Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অনেকেই, কঠোরতার প্রয়োজন

কোভিড-১৯ রোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইন, নির্দেশনা

প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২০, ১৯:১৩

শান্তনা চৌধুরী: দুনিয়া জুড়ে কোভিড-১৯ এর ছোবল আর থাবা থেমে থেমে বাড়ছে। মৃত্যুর মিছিলে নাম লিখিয়েছেন লাখ লাখ বনি আদম। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের হার। এসব ঠেকাতে নির্দেশনা দিয়েই চলেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একের পর এক নির্দেশনা। এর জন্যে একটি গাইডলাইনও তৈরী করা হয়েছে। আবারো রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের অনুমোদনক্রমে ৬ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই নির্দেশনা এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। কোথায় মানছে আর কোথাও আবার মানছে না মানুষ। ফলে আক্রান্ত বাড়ছে দিনে দিনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নং আইন) এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১০ জুন এ নির্দেশনা জারি করা হয়। এসব নির্দেশনা সকলকে মেনে চলছে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

৬ দফা নির্দেশনা হলো-

১. মরণঘাতি এই করোনাভাইরাসের চলমান ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশের যেকোনো ছোট বা বড় এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রীন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। আর এর জন্যে একটি গাইড লাইন তৈরী করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ রিক্স জোন-বেইজড কোভিড-১৯ কনটেইনমেন্ট ইম্প্লেমেন্টেশন স্ট্র্যাটেজি। এই গাইড অনুসরণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

২. প্রাথমিকভাবে অবিলম্বে ৩টি জেলায় (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কী হবে তার প্রয়োজন অনুসারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। আর তা বস্তবায়নের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৩. বাংলাদেশ রিক্স জোন-বেইজড কোভিড-১৯ কনটেইনমেন্ট ইম্প্লেমেন্টেশন স্ট্র্যাটেজি বা গাইড অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদফথরে একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ গঠন করেছে। এ কমিটি সময়ে-অসময়ে জোনিং সিস্টেমের সঙ্গে পর্যালোচনা করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে পর্যালোচনা করে জোনিং সিস্টেমের সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করার পরামর্শ দেবে। পরিবর্তিত স্ট্র্যাটেজি/গাইড সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হবে। সব সময় হালনাগাদ স্ট্র্যাটেজি/গাইড অনুসরণ করে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪. আইনের ৩০ ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জনের কাছে জোনিং ঘোষণার ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।

৫.নতুন এলাকায় জোনিং সিস্টেম প্রস্তাব বা পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সিটি করপোরেশন পৌরসভা জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় কমিটি থাকবে। করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটিগুলো এই দায়িত্ব পালন করতে পারবে। কমিটির জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুযায়ী অব্যাহতভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত চাইবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপের মতামত সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

৬. বাস্তবায়নাধীন জোনিং এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচল/ছুটি/দায়িত্ব পালন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ,পরিদফতর, দফতর ও প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে বলে আদেশে বলা হয়। গাইড লাইনের কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো।

সচেতনতায় ভিন্ন মাত্রা:

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান জানান, রেড, ইয়েলো ও গ্রীন এই তিন ধরনের জোন চিহ্নিতকরণের কাজটি বিশেষজ্ঞরা করছেন। তারা এনিয়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন আইডিয়া কাজে লাগাচ্ছেন। তাদের গাইডলাইনের পরেই সরকার তা কার্যকর করবে।

জানা গেছে মরণঘাতি করোনা আক্রান্ত রেড জোনে কেউ গেলে বা করোনা পজেটিভ রোগীর কাছে গেলে মোবাইলে ‘পুশ অ্যালার্ম’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করতে যাচ্ছে সরকার। রেড বা ইয়েলো জোন বিষয়ে রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মসজিদ থেকেও সতর্কীকরণ বার্তা ও বিভিন্ন নির্দেশনা প্রচারের ব্যবস্থা থাকছে।

নিয়ম-কানুন:

সরকার মানুষের নানান সমস্যা নিয়েও ভাবছে। তাদের কি কি সমস্যা হতে পারে সে দিকেও রয়েছে নজর। একারণে রেড জোন এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহের জন্যে থাকবে হোম ডেলিভারি। রেড ও ইয়েলো জোনে বন্ধ থাকবে নামী-দামী শপিং সেন্টার। কিন্ত ইয়েলো ও গ্রীন জোনে মুদি ও ফার্মেসী চালুর ব্যবস্থাও থাকবে। তবে রেড জোনে বাস ও সাধারণ পরিবহন চলাচল করবে না। তবে রাতে মালবাহী যান চলবে বলেও ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে।

এদিকে ইয়োলো জোনে গাইডলাইন অনুযায়ী গণপরিবহন চলতে পারবে। একজন করে যাত্রী নিয়ে রিকশা ও অটোরিকশাও চলতে পারবে বলে জানাগেছে। মালবাহী যানও চলবে। আর গ্রীন এলাকায় তো অনেকটা স্বাভাবিক থাকবে। এছাড়া রেড জোনে ধর্মীয় ইবাদত খানায় সাধারণের প্রবেশে থাকবে নিষেধ। অন্যদিকে ইয়েলো ও গ্রান জোনে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করা যাবে ও ইবাদাত করা যাবে।

গাইড লাইনে আরো থাকবে রেড ও ইয়েলো জোনে অবাধ যাতায়াত বন্ধের জন্য সড়ক ও গলির মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। তাছাড়া এই সংক্রামন থেকে বাঁচতে পাড়া, মহল্লা ও চায়ের দোকানসহ আড্ডাস্থল বন্ধ থাকবে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে লকডাউন এলাকায় বস্তি বা খুবই গরীব থাকলে দুই সপ্তাহের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এই দায়িত্ব নিবে সংশ্লিস্ট কমিটি।

যেভাবে চলবে জোনের লোকজন:

সরকারের ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে, মেয়রের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা কমিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিহ্নিত করা এলাকাভিত্তিক জোন থেকে অগ্রাধিকার ও পারিপার্শ্বিক সক্ষমতা বিবেচনা করে জোন বাছাই করবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলারের নেতৃত্বে করা কমিটি লকডাউন বাস্তবায়ন করবে বলেও জানা গেছে।

সংশ্লিস্ট একাধিক সূত্রে জানাগেছে সরকারের এটুআই প্রকল্পের তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেড, ইয়েলো ও গ্রীন জোন চিহ্নিত করছে। রেড জোনে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। আর ইয়েলো জোনে অফিস, কারখানা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ-শিল্পে ৫০ শতাংশ কর্মী দিয়ে চালু রাখতে বলা হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানাকে জানাতে হবে। তবে এসব জোনে সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু:

এই আদালতের খুবই প্রয়োজন। কারণ মানুষ আইন মানতে চায় না। তাই কয়েকজনের শাস্তি হলে অনেকেই সতর্ক হয়ে যাবে। রেড ও ইয়োলে জোনে কোভিড-১৯ এ পজেটিভ ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর ভূমিকা পালন করবে। পুলিশের টহলও অব্যাহত থাকবে। গাইডলাইন ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেড ও ইয়েলো জোনে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া প্রয়োজনে লকডাউন এলাকায় করোনা রোগীদের সরকারআইসোলেশনের ব্যবস্থা করবে। যাতে টেলিফোনের মাধ্যমেও চিকিৎসা পরামর্শ পেতে পারেন, সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিটি রেড ও ইয়েলো জোনে একটি চিকিৎসক ‘পুল’ প্রস্তুত রাখবে। জানাগেছে চিকিৎসক পুলে মনোবিজ্ঞানী রাখার চেষ্টা চলবে। সরকারী এসব গাইডলাইন বাস্তবায়নের সকল পর্যায়ের জনগনকে অনুরোধ জানানো হবে। লকডাউন এলাকায় কোন রোগী মারা গেলে ‘আল মারকাজুল ইসলাম, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বা এই ধরনের কাজে নিয়োজিত সংস্থার মাধ্যমে দাফন বা সৎকার করা হবে। যে যার ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে।

ঢাকা, ১২ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ