Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০
teletalk.com.bd
thecitybank.com
রানির বর্ণাঢ্য জীবন

ব্রিটেনের দ্বিতীয় রানি এলিজাবেথের জীবনাবসান

প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বার ২০২২, ১১:১৯

ব্রিটেনের দ্বিতীয় রানি এলিজাবেথের জীবনাবসান

লাইভ ডেস্ক: ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই। স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। ব্রিটিশ রাজপ্রসাদের এক বিবৃতিতে রানির মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসও এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রানির স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। এর পর থেকে বালমোরাল প্যালেসে রানিকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকরা। তার অসুস্থতার খবরে এদিন সেখানে ছুটে যান প্রিন্স চার্লসসহ তার সন্তান-সন্ততিরা।

রানি এলিজাবেথের জন্ম ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল। তিনি ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিংহাসন আরোহণ করেন। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকা রানি হিসেবে ২০১৫ সালে রানি ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে যান। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্য এবং আরও ১৫ টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রানি ছিলেন।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। নানান কারণে রানি আলোচনায় থাকেন। কেননা ব্রিটেনের রাজা-রানিরা শুধু ইংল্যান্ডের কাছে নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় উপমহাদেশ এক সময় অন্য আরও অনেক দেশের মতোই ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল। তখন ব্রিটেনের রানি ছিলেন ভিক্টোরিয়া। ব্রিটেনের সিংহাসনে অনেক রানি এসেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

সিংহাসনের অধিকার পাওয়ার পর ৭০ বছর পার করতে চলেছেন তিনি। আগামী রবিবারই এই অনন্য নজির গড়বেন তিনি। তার আগে কোনো ব্রিটিশ শাসকেরই টানা সাত দশক সিংহাসনে আসীন থাকার ইতিহাস নেই। রানির পর সিংহাসনের দাবিদারদের মধ্যে রয়েছেন তার ছেলে যুবরাজ চার্লস, নাতি যুবরাজ উইলিয়ামসহ আরও অনেকে।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬ সালে। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসন লাভ করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৩৭ সালে ব্রিটেনের রাজা হন। এলিজাবেথ ছিলেন তখন ব্রিটিশ সিংহাসনের একমাত্র উত্তরাধিকারী। ষোল বছর বয়সে তিনি প্রথম জনসম্মুখে আসেন। আঠার বছর বয়সে সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জ মৃত্যুর পর এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন। জানেন কি? ব্রিটেনের শাসক কিন্তু দ্বিতীয় এলিজাবেথের হওয়ার কথা ছিল না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার অবস্থান ছিল চাচা অষ্টম এডওয়ার্ড এবং বাবা ষষ্ঠ জর্জের পরে।

তবে বিপত্নীক নারী ওয়েলিস সিম্পসনকে বিয়ে করার কারণে ১৯৩৬ সালে সিংহাসন ত্যাগ করেন অষ্টম এডওয়ার্ড। অতঃপর তার স্থলাভিষিক্ত হন এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ। সে হিসেবে বলা যায়, ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের শেষ পুরুষ শাসক। এরপর ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর যুবরাজ ফিলিপের সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে দ্য টেলিগ্রাফের মতে, ফিলিপের সঙ্গে এলিজাবেথের প্রথম বাগদান সম্পন্ন হয় ১৯৪৬ সালে।

যদিও ১৯৪৭ সালের পহেলা এপ্রিল এলিজাবেথ ২১ বছরে পদার্পণের পর সেটি স্বীকৃতি পায়। এরপর একইসঙ্গে সংসার আর রাজ্যপাট চালাচ্ছেন তিনি। খাতা কলমে রাজ্যপাট থাকলেও ব্রিটেনের প্রশাসন পরিচালনা করে সে দেশের সরকার। আমজনতার ভোটের মাধ্যমে সেই সরকার বেছে নেয়। তবে এই নিয়ম বদলে রাজ পরিবারের ঠাটবাট এতটুকুও কমেনি। বরং আজও এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য এক-একজন আন্তর্জাতিক সেলেব্রিটি।

রানি হিসাবে সম্মান কমেনি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও। সম্প্রতি জীবনসঙ্গীকে হারান তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুবরাজ ফিলিপ। বার্ধক্যজনিত অসুখের কারণেই পরবর্তীতে মৃত্যু হয় তার। সিংহাসনে বসার পর থেকে বহু পরিবর্তন ও বহু ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছেন তিনি।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি দ্রুতগামী পৃথিবীর সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। সিংহাসনে ৭০ বছর কেটে গেছে তার এখনো জনপ্রিয়তা এবং মানুষের কৌতূহলের বাইরে নন তিনি। প্রতিদিনই লাখ লাখ মানুষ তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ইন্টারনেট ঘাঁটেন। ২০১২ সালে রানি এলিজাবেথ হীরক জয়ন্তী উদযাপন করেন।

ব্রিটিশ রাজ পরিবারের মধ্যে তিনিই সবথেকে জনপ্রিয়। গত ২৩ জানুয়ারি হেলিকপ্টারে পূর্ব ইংল্যান্ডের স্যানড্রিনগাম এস্টেটে পৌঁছে যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রতি বছরই স্যানড্রিনগামে পরিবারের প্রিয় সদস্যদের সঙ্গে ক্রিস্টমাস ও ইংরেজি নববর্ষের উৎসবে সামিল হন রানি। তবে করোনা পরিস্থিতি বাঁধ সাধে সেখানে। তবে বছর শুরুতেই পছন্দের জায়গায় গিয়েছিলেন রানি। রানির এই নতুন রেকর্ড উপলক্ষে সাজ সাজ রব ছিল পুরো ব্রিটেনজুড়ে।

 

রানির বর্ণাঢ্য জীবন:

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে যখন যুক্তরাজ্যের প্রভাব ক্রমশ কমেছে, সমাজে আমূল পরিবর্তন এসেছে, রাজতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তখনও অনেকের কাছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জনপ্রিয়তা কমেনি। ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে নিজ কর্তৃত্বে তিনি অটল থেকেছেন। অথচ তার জন্মের সময়ও কেউ ভাবেনি তার অপেক্ষায় রয়েছে ব্রিটিশ সিংহাসন। এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৬ সালের ২১শে এপ্রিল। তার বাবা অ্যালবার্ট, ডিউক অব ইয়র্ক। মা এলিজাবেথ বোওজ –লিওন। এই দম্পতির প্রথম সন্তান তিনি। অ্যালবার্ট ছিলেন পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় সন্তান।

রানি এবং তার বোন মার্গারেট দুই জনই লেখাপড়া শিখেছেন বাড়িতে। রানির যখন ছয় বছর বয়স তখন তার ঘোড়ায় চড়া বিষয়ক প্রশিক্ষককে তিনি বলেছিলেন তিনি ‘গ্রামের গৃহিণী হতে চান যার অনেকগুলো ঘোড়া ও কুকুর থাকবে।’ বলা হয় খুবই ছোটবেলা থেকেই তিনি অসাধারণ দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন। ব্রিটেনের ভাবী প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘তার চরিত্রে যে কর্তৃত্ববোধ ছিল, তা একজন শিশুর পক্ষে ছিল খুবই আশ্চর্যজনক।’

স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও ভাষাজ্ঞানে এলিজাবেথের ভালো দখল ছিল। তিনি সাংবিধানিক ইতিহাস পড়েছিলেন বিশদভাবে। ১৯৩৬ সালে রাজা পঞ্চম জর্জের মৃত্যুর পর তৃতীয় এডওয়ার্ড উপাধি পান রাজা ডেভিড। তবে দুই বার বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া আমেরিকান এক ধনী রমণী ওয়ালিস সিম্পসনের সঙ্গে তার বিয়ে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সে বছরই তাকে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয়। এলিজাবেথের বাবা ডিউক অফ ইয়র্ক অনিচ্ছার সঙ্গে সিংহাসনে বসেন রাজা ষষ্ঠ জর্জ হিসেবে। তার অভিষেক অনুষ্ঠান কিশোরী এলিজাবেথকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে।

রাজা ষষ্ঠ জর্জ, তার স্ত্রী ও দুই কিশোরী কন্যাকে নিয়ে যখন রাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে ইউরোপে ঘুরছেন, তখন ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ডেই এলিজাবেথের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে গ্রিসের যুবরাজ প্রিন্স ফিলিপের, যিনি ছিলেন সম্পর্কে তার কাজিন।

প্রণয় পর্ব:

সেটাই যে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ছিল তা নয়, তবে সেই প্রথম এলিজাবেথ, ফিলিপ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এলিজাবেথের বয়স যখন ১৮, তখন ১৯৪৪ সালে ফিলিপের প্রতি তার প্রণয় গভীর হয়ে ওঠে। তিনি ঘরে ফিলিপের ছবি রাখতেন, দুজন দুজনকে চিঠি লিখতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তরুণী প্রিন্সেস এলিজাবেথ আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে লরি চালানোর শিক্ষা নেন। যুদ্ধ শেষে প্রিন্স ফিলিপকে তিনি বিয়ে করতে চাইলে তাকে বেশ বাধার মুখে পড়তে হয়। এলিজাবেথ ছিলেন রাজার অনেক আদরের কন্যা। ফিলিপের বিদেশি বংশ পরিচয়ের কারণে রাজা তার হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হননি। কিন্তু তাদের ইচ্ছারই জয় হয় শেষ পর্যন্ত। ১৯৪৭ সালের ২০শে নভেম্বর এলিজাবেথ ও ফিলিপ ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ফিলিপের উপাধি হয় ডিউক অফ এডিনবারা। তিনি নৌবৈাহিনীর কর্মকর্তা পদে বহাল থাকেন।

বিয়ের পর প্রথম কয়েক বছর তারা স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন কাটান। এ সময়ই তাদের প্রথম পুত্র চার্লস ও কন্যা অ্যান জন্ম নেন। ১৯৫২ সালে যখন এলিজাবেথের বয়স ২৫, তখন রাজা ষষ্ঠ জর্জ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যা নেন। এলিজাবেথ তার স্বামীকে নিয়ে বিদেশ সফরে যান বাবার হয়ে দায়িত্ব পালন করতে। চিকিৎসকের পরামর্শ উপেক্ষা করে রাজা তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন। সেটাই ছিল পিতা ও কন্যার শেষ সাক্ষাৎ।

এলিজাবেথ কেনিয়ায় বসে পিতার মৃত্যু সংবাদ পান। সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসেন তিনি ব্রিটেনের রানি হিসেবে। সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘এক অর্থে আমার কোনও শিক্ষানবিশী হয়নি। আমার বাবা মারা যান খুব অল্প বয়সে। কাজেই অনেকটা হঠাৎ করেই দায়িত্ব নিতে এবং সাধ্যমতো দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হতে হয়েছিল আমাকে।’

অভিষেক:

১৯৫৩ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিক অভিষেকে দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহণ ও শপথগ্রহণ লাখ লাখ মানুষ দেখেন টেলিভিশনের পর্দায়। যুদ্ধের পর ব্রিটেন তখন কঠিন অর্থনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভাষ্যকাররা তার অভিষেককে ব্যাখ্যা করেছিলেন 'নতুন এলিজাবেথান যুগ' হিসেবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ উপনিবেশ তখন গুটিয়ে এসেছে। নতুন রানির দায়িত্ব নিয়ে তিনি যখন ১৯৫৩ সালে কমনওয়েলথ দেশগুলোতে দীর্ঘ সফরে বেরুলেন, তখন ভারতীয় উপমহাদেশসহ অনেক দেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে।

রাজতন্ত্র থেকে রাজপরিবার:

ক্রমশ রাজতন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের অবিচ্ছিন্ন আনুগত্যে বদল আসতে শুরু করে। সমাজের মধ্যে নানা ধ্যানধারনাও দ্রুত বদলাতে থাকে। রানিও যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলান। ক্রমশ রাজতন্ত্রের জায়গা নেয় রাজপরিবার। রানির রাজত্বকালের মূল স্তম্ভ হয়ে ওঠে সাংবিধানিক সততা রক্ষা। তবে সরকারের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড থেকে দূরে চলে যান রানি। দায়িত্ব সীমিত থাকে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন, দেশের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত থাকা, সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার মধ্যে।

১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে, বাকিংহাম প্রাসাদ সিদ্ধান্ত নেয় যে রাজপরিবারকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। রানি এবং তার পরিবারও যে আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মত ঘরকন্নার নানা কাজ করেন তা দেখাতে বিবিসিকে 'রয়্যাল ফ্যামিলি' নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। রানির দৈনন্দিন ঘর সংসারের নানা ছবি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। অনেকে বলেন, ওই তথ্যচিত্র রাজপরিবারের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। তবে সমালোচকরা কেউ কেউ বলেন, রাজপরিবারকে নিয়ে মানুষের মনে যে দীর্ঘদিন একটা রহস্য ও রোমাঞ্চ ছিল এই ছবি তা ধ্বংস করে দেয়।

কেলেঙ্কারি ও বিপর্যয়:

রানি এলিজাবেথ তার দায়িত্ব পালনে নানা দেশে ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। তিনিই ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ রানি যিনি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন। এর এক বছরের মধ্যে তার পরিবারে নানা ধরনের কেলেঙ্কারি ও দুর্যোগ শুরু হয়। রানির দ্বিতীয় ছেলে ডিউক অব ইয়র্ক ও স্ত্রী সারা আলাদা হয়ে যান। মেয়ে প্রিন্সেস অ্যান ও স্বামী মার্ক ফিলিপস্-এর বিয়ে ভেঙে যায়। প্রিন্স ও প্রিন্সেস অফ ওয়েলস্, অর্থাৎ চালর্স ও ডায়ানা বিয়েতে যে গভীর অসুখী এ খবর জানাজানি হয়। তারাও আলাদা হয়ে যান।

১৯৯২ সালের ২০ নভেম্বর রানির প্রিয় বাসভবন উইন্ডসর কাসেলে ওই বছরই বিরাট অগ্নিকাণ্ড হয়। ওই ভবন মেরামতের খরচ সাধারণ মানুষ জোগাবে নাকি তা রানির তহবিল থেকে ব্যয় করা উচিত তা নিয়ে চলে তুমুল বিতর্ক। রানি ১৯৯২ সালকে ব্যাখ্যা করেন ‘অ্যানাস হরিবিলিস্’ অর্থাৎ দুর্যোগের বছর হিসেবে।

ডায়ানার মৃত্যু:

একদিকে ইউরোপের সঙ্গে নতুন জোট গঠনের মধ্যে দিয়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিটেনের যোগাযোগ কিছুটা শিথিল হয়ে আসা, অন্যদিকে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে অব্যাহত বিতর্ক! এর মধ্যেও যখন রানি রাজপরিবারের উজ্জ্বল স্তম্ভ হিসাবে তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট, তখন প্রিন্সেস ডায়ানার আকস্মিক মৃত্যু ব্রিটেনের রাজপরিবারের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে আসে।

১৯৯৭ সালের অগাস্টে প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়ানা মারা যাবার পর রানির বিরুদ্ধে ওঠে সমালোচনার ঝড়। যখন প্রাসাদের বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল- ফুলের শ্রদ্ধার্ঘ্যে ভরে উঠেছে প্রাসাদের ফটকের বাইরের রাস্তাঘাট, তখন সেই শোকের মুহূর্তের সঙ্গে রানির আপাতদৃষ্টিতে একাত্ম হতে না পারায় মানুষ সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। মানুষের তীব্র সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত রানিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে হয়। ভাষণে তিনি পুত্রবধূ ডায়ানার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজপরিবারকে বদলানোর অঙ্গীকার করেন।

উৎসবের বছরগুলো:

রাজপরিবারের প্রতি ব্রিটেনের মানুষের আগ্রহ, উদ্দীপনা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ২০০২ সালে মহাসমারোহে উদযাপিত হয় রানির সিংহাসন আরোহণের সুবর্ণ জয়ন্তী। এরপর রানির ৮০ বছরের জন্মদিনে উইন্ডসরের রাস্তায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার বিশেষ সাক্ষাত-সফর, রানি ও প্রিন্স ফিলিপের বিয়ের ৬০তম বার্ষিকী উৎসব এবং ২০১১ সালে রানির নাতি উইলিয়াম ও ক্যাথরিনের বিয়ে, ২০১২ সালে রানির সিংহাসন আরোহণের হীরক জয়ন্তী। সবশেষ ২০২২-এর জুনে মহাসমারোহে উদযাপিত হয়েছে রানির সিংহাসন আরোহণের ৭০তম বার্ষিকী বা প্লাটিনাম জয়ন্তী।

এসব উদযাপন উপলক্ষে জনতার উচ্ছ্বাস ও অংশগ্রহণ রাজপরিবারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল যে ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনও রাজপরিবার নিয়ে আগ্রহী। রাজপরিবারের প্রতি জনগোষ্ঠীর অন্তত একাংশের আনুগত্য লোপ পায়নি। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আসীন থাকার গৌরব অর্জন করেন। তার বাবার প্রপিতামহী রানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালের মেয়াদ ছিল এর চেয়ে কম।

রানির দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ প্রয়াত হন ২০২১-এর এপ্রিল মাসে। রানির রাজত্বকালের শুরুর সময় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র যে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, যে রাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের তখন প্রবল আনুগত্য ছিল, তার রাজত্বকালের শেষ সময়ে সেই উচ্ছ্বাস ও আনুগত্যে কিছুটা ভাটা পড়েছিল বটে, কিন্তু ব্রিটিশ জনগণের হৃদয়ে রাজপরিবারের প্রতি ভালোবাসা যাতে চিরস্থায়ী হয়, তা নিশ্চিত করতে সারা জীবন সচেষ্ট ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ