লাইভ ডেস্ক: চলে বলে কৌশলেই চলতে চায় পাকি সরকার। তারা যেভাবেই হোক গ্রেপ্তার করতে চায় ইমরান খানকে। এমনটি ইঙ্গিত দিলেন স্বয়ং ইমরান খান ও তার দল। এরই অংশ হিসেবে মসজিদে নববীতে বিশৃংখল ও পবিত্রতা নষ্ট করার ঘটনায় পাকিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদের ভাতিজা শেখ রশিদ শফিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার ব্যস্ত সময়ে সৌদি আরব থেকে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে পৌঁছার পর পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মসজিদে নববীতে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও তার দলবলের বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দেয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিমানবন্দরের সূত্র জানিয়েছে, একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সে করে পাকিস্তান ফেরেন শফিক। তিনি বলেন, সে ওমরাহ পালন শেষে পাকিস্তানে অবতরণ করতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা কেউই সৌদি আরবে ছিলাম না। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। মামলা হওয়ার পর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শেখ রশিদ বর্তমান সরকারের উদ্দেশে বলেন, তারা যেখানেই যাবে, সেখানেই মানুষ তাদেরকে হয়রানি করবে। তবে ওই ঘটনা জানেন এমন সূত্র বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর শফিককে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মসজিদে নববীর ঘটনায় কমপক্ষে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন পরিচিত। ১০০ থেকে ১৫০ জন অজ্ঞাত। পরিচিতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী, শেহবাজ গিল, সাহিবজাদা জাহাঙ্গীর ও পিটিআইয়ের আরো বেশ ক'জন নেতা।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন:
এদিকে মুসলিমদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানের স্থান মসজিদে নববীর পবিত্রতা ক্ষুন্ন করার কারণে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় ইমরানকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। যারা রাসুল্লাহ (স.)এর রওজা মুবারকের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব সরকার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও তার প্রতিনিধি দল মসজিদে নববীতে গেলে সেখানে বেশ কয়েকজন তাদের উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর স্লোগান দেয়। তাদেরকে চোর চোর বলে চিৎকার করে। কারো মাথার চুল ধরে টানতে থাকে। পবিত্র মসজিদে নববীর মধ্যে এমন ঘটনা বিরল। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে সৌদি কর্তৃপক্ষ ৫ পাকিস্তানিকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে এ বিষয়ে ২৪ ঘন্টার পর মুখ খোলেন সদ্য ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি ওই ঘটনাকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের পরিণতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। জবাবে ইমরান খানকে ‘ফিতনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, তারা যা করেছেন তার জন্য কোনোই ক্ষমা পাবেন না। এ জন্য অবশ্যই ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হবে। আমরা দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
অন্যদিকে মসজিদে নববীতে সৃষ্ট ঘটনায় ইমরান খান সহ কমপক্ষে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, এর পক্ষে যেকোনো নাগরিক এগিয়ে এলে তাতে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না সরকার। মসজিদে নববীতে পিএমএলএনের নেতাদের হয়রানি ও অবমাননা করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অনীল মাসারাত ও সাহিবজাদা জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একদল মানুষ বৃটেন থেকে সৌদি আরবে গেছেন। ইমরান খান নতুন প্রজন্মকে ভুলপথে পরিচালিত করছেন। মন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন চাঁদরাতে কোনো ব্যক্তি কি প্রতিবাদ বিক্ষোভ ডাকতে পারেন? আমি ও আমরা এটা বিশ্বাস করিনা। করতে পারি না।
‘জন প্রতিক্রিয়া’ বললেন ইমরান খান:
মসজিদে নববীতে রাজনৈতিক স্লোগানকে ইমরান খান ‘জন প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, এটা ছিল পাকিস্তানি ওইসব রাজনীতিকের পরিণাম। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। এতে আরও বলা হয়, বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি কিছু বিক্ষোভকারী মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববীতে নিয়মনীতি ভঙ্গ করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও তার প্রতিনিধিরা এদিন মসজিদে প্রবেশ করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর রওজা মুবারক জিয়ারত করতে। তারা মসজিদে প্রবেশ করতেই ওই গ্রুপটি তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্লোগান দিতে থাকেন। এমনকি তারা পাকিস্তান সরকারের এই প্রতিনিধি দলকে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা কারো কারো চুল ধরে টানতে থাকেন। তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেবকে অবমাননা করেন বলেও জানাগেছে।
ইমরান খান বলেছেন, দেশের ইতিহাসে এমন জন প্রতিক্রিয়া আগে কখনো দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা কাউকে বিক্ষোভ করতে বলিনি। জনগণ নিজেরাই বিক্ষোভ করেছেন তাদের বেদনা ও ক্ষোভ থেকে। বর্তমান শাসকদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে ইমরান বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিতে পারি যে, বর্তমান শাসকরা প্রকাশ্যে কোথাও মুখ দেখানোর সক্ষমতা রাখেন না। ইমরান খান আবারও বলেন, বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। আর বর্তমান সরকার সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক কিছু। তা সত্ত্বেও মসজিদে নববীতে যা ঘটেছে তা তাদের কৃতকর্মের ফল। পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেন, যখন ওই ঘটনা ঘটে তখন সারাবিশ্বের সব পিটিআই কর্মী ‘শবে দুয়া’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। মসজিদে নববীতে দুর্বৃত্তদের উস্কে দেয়ার কথা আমি যেমন চিন্তা করতে পারি না। তেমনি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর একজন সত্যিকার প্রেমিক হিসেবে এমনটা ভাবতেও পারি না।
মহানবীর (স.) জন্য আমার হৃদয়ে যে স্থানটি রাখা আছে, তা আমার প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। ইসলামভীতি নিয়ে সারাবিশ্বে যে প্রচারণা আছে তার বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার থেকেছি। আমি বিশ্বাস করি মহানবী (স.)কে ভাল না বাসলে কারো ঈমান পূর্ণতা পায় না। তিনি সকলকে ভূল পথ ছেড়ে সঠিক পথে আসার আহবান জানা।
ঢাকা, ০২ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: