Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

'সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রার্থনা'

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২৩, ২২:২৫

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে। সরকার চায় বর্তমান কাঠামোর মাধ্যমেই নির্বাচন পরিচালনা। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। আর এ আলোচনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্রাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিবরি বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল, যুবসমাজ ও পুলিশসহ সকলের। নির্বাচনের সময় যতো কাছাকাছি আসছে ঘটছে নানা ঘটনা। সরকারের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা। এদিকে নির্বাচন কমিশন ২৩ শে মার্চ বিএনপিকে মতবিনিময় করতে চিঠি পাঠিয়েছে। এ নিয়ে রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা ২২ শে মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অনিয়ম হলে সংসদ নির্বাচনও বাতিল করে দেয়া হবে।

২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোট নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। তবে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে রয়েছে নানা সমালোচনা। ২০২২ সালের ১৪ই নভেম্বর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোন দেশে এমন দৃষ্টতার কথা শুনিনি। একাদশ ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে দেশে-বিদেশে। ওই নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের ১৫৪টিতেই শাসকদল আওয়ামী লীগের এবং মহাজোটভুক্ত অন্যান্য দলের ১৫৪ জন এমপি বিনা ভোটে নির্বাচি হন।

তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলকভাবে করতে পারবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেয় যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। এ নিয়ে নানা সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয় কমিশনকে। তবে ৮ই জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গণমাধ্যমকে জানান জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ইভিএমের নতুন প্রকল্প পাশ না হলে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে হবে। ২৩ শে জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম ১৫০ আসনের জন্য প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানান সাংবাদিকদের।

ভোটগ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা রয়েছে তেমনি বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়েই রয়েছে বিরোধীতা। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক জোট বলে আসছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। তারা চাচ্ছে অতীতের ন্যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। অন্যদিকে সরকার বা আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নাকচ করে দিয়েছে। এদিকে ২২ শে মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানকার আলোচনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তারা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংকিধান ও আইনের অধীন হইবেন। তবে নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক স্বাধীনতা বাস্তবে কতটা প্রয়োগ করতে পারে তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। এ সংশয়ের পেছনে রয়েছে নানা যৌক্তিক কারণ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপ-নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া (সদর) দুই আসনের উপনির্বাচনে হেরে গিয়েও আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। নির্বাচনে হেরে গিয়ে হিরো আলম নির্বাচনের ফল কারচুপি বা পাল্টানোর অভিযোগ করেছেন। তাকে নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। ইতিমধ্যে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে তার সঙ্গে নির্বাচনে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।

আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নির্বাচন কমিশনকে বাস্তবে স্বাধীন ও স্বচ্ছ হতে হবে। এজন্য দরকার সার্বিক সহযোগিতা। এ সহযোগিতা আসতে হবে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো থেকে। সেইসাথে নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে পবিত্রভাবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক। নির্বাচন কমিশনকে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ’আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দিব’ এ শ্লোগানকে বাস্তবায়িত করতে হবে। ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার জন্য দেশবাসী ও ভোটারদের প্রার্থনায় থাকতে হবে। শেষ করি বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুঃসময়’ কবিতার দু’টি লাইন দিয়ে ‘ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,/এখনি অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা’।

লেখক পরিচিতি: ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, অনারেবল সোসাইটি অব লিঙ্কন’স ইন ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং মানবাধিকার আইনজীবী।

ঢাকা, ০৩ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজডে


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ