Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

পদ্মা সেতু বাঙালির সক্ষমতার প্রতীক

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২২, ২০:৫৮

পদ্মা সেতু বাঙালির সক্ষমতার প্রতীক

ড. লুৎফুল হাসান: দেশের মধ্যভাগ ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে বড় বাধা ছিল পদ্মা পারাপার। যানবাহন পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল ফেরি। মানুষ পারাপারের মাধ্যম লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট অথবা নৌকা। বর্ষায় পদ্মা যখন ভয়ংকর রূপ নেয়, তখন ছোট নৌযানে নদীটি পাড়ি দেওয়া অনেকটা প্রাণ হাতে নেওয়ার মতো। তাইত আবদুল লতিফের লেখা ও সুর করা এবং আবদুল আলীম এর গাওয়া 'সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই –– কূল কিনারা নাই...' পল্লীগীতীতে ফুটে উঠেছে প্রমত্ত পদ্মা নদীর বিশালত্ব ও ভয়ংকর রূপ।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন 'স্বাধীনতা অর্থহীন যদি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব না হয়।" অল্প সময়েই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে, সদ্য স্বাধীন দেশে যুদ্ধ ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন উন্নয়নের যাত্রা। স্বল্প সময়েই তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ অনেক স্থাপনা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করা। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। '৭৫-এর পরে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলতে থাকে, সেই সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধেরপক্ষের সকল শক্তিকে সংগঠিত করে আবার মুক্তিযুদ্ধের ধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাবার জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন ।

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যার একটি অনন্য, অসামান্য, সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ হলো নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রমত্তা পদ্মা, কীর্তিনাশা পদ্মার উপর সেতুর স্বপ্ন দেখেছেন দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার মানুষকে এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষা করা সহ দেশের মানুষের যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে। তিনিই প্রথম জনগণের মধ্যে পদ্মা সেতুর আকাঙ্খা জাগ্রত করেছিলেন। আজ তিনিই পদ্মা সেতু তৈরি করে মানুষের স্বপ্নকে পূরণ করলেন। পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় উপহার, শ্রেষ্ঠ উপহার। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে কৃতজ্ঞ।

আজ ২৫ জুন ২০২২, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন। এটি পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা মুক্ত হয়। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রান্সের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার যা বিশ্বের অন্যতম একটি সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যএ সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে আলোকিত পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য সকলকে মুগ্ধ করেছে। এ সেতুর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষের সাথে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। কোটি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হবে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করবে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারের সঙ্গে এ দেশের সড়ক ও রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত আর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকারের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। প্রকৌশলগত এক বিস্ময়ের প্রতীক। পদ্মা সেতুর ফলে জাতির আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়েছে। সে কারনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি এ সেতু সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

তাই পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের অনন্য গৌরব, মর্যাদা আর অহংকারের প্রতীক। দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের অনবদ্য উপাখ্যান। এ সেতুর প্রতিটি পরতে পরতে বিঘ্নিত জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি শেষ হাসিনার প্রত্যয় আর দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। গোটা জাতির সাথে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারও প্রস্তুত হচ্ছে এ ইতিহাসের সাক্ষী হতে, এক অনন্য গৌরবের অংশীদার হতে। পদ্মা সেতু নামক এ গৌরবময় অধ্যায়ের রচয়িতা জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের সততা, দেশপ্রেম, দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার সাক্ষী হয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে শত বছর দাঁড়িয়ে থাকবে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। জয় বাংলা ভায় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক: ড. লুৎফুল হাসান
ভাইস চ্যান্সেলর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ।

ঢাকা, ২৫ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ