লাইভ ডেস্ক: ইসরায়েলী দখলদারদের ব্যাপারে ক্রমেই সোচ্চার হচ্ছে বিভিন্ন দেশ। প্রতিবাদ ও সার্বিক সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন সেসব দেশ ও দেশের জনগণ। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ইসরায়েলের ‘ঘৃণ্য পদক্ষেপ’ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে একমত হয়েছেন। এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বলেছে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে তাদের এমন ‘বর্বর’ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এই ৩ নেতা গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছেন। ইয়াসিন ও উইদোদো এক ফোন কলে আলাপকালে এ আহ্বান জানান বলে শনিবার (১৫ মে) আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, ‘আমাদের একই মতামত ছিল যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষত জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের উচিত ইসরায়েলের সব প্রকার সহিংসতা বন্ধ করা এবং ফিলিস্তিনিদের জীবন বাঁচানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।’ তিনি বলেন, ‘আজ অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তান শ্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন ইসরায়েলের নির্যাতন থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় কঠোর অবস্থান গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন। মুহিদ্দিন বলেছেন, পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্যালেস্টাইনের জনগণের জন্য হিউম্যানিস্টিস্ট ট্রাস্ট ফান্ডের (একেএআরপি) মাধ্যমে মালয়েশিয়া গত বছর আল-আকসা মসজিদে ১০ হাজার ডলার সহায়তা প্রদান করেছে।
এছাড়াও গত বছরের ১০ মে জর্ডানে একটি বিশেষ চার্টার্ড বিমানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সরকার এক মিলিয়ন ফেস মাস্ক, ৫০০ ফেস শিল্ড এবং ৫ লাখ রাবার গ্লাভসসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় পাঠিয়েছে। যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আগামীকাল রোববার (১৬ মে) জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবে ওআইসি। বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন বিদেশমন্ত্রী দাতুক সেরি হিশামুদ্দিন তুন হুসেইন।
হিশামুদ্দিন বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে থাকবে। ফিলিস্তিন সম্পর্কে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর জন্য ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী দাতুক সেরি সেতিয়া হাজী ইরানওয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেটনো মার্সুডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সম্মিলিতভাবে আমরা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এ হামলা বন্ধের আহ্বান জানাই।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার
ইসরায়েলি হামলা স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে তাদের এমন ‘বর্বর’ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। শুক্রবার (১৪ মে) দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রস্তাবসমূহের (ইউএনএসসি) ৪৪৬ (১৯৭৯) এবং ২৩৩৪ (২০১৬) সঙ্গে একেবারেই যায় না,
যেখানে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান এবং ‘ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা’ রক্ষার ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা এবং পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারারাহতে ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে বেআইনিভাবে উচ্ছেদের নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলা বন্ধ করা এবং একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়, যা একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করবে।’
এটি বলেছে যে, শান্তি বজায় রাখার পাশাপাশি একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকা উচিত। গাজা উপত্যকাকে লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। হামলায় ৩১ শিশু ও ২০ নারীসহ এ পর্যন্ত ১৩৯ ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৫০। হামলায় অনেক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে এবং ১৯৮০ সালে পুরো শহরকে সংযুক্ত করে। তবে তাদের এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কখনও স্বীকৃতি পায়নি।
ঢাকা, ১৫ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: