Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক গণিত দিবস (আইডিএম)

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২২, ০৫:৫০

অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম: রহস্যময় সংখ্যা পাই (π)-এর ইতিহাস সুপ্রাচীন। এই সংখ্যার উদ্ভব ঘটে প্রায় ৪০০০ বছর আগে। ১৭০৬ সালে ওয়েলেশ গণিতবিদ উইলিয়াম জোনস সর্বপ্রথম গ্রীক অক্ষর পাই ব্যবহার করেন। এরপর ১৭৩৭ সালে সুইস গণিতবিদ এবং পদার্থবিদ লিওনহার্ড অয়লার এই সংখ্যাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। তখন থেকে প্রকৌশলী, পদার্থবিদ, স্থপতি, ডিজাইনার থেকে শুরু করে অনেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাই ব্যবহার করে আসছেন। প্রাচীন সভ্যতার, মূলত মিশরীয় এবং ব্যাবলিনীয়দের হাতে কলমে গননার জন্য π (পাই) এর মোটামুটি সঠিক অনুমানের প্রয়োজন ছিল।

আনুমানিক ২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস পাই এর আনুমানিক মান নিভর্‚লতার সাথে বের করার জন্য একটি অ্যালগরিদম তৈরী করেছিলেন, খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী চীনা গণিতবিদগণ পাই এর মান সাত ডিজিট পর্যন্ত অনুমান করতে সক্ষম হন, যেখানে ভারতীয় গণিতবিদগণ পাঁচটি ডিজিট পর্যন্ত বের করেন। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষই জ্যামিতিক কৌশল অবলম্বন করেন।

১৭৬১ সালে জোহান ল্যামবাট (১৭২৮-৭৭) প্রমাণ করেন যে, পাই একটি অমূলক সংখ্যা এবং পরবর্তীতে ১৮৮২ সালে ফার্ডিনান্ড লিন্ডেম্যান (১৮৫২-১৯৩৯) দেখান যে, পাই একটি অবীজগাণিতিক অমূলক সংখ্যা। ইউলিয়াম জন্স (১৬৭৫ - ১৭৪৯) π (পাই) এর আনুমানিক মান বের করা ছাড়াও দেশের অন্যতম বিশাল বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাগার এবং গাণিতিক সংরক্ষনাগার নির্মাণ করেছিলেন, যা প্রায় ৩০০ বছর ধরে ম্যাকলফিল্ড পরিবার ও তার পৃষ্ঠপোষকদের হাতে ছিল।

পদার্থবিদ ল্যারি শ ১৯৮৮ সালের ১৪ ই মার্চকে পাই দিবস হিসেবে মনোনীত করেন। কারণ, ৩.১৪ সংখ্যাটি পাই-এর প্রথম তিনটি অংকের সমান। বিশেষ এই দিনটি আবার আলবার্ট আইনস্টাইনেরও জন্মদিন। ২০০৯ সালে শ-এর কর্মস্থল সান ফ্রান্সিসকো ভিত্তিক বিজ্ঞান যাদুঘরে সর্বপ্রথম পাই দিবস উদযাপিত হয়। মার্কিন জাতীয় প্রতিনিধি পরিষদে আইন পাস করার প্রেক্ষিতে এই দিনটি সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়।

গণিতবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষকগণ আশা করেন, এই ছুটি বিশ্বব্যাপী গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ অবদান রাখবে। কম্পিউটার আবিষ্কারের আগে ডি এফ ফার্গুসন ১৯৪৪ সালে পাই-এর মান সবচেয়ে নির্ভুলভাবে গণনা করেন। তিনি পাই-এর মান ৬২০ ঘর পর্যন্ত বের করতে সমর্থ হন। আজ অবধি পাই-এর মান ১ ট্রিলিয়নেরও বেশি ঘর পর্যন্ত গণনা করা হয়েছে এবং গণিতবিদরা সেখানেই থেমে থাকতে চান না।

২ ‘‘গণিত আমাদের জীবনকে সহজ করে তোলে, কারণ সব কিছুতেই রয়েছে গণিত।” আফ্রিকান গণিত ইউনিয়নের সভাপতি অধ্যাপক আডেওয়াল সোলারিন। ‘‘বিশ্বকে পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রই হচেছ শিক্ষা” - নেলসন ম্যান্ডেলা। আন্তর্জাতিক গণিত ইউনিয়ন (আইএমইউ) একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী এবং অলাভজনক বৈজ্ঞানিক সংস্থা যাহা ১৯২০ সনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার প্রধান লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী গণিতের প্রচার ও প্রসার ঘটানো। ২০১৭ সনে বাংলাদেশ এর সদস্যপদ লাভ করে।

বিশ্বব্যাপী বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৯০। ২৬ নভেম্বর ২০১৯ সালে ইউনেস্কো-এর ৪০ তম সাধারণ অধিবেশনে ১৪ ই মার্চকে আন্তর্জাতিক গণিত দিবস (আইডিএম) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতিবছর উদযাপনের স্বাদ নিতে, সৃজনশীলতার জন্য এবং সমস্ত ধরণের ক্ষেত্র, ধারণা এবং ধারণার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য গণিত দিবসের একটি নতুন থিম ঘোষণা করা হয়।

আন্তর্জাতিক গণিত ইউনিয়ন ২০২২-এর মূল প্রতিপাদ্য স্থির করেছে: গণিত একত্রিত করে অর্থাৎ গণিত একটি সাধারণ ভাষা যা একে অপরকে খুজে বের করতে হয়। কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থী ইউলিয়া নস্টোরোভা এর প্রস্তাব করেন। আন্তর্জাতিক গণিত দিবস ২০২০ ও ২০২১ এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল যথাক্রমে গণিত র্সবত্র এবং উন্নত
বিশ্বের জন্য গণিত।

গণিত দিবসের প্রধান লক্ষ্য: অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, গণপরিবহন ও টেলিযোগাযোগের মতো ক্ষেত্রে গণিতের ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা (এসডিজি ৩); উন্নয়নশীল দেশের নারী ও শিশুদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখে গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা (এসডিজি ৪); জেন্ডার ভিত্তিক সমতা অর্জন এবং গণিতে নারীদের ক্ষমতায়ন (এসডিজি
৫); প্রযুক্তি ও সমাজ পরিচালনার বীজ হিসেবে মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপর গুরুত্ব প্রদান (এসডিজি ৮)।

সর্বস্তরে গণিতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা (এসডিজি ৯); প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী এবং উদীয়মান রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গণিতের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি (এসডিজি ১১); জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং অর্থনীতি গতিশীল করতে গণিতের ভূমিকা অপরিহার্য (এসডিজি ১৪-১৫); বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জীবনের মান উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে গণিত ও গণিত শিক্ষার অবদান অনস্বীকার্য (এসডিজি ১৭)।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গণিতের প্রায়োগিক ব্যবহার অসীম: সার্চ ইঞ্জিনসমূহ জটিল গাণিতিক মডেলের মাধ্যমেই ইন্টারনেটকে পরিচালনা করে; সিটি স্ক্যান, এমআরআই এর মতো মেডিকেল ইমেজিং ডিভাইস গাণিতিক অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সংখ্যাসূচক তথ্য ৩ হতে ইমেজ তৈরি করে; মানবদেহের জিনোমের ডিকোডিং হল গণিত, পরিসংখ্যান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি অন্যতম বিজয়; গণিতের মাধ্যমে আমরা কৃষ্ণগহŸর ও সৌরজগতের প্রথম ছবি পেতে সমর্থ হই; সুরক্ষিত যোগাযোগের জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি সংখ্যাতথ্যের উপর নির্ভরশীল; গণিতশাস্ত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করে দি্চ্ছে; আমাদের স্মার্টফোনের সফ্ধসঢ়;টওয়্যারের পেছনেও রয়েছে গণিতের অবদান।

সভ্যতার সর্বত্র রয়েছে গণিত। পরিবহন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে অপটিমাইজ করতে গণিতশাস্ত্র ব্যবহার থেকে শুরু করে মহামারীর বিস্তার এবং নিয়ন্ত্রণ করতে গণিতের সাহায্য নেয়া; স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার কার্যকরী পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন: বন্যা, ভূমিকম্প, হারিকেন প্রভৃতি) ঝুঁকি অনুধাবন; ঈঙঠওউ-১৯ মহামারীর বিস্তার বুঝতে, নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে গণিত শাস্ত্রের বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে গণিত অপরিহার্য। যেমন : বৈশ্বিক পরিবর্তন ও জীব বৈচিত্রে তার প্রভাব মডেলিং এ জন্য গণিত ব্যবহৃত হয়; গণিত শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নত ভবিষ্যত অর্জনে সহযোগী ভ‚মিকা রাখে; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্যাটেলাইট চিত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ ও মানচিত্র অংকন করা যায়; গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা প্রতিটি নাগরিককে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে। বৈশ্বিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে গণিত অপরিহার্য; গণিত সকল নাগরিকের সুবিধার্থে সমিতিগুলির দক্ষ সংগঠনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করে; শান্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারের জন্য স্টিয়ারিং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিজ্ঞান ও গণিতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অনস্বীকার্য।

গণিত আমাদের যাপিতজীবনে অবদান রাখছে। শিল্প এবং সংগীতে রয়েছে গণিতের উপস্থিতি; দাবার কৌশলে আছে গণিত; বাজেট প্রণয়ণের ক্ষেত্রে গণিতের অবদান লক্ষ্যণীয়; নির্মাতা, কৃষক, শ্রমিক, বিপনী বিতান, ক্রীড়াবিদ প্রতিদিনই কিছু না কিছু গাণিতিক ধারণা ব্যবহার করে থাকেন; গণিত জিপিএস স্যাটেলাইট ভিত্তিক নেভিগেশনের মাধ্যমে আমাদের পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করে; আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস পেতে উন্নত বায়ুমন্ডলীয় মডেল ব্যবহার করা হয়; গণিত পেনশন সিস্টেমকে টেকসই করে তোলে; মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রেও রয়েছে গণিতের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার।

৪ মূলত গণিত শাস্ত্র প্রয়োগের ক্ষেত্র এ সবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অসীম সম্ভবনার ঝুলি গণিতশাস্ত্র সঙ্গে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে সেই আদিযুগ থেকে। আরও অনেক অকল্পনীয় উদ্বোবন এখনো বাকি রয়ে আছে। নতুন কোন ক্ষেত্র আবিস্কারের আশার অপেক্ষা আছি। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও বাংলাদেশ গণিত সমিতি দিনটি উৎযাপনের জন্য বিস্তারিত
কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। র্যালী, কুইজ প্রতিযোগীতা, সেমিনারের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদযাপন করা হবে।

অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম
আহবায়ক, আন্তর্জাতিক গণিত দিবস উদযাপন কমিটি ২০২২
সভাপতি, বাংলাদেশ গণিত সমিতি
E-mail:mshahidul11@yahoo.com

ঢাকা, ১৩ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ