Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শান্তিডাঙ্গার শান্ত প্রাঙ্গণ

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০১৭, ০৩:১৫

 


মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী: সবুজে ঘেরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ঝিনাইদহ যেতে মহাসড়কের ডান দিকে চোখে পড়বে মাথা উঁচু করে থাকা একটি গম্বুজ। প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে গম্বুজটি দেখা যায়। আশপাশে আরও বেশ কয়েকটা ভবন আছে। হঠাৎ দেখলে মনে হয়, গাছপালায় ঘেরা একটা বনের মধ্যে হুট করে কয়েকটা ভবন দাঁড়িয়ে গেছে। জায়গাটির নাম শান্তিডাঙ্গা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শেষ সীমানার এই গ্রামে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসটি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলাকে এক করেছে। ৩৭ বছর ধরে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আলো ছড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশে।

সকাল শুরু
সকাল সাড়ে সাতটায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে বাস ছেড়ে যায় ক্যাম্পাসের দিকে।
ঘুম তাড়িয়ে সকালবেলা বাস ধরতে ছুটা, তারপর বাসের জানালা গলে আসা মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে মহাসড়ক ধরে ছুটে চলা...খুব আনন্দ নিয়ে এই মুহূর্তগুলোর কথা বলছিলেন যশোরের মেয়ে মমতাজ জেসমিন। তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এক বছর হলো নবনির্মিত শেখ হাসিনা হলে উঠেছেন।

সকাল আটটায় পিপীলিকার মতো সারি বেঁধে দুই জেলা থেকে আসা প্রায় ৩৫টি বাস ২৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। ছুটির দিনগুলোছিাড়া প্রতিদিনই চোখে পড়ে এই দৃশ্য। ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পরপরই যে যার পথ ধরেন। গাছে থাকা পাখিদের কিচিরমিচিরের মতো শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। কেউ কেউ সকালের নাশতাটা এখানেই সেরে নেন। টং ঘরের গরম চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ থেকে ঘুম ঘুম ভাবটা দূর করেন অনেকে।

দুপুর ১২টা ও বেলা ২টার দিকে সময় মেনে আবার বাসে উঠতে হয়। আবার বাস ছোটে দুই শহরের দিকে। আর এই বাসে যাতায়াতের সুবাদেই শিক্ষার্থীদের ঝুলিতে জমা হয় হাজারো গল্প।

ফিরে দেখা
১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা হয়। ১৯৭৭ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রফেসর এম এ বারীকে সভাপতি করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি’ গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশে ৩টি অনুষদ, ১৮টি বিভাগ, ৩টি ইনস্টিটিউট ও ১টি স্কুল-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ১৭৫ একর জমিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ এবং মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে ৩০০ ছাত্র ভর্তি করা হয়। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। চার বিভাগে তখন শিক্ষক ছিলেন ৮ জন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ৫টি অনুষদের অধীন ২৫টি বিভাগ রয়েছে। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী ও ৩৫৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। এমফিল কোর্সে ৫০৫ জন এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে ৪৩৮ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে গবেষণাকর্মে যুক্ত আছেন।

এ পর্যন্ত ৪৭৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি এবং ৩১৯ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের চারটি ও ছাত্রীদের তিনটি হল প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর ঠিকানা। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের মেসেও থাকেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। তাই আবাসনের সুবিধা আরও বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করলেন অনেকে।

গ্রন্থাগারে এক চক্কর
বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ছাড়াও প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে। চারতলাবিশিষ্ট বিশাল গ্রন্থাগারে এক লাখের বেশি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের বই আছে। একসঙ্গে ৬০০ জন শিক্ষার্থীর বসার ব্যবস্থা আছে এই পাঠাগারে।

কথা হলো অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সোহেল রানা ও আলামিনের সঙ্গে। বললেন, চাহিদা মতো সব ধরনের বই তাঁরা এখানে পান। পাশের টেবিলে ব্যবস্থাপনা বিভাগের মনিরুলসহ চার শিক্ষার্থী চারটি ল্যাপটপ নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলেন।

জানালেন, ক্যাম্পাসের ওয়াই-ফাই কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেটে বই খুঁজছেন তাঁরা। অনলাইনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিদেশি বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ই-গ্রন্থাগার তৈরির কাজ চলছে। ‘শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই যেকোনো সময় অনলাইনে গ্রন্থাগারের সব সুবিধা পেতে পারে’, বললেন ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক মু. আতাউর রহমান।

পড়ালেখা ও পড়ালেখার বাইরে
প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি চত্বরের নাম ডায়ানা চত্বর। প্রিন্সেস ডায়ানার স্মরণে এই চত্বরের নাম রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের আড্ডা জমে এখানেই। চত্বরের একপাশে বসে ছিলেন ফোকলোর বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম, কামনা খাতুন ও স্বর্ণালী আক্তার। সঙ্গে ছিলেন প্রথম বর্ষের শামীম হোসেন ও হাসান আলী। জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খুব চাপ। তাল মেলাতে তাঁরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।

পাশে কয়েকজনকে দেখা গেল রাজনীতি নিয়ে তর্ক-বিতর্কে পুরো চত্বর সরগরম করছেন। এভাবেই পড়াশোনা, রাজনীতি, বিনোদনের খবর—সব উঠে আসে এই ডায়ানা চত্বরে।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের নিচতলার একটি কক্ষ থেকে ভেসে এল ‘লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া’ গানের সুর।

উঁকি দিয়ে দেখা গেল, হারমোনিয়াম-ডুগি-তবলা নিয়ে গান ধরেছেন অঞ্জলি দাশ। নবীনবরণ অনুষ্ঠানের জন্য গানের অনুশীলন চলছিল সেখানে। পাশে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং সোসাইটি, বিভিন্ন নাট্য ও আবৃত্তি গোষ্ঠীর কক্ষ।

ক্যাম্পাসের মূল ফটকের বাঁ পাশে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ ও ডান পাশে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্তবাংলা’। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে, পুরো ক্যাম্পাসটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

খেলাধুলায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক সুনাম আছে। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে তিনবার চ্যাম্পিয়ন ও চারবার রানারআপ এবং আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটে দুইবার রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সার্ক ক্রীড়া ও কমনওয়েলথ গেমসে এখানকার শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

আইন বিভাগের ছাত্রী ফাহিমা খাতুন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সদস্য। সম্প্রতি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়ে গেল এই ক্যাম্পাসে। এ বছর আইন বিভাগের ১৫ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে সহকারী বিচারক পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

এ ছাড়া এখানকার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন, শিক্ষকতা করছেন। ক্যাম্পাসে গবেষণা চালিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা হল্যান্ডের সন্ধ্যা হলুদ ফুল বাংলাদেশে ফুটিয়েছেন। এখন চলছে টিউলিপগাছ লাগিয়ে ফুল ফোটানোর গবেষণা।

আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসননির্ভর ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চাই। সেশনজট পুরোপুরি নির্মূল করার জন্যও বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা নতুন নতুন বিভাগ খুলতে চাই, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আরও উৎসাহী করতে চাই। সেভাবেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।

মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী
ভিসি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

 

ঢাকা, ০৪ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ