।
ক্যাম্পাসলাইভ: বিধ্বস্ত বিমান থেকে কীভাবে বের হলেন? কেউ কি সহায়তা করেছিল?
শাহীন: আমার সিট ছিল বিমানের মাঝামাঝি স্থানে। বিমানটি আছড়ে পড়ার পর মাঝ বরাবর ভেঙে যায়। তখন দেখি আমার সামনে ফাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু আমি বের হতে পারছিলাম না।
ক্যাম্পাসলাইভ : কি কারণে বের হতে পারছিলেন না?
শাহীন: প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। সামনে যাবার সাহস আর শক্তি দুটোই যেন অচল হয়ে যায়।
দুর্ঘটনার পর বিমানের সিটগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে লেগে যায়। এতে অনেকে আটকে যায়। আমার পা একটি চেয়ারের সঙ্গে আটকে ছিল। আমি জোর করে বের হয়েছি। কী করে যে বের হলাম, সেটা এখন আর মনে করতে পারছি না। একথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ক্যাম্পাসলাইভ: অন্য যাত্রীদের কী দেখলেন? আপানার তখন কেমন লাগছিল?
শাহীন: সে এক করুণ দশা। কে কার দিকে চায়? সবাই জান বাঁচাতে ব্যস্ত, কে কার দিকে তাকাবে বলেন? কী করব তা বুঝতে পারছিলাম না। আমি তখনকার সময় কিছুই বলতে পারছিলাম না।
ক্যাম্পাসলাইভ: আপনাকে কারা কোথায় নিয়ে গেল?
শাহীন: আমার যতদুর মনে পড়ে সেনাবাহিনীর জোয়ানেরা আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আমার চোখে মুখে কেবল ভয় আর ভয়।
ঢাকা, ১৯ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: