Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ফিলিস্তিনি কিশোরী উইসেলের আত্মত্যাগের গোপন কথা

প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৮, ২৩:৪৭

ইন্টারন্যাশনাল লাইভ: পৃথিবীর মানচিত্রে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ বহু পুরাতন এটি নাম। ফিলিস্তিনের ভূখন্ড একটু একটু করে দখল নিতে শুরু করেছে ইয়াহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল। মুসলিমদের উপর প্রতিনিয়তই অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আজ আর সহ্য করতে পারছেনা ফিলিস্তিনি কিশোরী উইসেল শেখ খালিল।

খুবই প্রাণচঞ্চল একটি মেয়ে। গাজার রাস্তায় রাস্তায় বেড়ে উঠেছে যার জীবন। খেলাধুলা আর পড়াশুনার প্রতি যার আগ্রহের কমতি নেই। ভালো ছবিও আঁকা ছিল যার আকাশছুয়া ক্ল্পনা। নাচেও একেবারেই পিছনে ফেলার মতো কেউ ছিলনা তার সামনে। ভালো ছবিও আঁকা থেকে শুরু করে সকল কিছুতেই মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে এই কিশুরী উইসেল শেখ খালিল।

সেই শান্ত কিশোরীই হঠাৎ করে ক্ষোভে জ্বলে উঠেছে দেশ মাতৃকার ভালোবাসায়। পরিবারের সদস্যরা অনেক বোঝিয়েও মানাতে পাড়লো না তাকে। সীমান্তে গেলেই ইসরাইলি সেনারা গুলি করে মেরে ফেলবে নিশ্চিত, তবু পিছু হটবেনা কিছুতেই।

পরিবারের কারো নিষেধ না শোনে ১৪ বছরের এ কিশোরী যাত্রা শুরু করে সীমান্তের দিকে। সাথে নেয় ১১ বছরের ছোট ভাইকে। তার একমাত্র লক্ষ যেভাবেই হোক ইসরাইলিদের হাত হতে রক্ষা করতে হবে ফিলিস্তিনকে। এই কিশুরীর আত্মবিশ্বাস আর আত্ম-উদ্দীপ্ততা দেখে বিশ্ব আজ স্তম্ভিত ও ব্যথিত হয়ে পড়েছে। ভারি ভারি অস্ত্র আর গুলা বারুদের কাছে কিভাবে জয় লাভ করবে এই কিশুরীর সাহসীকতা। এটাই এখন সময়ে চির সত্য বাস্তবতা। যা ইসরাইলি সেনাদের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস উপেক্ষা করেই চলছে স্বধীনতার সংগ্রাম।

ছোট ভাইয়ের সঙ্গে উইসেল শেখ খালিল-গার্ডিয়ান

 

প্রথম দিকে সে বিক্ষোভকারীদের পানির বোতল এগিয়ে দিতো। কিন্তু যখন ইসরাইলি সেনারা দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দিলো তখন ক্ষিপ্ত হয়ে যায় ওই ফিলিস্তিনি কিশোরী উইসেল শেখ খালিল। একে একে সীমান্তবর্তী স্থানে হাজির হয় সে। তার মাতৃভূমি ফিলিস্তিনকে দখল করে গড়ে তোলা ইসরাইলের কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলতে চেষ্টা করে সে।

একপর্যায়ে ইসরাইলি সেনাদের স্নাইপার রাইফেলের নিশানায় পরিণত হয় ওই কিশোরী। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে উইসেল। কি অপরাধ ছিল আমার বোনের। এমন প্রশ্ন লাক্ষ লাক্ষ মুসলিম যুবকের। বুকের তাজা রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো ফিলিস্তিনের মাটিতে।

গত ৩০ মার্চ থেকে ইসরাইলের দখল করে নেয়া ঘরবাড়িতে ফিরতে ফিলিস্তিনিদের পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচির প্রথম দিনেই একের পর এক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে ইসরাইল। তখন ১৮ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হন। তবে উইসেল শুরু থেকেই এ কর্মসূচিতে যেতে রাজি ছিল না। কিন্তু গত ১৪ মে ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব থেকে পবিত্র জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তরের দিন উইসেল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিক্ষোভে যোগ দিতে গিয়ে তারা সীমান্তে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ভেতর গিয়ে ইসরাইলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। তখনই ইসরাইলি স্নাইপারের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে উইসেল। এ ঘটনায় তার পুরো পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু সান্ত্বনাও খোঁজেন না তারা। কারণ তাদের মেয়ে নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়েছিল।

উইসেলে ছবির আঁকার খাতা বের করে তার মা বলেন, সে ছিল আমার পরানের পরান। রাজনীতিতে অনাগ্রহী তার মেয়েটা বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আগে তাকে বলে যায়, মা, আমি যদি মারা যাই, তবে আমাদের ছোট্ট কক্ষটিতে আমার ভাইবোনরা একটু আরামে থাকতে পারবে। তারা থাকতে একটু বেশি জায়গা পাবে।

এভবেই বেড়েই চলেছে ফিলিস্তিনিদের আত্মত্যাগের স্বর্গীয় ইতিহাস। লাক্ষ লাক্ষ শহীদের রক্তে রক্তে রঞ্জিত ফিলিস্তিনের রাজপথ। মহান আল্লাহর জমিনে একদিন মানবতার উন্মেষ ঘটবেই ঘটবে। মুজাহীদে মিল্লাত যখন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও পিছুপা হবেনা, যখন একই সুরে সুর মিলিয়ে জেগে উঠবে মুসলিম মিল্লাত তখনই আসবে কামিয়াব। জাগবেই, মুক্ত হবেই ফিলিস্তিন, এভাবেই বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা আবেগ অনুভুতি ব্যক্ত কর ছিলেন শহীদ ফিলিস্তিনি কিশোরী উইসেল শেখ খালিল। ফিলিস্তিনিদের সংঘবদ্ধ করতে তার এই চির সত্য বাণী হয়তো একদিন রক্ষা করবে ইসরাইলদের হাত হতে।

 

ঢাকা, ২২ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ