Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শাহানার জীবনের একদিন

প্রকাশিত: ২৫ আগষ্ট ২০১৭, ১৮:২৩

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল : মা গাছে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। শাহানা নিচু হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, ‘এখন কেমন লাগছে মা?’ মা চোখ খুলে একটু অপরাধীর মতো হাসলেন, বললেন, ‘ভালো। হঠাৎ করে এতখানি পথ হেঁটে একটু হাঁপিয়ে গেছি। আর কিছু নয়।’
শাহানা অভিযোগের স্বরে বলল, ‘আমি এত করে বললাম তোমার আসার কোনো দরকার নেই, তুমি আমার কথা শুনলে না। আমাকে নিয়ে চলে এলে। এখন যদি শরীর খারাপ হয়?’

মা দুর্বলভাবে হাসলেন, বললেন, ‘তোর বাবা বেঁচে থাকলে তোকে নিয়ে আসত না? এখন আমি তোকে একা আসতে দিই কেমন করে?’

শাহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার বাবা গত বছর হঠাৎ করে দু’দিনের জ্বরে মারা গেছেন। ব্যাংকে একটা ছোট চাকরি করতেন, টেনেটুনে কোনোভাবে সংসার চলত। বাবা মারা যাওয়ার পর হঠাৎ করে মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। শাহানা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাটাও ভালো করে দিতে পারেনি। পরীক্ষার রেজাল্ট মোটামুটি হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে ভর্তিযুদ্ধ। ভর্তি পরীক্ষাকে সবাই তামাশা করে কেন ভর্তিযুদ্ধ বলত শাহানা আগে বুঝত না। ভর্তি পরীক্ষা দিতে শুরু করার পর সে এখন বুঝতে পারছে। আসলেই একটা যুদ্ধের মতো, তার মতো ছেলেমেয়েদের যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছে, তারা যুদ্ধে বেঁচে থাকবে কিনা তাতে কিছু আসে যায় না। শাহানার মতো ছেলেমেয়েরা যুদ্ধ করছে একা একা, এ দেশের কেউ তাদের পাশে নেই।
শাহানা চোখের কোণা দিয়ে একবার তার মায়ের হাতের দিকে তাকাল, খালি হাত দুটো দেখতে কেমন জানি লাগছে। তার ভর্তি পরীক্ষার খরচ জোগাড় করার জন্য সোনার চুড়ি দুটো বিক্রি করে দিয়েছেন। সে মাকে নিষেধ করেছিল, বলেছিল কাছাকাছি এক-দুটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবে, চান্স পেলে পাবে, না পেলে নাই। মা রাজি হননি, বলেছেন, ‘তোর বাবার খুব শখ ছিল তার মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। একটু চেষ্টা করি।’ সেজন্য শাহানা একটার পর আরেকটা ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়া অনেক খরচের ব্যাপার। সস্তা হোটেলে থাকতেও অনেক টাকা বের হয়ে যায়। খরচ বাঁচানোর জন্য স্টেশনেও একবার রাত কাটিয়েছে। এত কষ্ট করার পরও যদি কোনো একটা ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পায় তখন কী হবে? শাহানা জোর করে তার মাথা থেকে চিন্তা দূর করে দেয়।

ভোরবেলা মা আর মেয়ে এই ইউনিভার্সিটিতে এসেছে। ভেবেছিল ইউনিভার্সিটির কোনো বিল্ডিংয়ের একটা বাথরুম ব্যবহার করবে। হাত-মুখ একটু ধুয়ে নেবে। কিন্তু বিল্ডিংয়ের গেটের সামনে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে রাখা, গেটের সামনে একজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে, তাদের ঢুকতে দেয়নি। তাই মা আর মেয়ে এই গাছের তলায় বসে আছে।

আস্তে আস্তে আরও ছেলেমেয়েরা আসতে শুরু করেছে। সঙ্গে তাদের বাবা-মা। সামনের খালি মাঠটাতে গাড়ি এসে পার্ক করছে। বড়লোকের ছেলেমেয়েরা সেসব গাড়ি থেকে নামছে; তাদের হাসিখুশি ভাবভঙ্গি বাবা-মায়ের সুখী সুখী চেহারা। শাহানা তাদের দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

একজন ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। মা তার কাছ থেকে ঝাল মুড়ি কিনলেন। মা আর মেয়ে সেই ঝালমুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে নিল। শাহানা তার হাতের বইটা খুলে একটু পড়ার চেষ্টা করল। পড়ে কী হবে? ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো আসে গাইডবই থেকে- গাইডবই পড়ার ইচ্ছা করে না।

এক সময় বিল্ডিংগুলোর গেট খুলে দেয়া হল। ছেলেমেয়েরা গেটের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল, গেট খুলে দিতেই সবাই হুড়মুড় করে ঢুকতে থাকে, মনে হয় একটু দেরি করলেই বুঝি আর তাদের পরীক্ষা দিতে দেবে না। এক-দুইজন অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়ের সঙ্গে ভেতরে ঢুকতে চাইছিল, গেটের দারোয়ান তাদের আটকে দিল। শাহানা ভিড়ের মাঝে মিশে গিয়ে বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে যায়। অ্যাডমিট কার্ডের উল্টো পিঠে ক্লাস রুমের নম্বর লেখা আছে, সেটি দেখে শাহানা রুমটা খুঁজে বের করল। ভেতরে ছেলেমেয়েরা ডেস্কের ওপর রোল নম্বর দেখে নিজেদের সিট খুঁজে বের করে বসে পড়ছে।

শাহানা নিজেও তার সিটটা খুঁজে বের করে সেখানে বসে পড়ল। ঘরের শেষ মাথায় দেয়ালের কাছে নিরানন্দ একটা ডেস্ক। শাহানা সেখানে বসে চারদিকে তাকাল, ইউনিভার্সিটি শুনলেই তার চোখের সামনে আলোকোজ্জ্বল ঝকঝকে আনন্দময় একটা দৃশ্য ফুটে উঠত, অথচ কী আশ্চর্য, সে দেখছে কেমন যেন মলিন একেকটি ক্লাসরুম। ময়লা মেঝে, দেয়ালের কোনায় কোনায় মাকড়সার জাল। শাহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝে সে তার চার নম্বর ভর্তি পরীক্ষা দেবে। এটি হচ্ছে গ ইউনিটের পরীক্ষা। বিকালে হবে ঘ ইউনিটের পরীক্ষা। ঘ ইউনিটের পরীক্ষার সেন্টার এখানকার একটা কলেজে, কলেজটা কোথায় কে জানে? খুঁজে বের করতে পারবে তো? পরীক্ষা থেকে বের হয়েই তাদের ছুটতে হবে বাস স্টেশনে।

রাতের বাসে সারা রাত জার্নি করে তারা পৌঁছাবে দেশের আরেক মাথায়, সেখানে শাহানা আরও একটা ভর্তি পরীক্ষা দেবে। দুটো ইউনিভার্সিটিতে একই দিনে ভর্তি পরীক্ষা, তাকে একটা বেছে নিতে হয়েছে। শাহানা বুঝতে পারে না একই দিনে দুটো ইউনিভার্সিটিতে কেমন করে ভর্তি পরীক্ষা হয়। ছেলেমেয়েরা তাহলে কেমন করে দুটোতে পরীক্ষা দেবে? ইউনিভার্সিটিতে এত জ্ঞানীগুণী প্রফেসর থাকেন, তারা এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না সেটি কেমন করে হতে পারে?

শাহানা জোর করে তার মাথা থেকে চিন্তাটা দূর করে দিল। মাথা ঠাণ্ডা রেখে তার আজকের পরীক্ষাটা দিতে হবে। তার বাবার খুব শখ ছিল যেন শাহানা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারে। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে তার পড়ার ক্ষমতা নেই, কোনোভাবে যদি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারে তাহলে দুই-একটা টিউশনি করে সে কোনোভাবে হয়তো পড়ার খরচটা চালিয়ে নিতে পারবে। তার বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারবে। শাহানা চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকে।

২.
বাসস্টেশনে মা আর মেয়ে নিঃশব্দে বসে আছে। আটটার সময় বাস ছাড়বে, বাসটি এখনও আসেনি। ভালো এসি বাস আছে কিন্তু তার অনেক ভাড়া। একরাতের জন্য এতগুলো টাকা নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না।
আজকে সে দুটো ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছে। মাকে বলেনি কিন্তু পরীক্ষা ভালো হয়নি। রাজ্যের আজেবাজে প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা, উত্তরগুলো মুখস্থ করে আসতে হয়, কে এত মুখস্থ করবে? এ পরীক্ষায় যারা ভালো করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে তারা কি আসলেই ভালো ছাত্রছাত্রী? শাহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কালকের ভর্তি পরীক্ষাটা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুনেছে এখানে প্রশ্নগুলো নাকি তুলামূলকভাবে ভালো হয়, মাথা খাটিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। যেখানে মাথা খাটাতে হয় সেখানে শাহানা ভালো করে।

বাস স্টেশনের সামনে একটা বাস এসে দাঁড়াল। এটা তাদের বাস। মা’কে নিয়ে শাহানা বাসের দিকে এগিয়ে যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর মা অনেক কাহিল হয়ে গেছেন। পরপর বাসে করে এক শহর থেকে আরেক শহরে ছোটাছুটি করতে গিয়ে আরও কাহিল হয়ে গেছেন। শাহানা নিজেও খুব ক্লান্ত হয়ে আছে কিন্তু মাকে সেটি বুঝতে দিচ্ছে না, মা তাহলে দুশ্চিন্তা করবে।

বাসের মাঝামাঝি পাশাপাশি দুটো সিটে মা আর মেয়ে বসে পড়ল। মা বললেন, ‘শাহানা তুই আমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়িস। পরীক্ষার আগের রাতে ভালো করে ঘুমাতে হয়।’
শাহানা হাসার চেষ্টা করল, বলল, ‘মা তোমার ধারণা এই বাসে সত্যি ঘুমানো সম্ভব?’

মা বললেন, ‘দরকার হলে সব করতে হয়।’ শাহানা আর কথা বাড়াল না, বলল, ‘ঠিক আছে মা, যদি ঘুম পায় আমি তোমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাব।’
বাস ছাড়তে বেশ দেরি করল। শাহানা মনে মনে একটা দুর্ভাবনায় পড়ে যায় যদি বাসটা সময়মতো পৌঁছাতে না পারে তাহলে কী হবে? সে জোর করে মাথা থেকে দুর্ভাবনাটা সরিয়ে দেয়, খুব ভোরে পৌঁছে যাওয়ার কথা, একটু দেরি হলে তাতে যথেষ্ট সময় থাকবে।
বাসটা শহরের ট্রাফিক জ্যামের ভেতর দিয়ে চলতে চলতে এবং থামতে থামতে এগোতে লাগল। শেষ পর্যন্ত শহরের ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে বাসটা হাইওয়েতে উঠে যায়। শাহানা তখন একটু নিশ্চিত হল। রাতের অন্ধকারে বাসটা ছুটতে থাকে, উল্টো দিক থেকে দৈত্যের মতো বাস ট্রাক আসছে, তাদের হেডলাইটের তীব্র আলোতে চোখ ঝলসে উঠছে, তার মাঝে তাদের বাস ড্রাইভার রীতিমতো পাগলের মতো বাস চালিয়ে নেয়, মাঝে মাঝেই বাসটা বাম দিকে আবার ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে, বাসের ভেতর প্যাসেঞ্জাররাও একবার ডান দিকে আবার বাম দিকে কাত হয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেরকম অবস্থাতেই মা ফিসফিস করে শাহানাকে বললেন, ‘মা, তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।’
শাহানা বলল, ‘করছি মা।’ তারপর সে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করল। সে ভেবেছিল তার চোখে বুঝি ঘুম আসবেই না, কিন্তু বাসের ঝাঁকুনি এবং ডানে বামে কাত হয়ে যেতে যেতে এক সময় সত্যি সত্যি সে ঘুমিয়ে পড়ল।
তবে ঘুমটা হল ছাড়া ছাড়া, বাসটা যখনই থামছিল তখনই তার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। বাসটা আবার যখন চলতে শুরু করে তখন আবার সে ছাড়াছাড়াভাবে একটুখানি ঘুমিয়ে পড়ে। আধা ঘুম আধা জাগা অবস্থায় সে বাস ড্রাইভারের গলায় স্বর, হেল্পারের চেঁচামেচি, প্যাসেঞ্জারদের ঝগড়ার শব্দ শুনতে পায়। এক সময় মনে হল বাসটা বুঝি অনেকক্ষণ থেকে থেমে আছে। শাহানা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বাস থেকে অনেক প্যাসেঞ্জার নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। শাহানা ভয় পাওয়া গলায় মাকে জিজ্ঞেস করল ‘কী হয়েছে মা?’
মা বললেন, ‘বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে বাসটা নষ্ট
হয়ে গেছে।’
শাহানা রীতিমতো আর্তনাদ করে উঠল, বলল, ‘নষ্ট হয়ে গেছে? এখন কী হবে?’
মা কোনো উত্তর দিলেন না। কী উত্তর দেবেন বুঝতে পারলেন না। শাহানা জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করল। প্যাসেঞ্জারদের কথা শুনে বুঝতে পারল, আরেকটা বাস এসে তাদের নিয়ে যাবে। ততক্ষণ তাদের অপেক্ষা করতে হবে। শুধু তাই না, জায়গাটা নাকি ভালো নয়। মাত্র কয়দিন আগে এখানে নাকি বাস থামিয়ে ডাকাতি হয়েছে।
দুশ্চিন্তায় শাহানার শরীর খারাপ হয়ে যায়। যদি সময়মতো পৌঁছাতে না পারে তাহলে কী হবে?

৩.
শাহানা সময়মতো পৌঁছাতে পারল না, তিন ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল। পরীক্ষা শুরু হতে আধা ঘণ্টা বাকি। এর মাঝে তারা অনেক কষ্টে একটা সিএনজিকে রাজি করিয়ে সেটি নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে এসেছে। সিএনজি থেকে নেমে সে যখন তার পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে পৌঁছেছে ততক্ষণে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। কেন্দ্রের দরজায় ভারী কলাপসিবল গেটটা টেনে রাখা আছে। সেখানে একজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। শাহানা ছুটতে ছুটতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘গেটটা খুলেন, আমি ঢুকব।’
দারোয়ান নিরাসক্ত গলায় বলল, ‘পনেরো মিনিট আগে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এখন ঢোকা যাবে না।’
শাহানা কাতর গলায় বলল, ‘প্লিজ! আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। আমাদের বাস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেজন্য আসতে দেরি হয়েছে। প্লিজ গেটটা খুলেন, আমাকে ঢুকতে দেন।’
দারোয়ান মাথা নাড়ল, বলল, ‘উহু। এখন আর ঢুকতে দেয়া যাবে না। নিয়ম নাই।’
শাহানা চোখের পানি আটকে রেখে বলল, ‘প্লিজ। প্লিজ আমাকে ঢুকতে দেন।’
দারোয়ান রাজি হল না, উল্টো ধমক দিয়ে বলল, ‘এখানে গোলমাল করো না। যাও।’
ঠিক তখন গেটের সামনে একটা গাড়ি এসে থামল এবং গাড়ির ভেতর থেকে স্যুট-টাই পরা একজন মানুষ নামল। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন।
দারোয়ান ব্যস্ত হয়ে শাহানাকে বলল, ‘সর সর সামনে থেকে। ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এসেছেন।’
দারোয়ান গেট খুলে দিল এবং তখন স্যুট-টাই পরা তেলতেলে চেহারার একজন মানুষ এগিয়ে এলো। মানুষটার মাথার চুল মাঝখানে সিঁথি করে দুই দিকে ভাগ করে রাখা, পকেট থেকে সবুজ রঙের একটা চিরুনি বের করে মানুষটা তার চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে হেঁটে হেঁটে আসতে থাকে। তার পেছনে পেছনে আরও কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসে।
শাহানা তখন ছুটে স্যুট-টাই পরা মানুষটার কাছে এগিয়ে যায়, কাতর গলায় বলে, ‘প্লিজ আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেন। পরীক্ষা দিতে দেন।’ তেলতেলে চেহারার ভাইস চ্যান্সেলর বলল, ‘ননসেন্স। যত্তসব যন্ত্রণা। সরে যাও এখান থেকে। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে জান না? সময়মতো আসতে পার না?’
শাহানাকে ঠেলে সরিয়ে ভাইস চ্যান্সেলর এগিয়ে গেল। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ভাইস চ্যান্সেলরের মুখটা আবার হাসি হাসি হয়ে উঠল। ভর্তি পরীক্ষায় তার কোনো কাজ নেই, কোনো দায়িত্ব নেই। তিনি শুধু পরীক্ষার হলগুলো ঘুরে দেখেন। এজন্য তাকে আশি হাজার টাকা দেয়া হয়!
শাহানার কী হল কে জানে, সে হঠাৎ ছুটে এসে ভাইস চ্যান্সেলরের সামনে দাঁড়াল। অবরুদ্ধ অশ্রু আটকে রেখে চিৎকার করে বলল, ‘না, না, না। আপনারা আমার জীবনটা নষ্ট করতে পারেন না- পারেন না।’ দারোয়ান ছুটে এসে শাহানাকে ধরে টেনে সরিয়ে নিল।

৪.
এটা একটা কাল্পনিক গল্প। কিন্তু এ রকম ঘটনা অসংখ্যবার ঘটছে। বাংলাদেশের অসংখ্য পাবলিক ইউনিভার্সিটির গুরুত্বপূর্ণ ভাইস চ্যান্সেলর আর প্রফেসররা কি জানেন এ দেশের হাজার হাজার শাহানা তাদেরকে তাদের সর্বগ্রাসী লোভের জন্য অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে? মাননীয় রাষ্ট্রপতির অনুরোধ রক্ষা করে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেয়া কি এতই অগ্রহণযোগ্য একটা প্রস্তাব?


ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল
লেখক ও প্রফেসর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট


ঢাকা, ২৫ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ