Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কফি আনানের শোকে কাঁদছে বিশ্ব

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৮, ০০:৪৪

ইন্টারন্যাশনাল লাইভ: জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের শোকে কাঁদছে বিশ্ব। তিনি আজ আর নেই, চলে গেছেন সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় শনিবার সকালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

ঘানার এ কূটনীতিক সুইজারল্যান্ডে বসবাস করতেন। সেখানেই তিনি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবর বিবৃতির মাধ্যমে জানায় আনান পরিবার, কফি আনান ফাউন্ডেশন ও জাতিসংঘ।

বিবৃতি থেকে জানা গেছে, নিজের শেষ দিনগুলোতে আনানের পাশে ছিলেন তার স্ত্রী ন্যানে, তিন সন্তান আমা, কোজো ও নিনা। তার সমাধি প্রক্রিয়া পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।

কফি আনান ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে তাকে ‘বৈশ্বিক কূটনীতিক ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আন্তর্জাতিকতাবাদী’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়পরায়ণ বিশ্ব গড়তে জীবনভর লড়ে গেছেন তিনি। যেখানেই দুর্ভোগ বা মানবিক আর্তি ছিল, সেখানেই ছুটে গিয়ে গভীর সমবেদনা ও সমানুভূতিতে হৃদয় জিতেছেন বহু মানুষের। নি:স্বার্থভাবে অন্যদের কথাই আগে ভেবেছেন তিনি, যা করেছেন- সবকিছুতেই ছড়িয়েছে সত্যিকারের মমতা, আন্তরিকতা আর মেধার দ্যুতি।

১৯৯৭ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জাতিসংঘ মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বশান্তিতে অবদানের জন্য ২০০১ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন কফি আনান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংস্থার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনের পর কফি আনান জাতিসংঘ-আরব লিগের বিশেষ দূত হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে সংকট নিরসনে যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়েও ফল না আসায় হতাশ হন তিনি।

সবশেষ মিয়ানমার রাখাইনে দমন-পীড়ন চালিয়ে রোহিঙ্গা সংকট তৈরি করলে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ কমিশন গঠনের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা চালান কফি আনান। তার নামে গঠিত আনান কমিশনের সুপারিশমালা ব্যাপক প্রশংসিত হয় বাংলাদেশসহ বিশ্ব দরবারে।

আনানের প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতিয়েরেসসহ বিশ্বনেতারা।

কফি আনান ১৯৩৮ সালের ৮ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত ঘানার কুমাসি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা-বাবা উভয়ের পরিবারই উপজাতি গোষ্ঠীর শীর্ষ পর্যায়ের পরিবারের সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে বাবা ছিলেন আবার শিক্ষিত। সে হিসেবে উপজাতীয় ও আধুনিক-উভয় সংস্কৃতি গায়ে মেখেই বড় হন আনান।

ঘানার একটি আবাসিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি কুমাসির কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়াশোনা করেন। ২০ বছর বয়সে স্কলারশিপ পেয়ে আনান যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার ম্যাসালেস্টার কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে অর্থনীতি বিষয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে দক্ষ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আনান যেন বিশ্বজয়ী কূটনীতিক হওয়ার জানান দিচ্ছিলেন।

১৯৬১ সালে তিনি ওই কলেজ থেকেই অর্থনীতি উচ্চতর ডিগ্রি নেন। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার পাঠ চুকে আনান চলে যান সুইজাল্যান্ডের জেনেভায়। সেখানে তিনি গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারনশ্যানাল অ্যান্ড ডেভেলেপমেন্ট স্টাডিজে অর্থনীতির ওপরই আরেকবার স্নাতক ডিগ্রি নেন।

জেনেভায় পড়াশোনার পর আনান জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (হু) যোগ দেন। সংস্থাটিতে প্রশাসনিক ও বাজেট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে পদায়ন করা হয়। আনান বরাবরই মাতৃভূমিতে ফিরতে চাইলেও আফ্রিকান দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা তাকে বারবার দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

এরমধ্যে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আলফ্রেড পি. স্লোয়ানে ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৭২ সালে ফেলোশিপটি শেষ করার পর আনানকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার অব সায়েন্স ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। পরে ঘানায় ফেরার বদলে তিনি নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদফতরে চাকরিতে যোগ দেন।

প্রথম মেয়াদে জাতিসংঘের কার্যক্রমে অভাবনীয় ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় আনানকে ২০০১ সালে দ্বিতীয় দফায় জাতিসংঘ মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০১ সালে জাতিসংঘের সঙ্গে আনানকেও যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

 

 


ঢাকা, ১৮ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ