Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ফিদেল ক্যাস্ত্রোর জীবনাবসান

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বার ২০১৬, ১৯:৫৭

http://www.bangla.campuslive24.com/uploads/shares/Fedel-2016-11-26-13-56-43.jpg

ইন্টারন্যাশনাল লাইভ: কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো আর নেই। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তার ভাই রাউল ক্যাস্ত্রো বর্তমানের কিউবার প্রেসিডেন্ট। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রবাদ প্রতীম মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রো ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার হলগোইন প্রদেশর বিরানে জন্মগ্রহণ করেন।

ফিদেল কাস্ত্রোর সমর্থকরা বলেন তিনিই একমাত্র নেতা যিনি কিউবাকে তার জনগণের হাতে তুলে দিয়েছেন। আর তার বিরোধী বলেন, তিনি বর্বরোচিত ভাবে বিরোধী মত দমন করেছেন।

ক্ষমতা ছাড়ার পর ফিদেল ক্যাস্ত্রো গণমাধ্যমে তেমন আসতেন না। তাকে হঠাৎ হঠাৎ দেখা যেত। তাকে শেষ বার দেখা গেছে গত এপ্রিলে। কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে সেদিন তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন কিউবার কমিউনিস্ট তত্ত্ব বৈধ এবং এটি জনগণকে সব সময় বিজয় এনে দেবে।

১৯২৬ সালে কিউবার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের শহর ওরিয়েনেট প্রদেশে ফিদেল ক্যাস্ত্রো জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থান করতে গিয়ে কারাবন্দী হন। ১৯৫৫ সালে অ্যামেনিস্ট চুক্তির মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান। ১৯৫৬ সালে চে গুয়েভারার সঙ্গে মিলে সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি বাতিস্তা সরকারকে পরাজিত করেন এবং কিউবার ক্ষমতায় যান।


সারা বিশ্বে যখন কমিউনিস্ট সরকার গুলো ধসে পড়ছে ঠিক তখন কমিউনিস্ট ব্যবস্থার বৃহত্তম শত্রু বলে পরিচিত আমেরিকার দোরগোড়াতেই সমাজতন্ত্রের ধ্বজা তুলে ধরে রেখেছিলেন মি. কাস্ত্রো। তার সমর্থকেরা তাকে সমাজতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতেন, যিনি জনগণের কাছে কিউবাকে ফেরত দিয়েছিলেন।


১৯২৬ সালের ১৩ই অগাস্ট জন্ম হয় ফিদেল আলেহান্দ্রো কাস্ত্রো রুৎজের। স্পেন থেকে কিউবাতে আসা একজন ধনী কৃষক আনহেল মারিয়া বাউতিস্তা কাস্ত্রোর অবৈধ সন্তান ছিলেন তিনি। পিতার খামারের ভৃত্য ছিলেন মা লিনা রুৎজ গনজালেজ, যিনি পরবর্তীতে ছিলেন তার পিতার রক্ষিতা।

ফিদেলের জন্মের পর তার মাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন তার পিতা। সান্টিয়াগোর ক্যাথলিক স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফিদেলের। পরে তিনি যোগ দেন হাভানার কলেজ এল কলেজিও ডে বেলেন-এ। তবে খেলাধুলার দিকে বেশী মনযোগ থাকার কারণে পড়াশোনায় খুব ভাল করতে পারেননি তিনি। ১৯৪০-এর দশকে হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়বার সময়ে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

মার্ক্সবাদ: ১৯৪৮ সালে কিউবার ধনী এক রাজনীতিবিদের কন্যা মার্টা ডিয়াজ বালার্টকে বিয়ে করেন মি. কাস্ত্রো। এই বিয়ের মাধ্যমে দেশটির এলিট শ্রেণীতে যুক্ত হয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল তার, কিন্তু তার বদলে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলেন মার্ক্সবাদে।

তিনি বিশ্বাস করতেন কিউবার লাগামহীন পুঁজিবাদের কারণে দেশটির যাবতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার উদ্ভব এবং একমাত্র জনগণের বিপ্লবের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকানোর পর আইন পেশা শুরু করেন কিন্তু এই পেশায় তিনি সফল হতে ব্যর্থ হন।

তবে এই বিপ্লবীর কণ্ঠে মানুষ সর্বশেষ ভাষণ শুনেছেন চলতি বছরের এপ্রিলে, কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে। তারও আগস্টে জানুয়ারিতে রাজধানী হাভানায় একটি আর্ট স্টুডিওর উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠানে তাকে অংশ নিতে দেখা যায়।

এরপর ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন কাস্ত্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বলা হয়েছিল, বিপ্লবী ফিদেল আধ্যাত্মিকভাব সচেতন এবং শারীরিকভাবে অত্যন্ত সবল আছেন। সর্বশেষ গত গ্রীষ্মে ফিদেলের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সাক্ষাৎ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দু'বার বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী মির্তা দিয়াজ বালার্তের সঙ্গে ১৯৫৫ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এই দম্পতির একটি সন্তান ছিল। পরে তিনি ডালিয়া সোটো ডেল ভেলেকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির পাঁচ সন্তান রয়েছে।

ফিদেল হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ার সময় রাজনীতিতে যোগ দেন। শুরুতে কিউবার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফালজেন্সিও বাতিস্তা এবং কিউবার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে কলাম লিখতেন তিনি। ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে দ্রুতই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন ফিদেল কাস্ত্রো। পরে বাতিস্তা সরকার উৎখাতের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন তিনি।

এর অংশ হিসেবে ১৯৫৩ সালে মনকাডা ব্যারাকে আক্রমণ চালাতে গিয়ে ধরা পড়েন ফিদেল। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মেক্সিকোতে চলে যান। সেখান থেকে বাতিস্তার সরকার উৎখাতের জন্য বিখ্যাত '২৬ জুলাই আন্দোলন' খ্যাত সংগ্রাম সংগঠিত করেন।

মেক্সিকোতে অবস্থানকালে ১৯৫৫ সালে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত বিপ্লবী চে গুয়েভারার সঙ্গে পরিচয় হয় ফিদেল কাস্ত্রোর। দুই নেতার মধ্যে প্রথম সাক্ষাতেই কিউবা সংকট নিয়ে দীর্ঘ আলাপ হয়। এরপর চে ২৬ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালের ৫ নভেম্বর বাতিস্তা সরকার উৎখাতে ফিদেলের নেতৃত্বে মেক্সিকো থেকে অভিযান শুরু হয়। তারা কিউবা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাতিস্তার সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। এতে ফিদেলের ৮২ জন সহযোদ্ধা মারা যান এবং মাত্র ২২ জন প্রাণে বাঁচেন।

পরে তারা সিয়েরা মস্ত্রা পর্বতমালায় আশ্রয় নিয়ে পুনর্গঠিত হন। এরপর স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নিয়ে গেরিলাদের নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করে বিপ্লব সম্পন্ন করতে সক্ষম হন ফিদেল কাস্ত্রো।

বিপ্লবের পর কিউবার সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৬৫ সালে কাস্ত্রো কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নেতৃত্বে আসীন হন। এরপর কিউবাকে সমজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি রাষ্ট্র ও মন্ত্রিপরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। এ সময় তিনি কিউবার সর্বোচ্চ সামরিক পদ কমানডান্টে এন জেফে (কমান্ডার ইন চিফ) পদেও আসীন ছিলেন।

অসুস্থতা ও বয়সের কারণে প্রবীণ ফিদেল ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ছোট ভাই ‌ও কিউবান বিপ্লবের অন্যতম নায়ক রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।


২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সর্বশেষ লেখায় ফিদেল লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করার পরিকল্পনা থেকে সরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যার ফলে 'বৈশ্বিক বিপর্যয়' এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

ঢাকা, ২৬, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ