কেয়া চৌধুরী: বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্ভীক, আপসহীন, আন্দোলন সংগ্রামে, গ্রেপ্তারের ভয়ে কোনোদিন আত্মগোপন করেননি। সাংবিধানিক পথরেখায়- স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু যে ইতিহাস রচনা করেছেন, তা তাকে বিশ্বের সেরা নেতার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে।
নেতৃত্বের কঠিনতর সময়ে, বঙ্গবন্ধুর সঠিক সিদ্ধান্ত আর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আজকের-স্বাধীন বাংলাদেশ। এই লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধু বিনিয়োগ করেছেন, তার গোটা জীবনের বৃহৎ অংশ। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বঞ্চনার দেয়াল ভেঙে, বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছেন, তার ঐতিহাসিক ৬ দফা। ৬ দফা আন্দোলেন শুরু করলে, পাকিস্তানি শাসসকরা ভয়কভীতি দেখিয়ে নিষ্ক্রিয় করতে চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধুকে। কারাগারে পাঠিয়ে, জুলুম করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলার মুক্তির সনদ ৬ দফাকে ‘এক দফা’ অর্থাৎ স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্রের ঘোষণায় বলেছেন, ‘৬ দফার কোনো কাট-ছাঁট নয়, প্রয়োজনে ‘এক দফা’ আর এই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাঙালি অর্জন করেছ, ‘মহান স্বাধীনতা’।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শুনতে, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে যেভাবে ছুটে এসেছিল ‘লোহার শ্রমিক’ লাঙ্গল-জোঁয়াল কাঁদে ঝাঁক বেঁধে আসা ‘শ্রমিক’। ঠিক এভাবেই, বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে আপসহীন নিরস্ত্র জনতা; স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠেছিলো।
স্লোগানে-স্লোগানে আকাশ কাঁপিয়ে রণধ্বনী হয়ে উঠেছিলো ‘জয়বাংলা’-‘জয়বঙ্গবন্ধ’ু। বঙ্গবন্ধুর নাম ধরে, দেশপ্রেমীরা দলে-দলে যুদ্ধের মাঠে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছে। বাংলার কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষক-রাজনৈতিক যুদ্ধের মাঠে পাকিস্তানি ঘাতকদের ঘায়েল করেছে, যুদ্ধের মাঠে শহীদ হয়েছে, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেতনার শক্তিতে উচ্চারণ করেছে, ‘জয়-বাংলা’ ‘জয়-বঙ্গবন্ধ’ু।
বিশ্ব ইতিহাসে এমন নজির মেলা ভার- যেখানে ব্যক্তি ‘শেখ মুজিব’ থেকে ‘জাতির পিতা শেখ মুজিব’ স্বাধীনতার চেতনার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ‘নির্দলীয় ইতিহাস’ বইটি’তে লেখক ও ইতিহাসবিদ গোলাম মুর্শেদ যথার্থই লিখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু কখনও বিপ্লবী নেতা ছিলেন না। স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন নির্ভীক আপসহীন। যে কারণে আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু কখনো গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে যান নাই।
যে বঙ্গবন্ধুর নাম ধরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হলো, সেই বঙ্গবন্ধুর নাম ধরেই শুরু হয়েছিল; সদ্যস্বাধীন বাংলায় ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কঠিনতর কাজ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, স্বাধীনতা অর্জনের পর, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই মাত্র নয় মাসের মধ্যে প্রণীত হলো বাংলার মানুষের অধিকার রক্ষায়; পবিত্র সংবিধান। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের মতো মৌলিক সমস্যা সমাধান, কর্মের অধিকার, জীবনমান উন্নয়নই ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য।
মানবিকতার উচ্চতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন হিমালয়সম। ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, দেখেছি বঙ্গবন্ধুকে’। ফিদেল কাস্ত্রো, উচ্চ দেহবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেননি, তুলনা করেছিলেন, মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন এক উচ্চমানের নেতার। বাংলাদেশকে নিয়ে যার স্বপ্ন ছিলো আকাশের মতো বিশাল। এতো বড় স্বপ্ন দেখার সাহস, বঙ্গবন্ধু ছাড়া ক’জন বিশ্বনেতার জীবন ইতিহাসে পাওয়া যায়?
এখনও গ্রামে-গঞ্জে গেলে, বঙ্গবন্ধুর নামে- কথা শুরু হলে, প্রবীণদের কণ্ঠে তেজোদীপ্ত সুর চলে আসে। সবাই, কথা শেষ করেন, একটি কঠিন প্রশ্ন রেখে। ঐ খুনিরা কীভাবে পারলো? হত্যা করতে বঙ্গবন্ধুকে?
সত্যিই তো কীভাবে পারলো বঙ্গবন্ধু’কে হত্যা করতে।
সংসদ সদস্য ও সমাজকর্মী
kchowdhury71@gmail.com
ঢাকা, ১৫ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: