Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ জন্য ‘এনালগ আইন’

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ০১:২০

মাহফুজ আনাম: ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যে নিখাদ অর্জন করেছে এই সরকার। সরকারের এ উদ্যোগে মারাত্মকভাবে আঘাত হানছে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যা সবেমাত্র অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ।

একবার যখন এই ‘ডিজিটাল’ আইন পাস হবে তখন প্রকৃতপক্ষেই এবং কঠোরভাবে তা বাংলাদেশকে ঠেলে নেবে ‘এনালগ’ যুগে। এক অর্থে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দিক দিয়ে তা হবে অতীতে ফিরে যাওয়া।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এমন একটি ধারণার জন্ম দিয়েছে যেখানে লাখ লাখ মানুষের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মুক্তভাবে আলোচনার একটি ফোরাম, যা আমাদের দেশবাসী আগে কখনো উপভোগ করেন নি।

সারা বিশ্ব তা দেখেছে এবং আমরা এর অখ- অংশ। এটা হলো নতুন গণতন্ত্রের একটি প্লাটফর্ম।
এই ডিজিটাল সময়ে, আমাদের লাখ লাখ নাগরিক তাদের স্বার্থ বা আগ্রহের বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কে এমন এক উপায়ে লিপ্ত, যা অন্য কোনো প্লাটফরমে অচিন্তনীয়। কখনো কখনো একটি নদী দূষণের একটি সাধারণ ছবি অথবা বিপন্ন একটি শিশুর ছবিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সামাজিক আন্দোলন। এর ফলে দ্রুততার সঙ্গে ওই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। চাহিদার জবাব মেলে।

যদি প্রশ্নবিদ্ধ ওই আইনটি পাস হয় তাহলে এমন মতপ্রকাশ মারাত্মকভাবে খর্ব হবে।
প্রথমেই আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মারাত্মক খারাপ ব্যবহার হয়। কিন্তু তাই বলে মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা মাথা কেটে ফেলতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে আমরা ওই ‘মাথাব্যথা’ থেকে মুক্তি পাবো না। কারণ, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে, তারা আইনে কি আছে তার কোনো তোয়াক্কা না করে তাদের কর্মকা- চালিয়ে যেতে থাকবে। ফলে এতে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রান হবে শুধু সাধারণ মানুষ।

ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি, ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত করার কাহিনী আমাদের জানা আছে। তবে এসব ইচ্ছাকৃত এবং পূর্বপরিকল্পিত ছিল। যারা এসব করেছেন তারা বিদ্যমান অনেক আইনের অধীনে মারাত্মক অপরাধ করেছেন। বিস্ময়কর বিষয় হলো, তাদের অনেককে কখনো আটক করা হয়নি। তারা রয়েছে শাস্তির বাইরে। এটা বিশ্বাস করা কঠিন, নতুন আইন তাদের অসাধু কর্মকা- থেকে বিরত রাখবে।

সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে, সোমবার মন্ত্রিপরিষদ যে আইনটির খসড়া অনুমোদন করেছে তাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মৃত্যুর কথা রয়েছে, যেমনটা আমরা আজ পর্যন্ত জানতে পারছি। আপাতদৃষ্টে এটা শুধু ডিজিটাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এখন সব সংবাদপত্রের অনলাইন উপস্থিতি আছে। তাতে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া বা ভিডিও উপস্থাপনা। এর ফলে সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও ওই আইন প্রযোজ্য হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কেন এই আইনের দিকে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা বিস্মিত।
আমরা জানতে চাই: কোনো গণতান্ত্রিক দেশ, তা সে বিশ্বের যেখানেই হোক, তারা কি জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে, নিরপেক্ষ ও অবাধ মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে কোনো সুবিধা কখনো পেয়েছে? মতপ্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার কি কখনো অধিকতর ভালো পারমফর্ম করতে পেরেছে? চীন পুরোপুরি আলাদা ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়।

এই চীন বাদে সংবাদমাধ্যমের পায়ে শিকল পরিয়ে কোনো দেশ সমৃদ্ধ হতে পেরেছে এমন একটি ঘটনারও কি উল্লেখ করা যেতে পারে? সংবাদ মিডিয়াকে মুখ বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত একটি সরকার থেকে জনগণকে বিযুক্ত করা ছাড়া আর কোনো সুবিধা কি দিতে পেরেছে?
এসব প্রশ্নের জোরালো উত্তর হলো না।

বস্তুত এখানে উপসংহারে আসার যথেষ্ট যুক্তি-প্রমাণ রয়েছে যে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে যারা নির্বাচিত সরকারকে ভুল পথে পরিচালিত করে, তারা হলো গণতন্ত্রের শত্রু। সরকারকে তারা বিশ্বাস করায় যে, তাদের ভাল উদ্দেশ্যের অন্তরায় হলো মুক্ত সংবাদমাধ্যম। তারাই অবাধ স্বাধীনতাবিরোধী আইন প্রণয়নে সরকারকে উদ্বুদ্ধ করেন। সরকার ও তার জনগণের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে তাতে অবশ্যম্ভাবীভাবে তাদের জনপ্রিয়তায় ধস ও তার ফলশ্রুতিতে তাদের পতন ডেকে আনে।

সরকারের সামনে সাধারণত তথ্যপ্রবাহের জন্য দুটি চ্যানেল আছে। একটি হলো সরকারি চ্যানেল। অন্যটি নিরপেক্ষ মিডিয়া। সরকারি চ্যানেলগুলো সব সময়ই পরিচালনা করেন সরকারি কর্মচারীরা। তারা তাদের রাজনৈতিক পক্ষ অসন্তুষ্ট হন এমন খবর প্রচার করতে চান না।

তাই যেকোনো সরকার যদি যথাযথ তথ্য খুঁজতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই নির্ভর করতে হয় মিডিয়ার ওপর। তাই যখন তারাই মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে দেয়, তখন সরকারই কার্যত তাদের জন্য নিরপেক্ষ তথ্যের উৎস বন্ধ করে দেয়। এর ফলে তারা পুরোপুরি ব্যুরোক্রেটদের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে এবং এর পরিণতি কি তা আমরা সবাই জানি।
সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তার সবটাই ধসে পড়েছে।

কারণ, ব্রেজনেভস এবং কোজিগিনস কখনোই জানতেন না যে, তারা যেসব নীতি বা পলিসি গ্রহণ করছিলেন এবং যেসব নির্দেশনা দিচ্ছিলেন তা কোনোদিন আলোর মুখ দেখবে কিনা বা তার বাস্তবায়ন ঘটবে কিনা। একদিন, যেদিন তাদের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে থাকলো এবং পুরো প্রাসাদ ধসে পড়লো তখন পর্যন্ত কাগজেপত্রে সবকিছু ছিল ঠিকঠাক।
তাই, আমরা আবারো বলছি, কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এমন একটি আইন অনুমোদন দিচ্ছে, যা স্পষ্টত জনগণের স্বার্থবিরোধী? প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। আমাদের দৃষ্টিতে, এটা হলো তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ এবং নিজের সৃষ্ট ফাঁদে পরিষ্কারভাবে পা রাখছে সরকার।

যখন পুলিশকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হলো, তখন কোনো নাগরিক কর্মী বা সাংবাদিক কি বাস্তবতা নিয়ে অর্থাৎ সরকারি ভার্সনের বিপরীত গতি নিয়ে রিপোর্ট করতে পারবে এমনটা প্রত্যাশা করা যায়? একজন সাংবাদিকের কাছে যদি কোনো সরকারি গোপন ডকুমেন্ট পাওয়া যায় এবং এ অভিযোগে একজন সাংবাদিককে যখন ‘গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগে আদালতে তুলে নেয়া হয়, মঙ্গলবার আইনমনন্ত্রীর নিশ্চয়তা সত্ত্বেও, তখন কোনো মিডিয়াই রিপোর্ট করার সাহস দেখাবে না।

উইকিলিকস, পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস ফাঁসের কারণে বিশ্ব কি ভালো কিছু করতে পেরেছে? প্রশ্নবিদ্ধ এই আইনের অধীনে ওইসব পেপারসে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছে তারা সবাই আমাদেরকে আদালতে নিয়ে যেতে পারেন। ‘গোপন’ দলিল প্রকাশ করার কারণে আমাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ।

এই প্রশ্নবিদ্ধ আইনের সবচেয়ে বড় একটি বিপদ হলো- এতে উপযুক্তভাবে প্রকৃত সাইবার অপরাধ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অবাধ মিডিয়ার মধ্যে যে অন্তরায় তার পার্থক্য করা হয়নি। এই খসড়াটি অনেক প্রভিশন বা ধারায় ঠাসা, যা সহজেই ব্যবহার করা যাবে এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে ব্যবহার করা যাবে। এতে কিছু ভাষার দুর্বোধ্যতা প্রবল। এখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকির বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যার অনেক সুযোগ রয়েছে।

অভিজ্ঞতা দিয়ে ‘আস্থার সংকটে’ ভুগছি আমরা সংবাদমাধ্যম। আইন প্রয়োগ করা হয়েছে অথবা রাজনৈতিক কারণে অথবা অতিরিক্ত আইনগত বিষয়-আশয়ে। দণ্ডবিধির অধীনে মানহানির মামলাগুলো নিয়মিতভাবে গ্রহণ করছে নিম্ন আদালত, যদিও আইনে পরিষ্কার বলা আছে যে, শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এমন মামলা করতে পারবেন।

এখানে উল্লেখ্য, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে আইসিটি আইনের অধীনে মোট ১৪১৭টি মামলা ফাইল করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ শতকরা ৬৫ ভাগই হয়েছে ৫৭ ধারার অধীনে মানহানি মামলা। বিচার শেষে বা বিচার চলাকালীন শতকরা ৬৫ ভাগ অভিযুক্তকে খালাস দিয়েছেন আদালত। উপরন্তু ১৮০টি মামলায় অভিযোগের কোনো যুক্তিযুক্ত কারণই খুঁজে পায়নি পুলিশ।

এ থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়, কিভাবে আইসিটি আইন, বিশেষ করে ৫৭ ধারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করতে অপব্যবহার করা হয়েছে।
এজন্য আমাদের আতঙ্ক, প্রস্তাবিত আইনটিরও বহুল অপব্যবহার হবে এটা বলা যায়।
একটি অবাধ ও গতিশীল মিডিয়া বাংলাদেশের ভালোর জন্য সেবা দিয়েছে চমৎকারভাবে। দেশের ভাবমূর্তি ও এর গণতন্ত্রকে উন্নীতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এই মাধ্যম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এ দুটোকেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
সেকশন ২১
স্বাধীনতা যুদ্ধ অথবা জাতির জনকের বিরুদ্ধে যে কেউ নেতিবাচক প্রচারণা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ছড়িয়ে দিলে বা এতে উস্কানি দিলে তার শাস্তি হিসেবে ১৪ বছরের জেল অথবা এক কোটি টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
দ্বিতীয়বার তিনি যদি একই অপরাধ করেন তাহলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ৩ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে।

সেকশন ২৫
কোনো ব্যক্তির তিন বছর পর্যন্ত জেল, অথবা ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে, যদি প্রমাণিত হয় তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক কোনো মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ করেছেন বা সম্প্রচার করেছেন, যাতে কাউকে আক্রমণ করা হবে অথবা ভীতি প্রদর্শন করা হবে অথবা কাউকে অসৎ বলা হবে অথবা কাউকে অসন্তুষ্ট করা হবে। যদি তিনি জেনেশুনে প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন কোনো মিথ্যা তথ্য এবং পূর্ণাঙ্গভাবে বা আংশিক বিকৃত করে তথ্য প্রকাশ করেন কাউকে ক্ষুব্ধ করতে অথবা অবমাননা করতে, যদি জেনেশুনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অথবা গুজব ছড়িয়ে দিতে একই মাধ্যমে কোনো তথ্য আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বিকৃত করে বা ভুল তথ্য প্রচার করেন তাহলেও একই শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

যদি কেউ দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করেন তাহলে তার জন্য ৫ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রাখা হয়েছে। অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সেকশন ২৮

যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত দেয়ার জন্য ওয়েবসাইটে বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কোনো তথ্য প্রকাশ করেন বা সম্প্রচার করেন তাহলে তাকে ৭ বছর পর্যন্ত জেল দেয়া হবে অথবা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

যদি কেউ একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করেন তাহলে তাকে ১০ বছর পর্যন্ত জেল অথবা ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
সেকশন ২৯

যদি কেউ ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দণ্ডবিধির সেকশন ৪৯৯ তে বর্ণিত অপরাধ করেন তাহলে তাকে তিন বছর পর্যন্ত জেল দেয়া হতে পারে। অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
যদি তিনি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করেন তাহলে তাহলে তাকে ৫ বছর পর্যন্ত জেল দেয়া হতে পারে অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে।
দণ্ডবিধির ৪৯৯ নম্বর ধারা

কোনো মানুষ যদি শব্দের মাধ্যমে, সেটা মৌখিক কথায় হোক বা পঠিত হবে এমন হয় অথবা যদি এমন সাইন হয় অথবা দৃশ্যমান হিসেবে প্রতীয়মান হয় যে, এর মধ্য দিয়ে তিনি অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন বা ক্ষতি করার জন্য প্রকাশ করেছেন অথবা জেনেশুনে অথবা এমনটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, এমন নিন্দা ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি হয়েছে বলে গণ্য হবে।
সেকশন ৩১

যদি কোনো ব্যক্তি এমন কিছু ওয়েবসাইটে বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়, বিভিন্ন গ্রুপ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে এবং তা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তাহলে ওই ব্যক্তিকে ৭ বছর পর্যন্ত জেল দেয়া হতে পারে। অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
যদি তিনি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করেন তাহলে তাকে ১০ বছরের জেল অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে।
সেকশন ১৭

যদি কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিষয়ক অবকাঠামোর ভিতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন তাহলে তাকে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত জেল অথবা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে। আর যদি দেখা যায় তিনি সেখানে প্রবেশ করেছেন অবকাঠামোর যেকোন রকমের ক্ষতি করার জন্য তাহলে তাকে ১৪ বছরের জেল অথবা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে।
সেকশন ৩২

যদি কোনো ব্যক্তি সরকারি অফিসে, আধা সরকারি অফিসে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অথবা সংবিধিবদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক অথবা ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় শীর্ষ গোপনীয় অথবা গোপনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন অথবা সংরক্ষণ করেন অথবা তা করতে সহায়তা করেন তাহলে তিনি কম্পিউারে ‘গুপ্তচর’ অথবা ডিজিটাল গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত হবেন এবং তাকে ১৪ বছর পর্যন্ত জেল দেয়া হতে পারে। অথবা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে।

যদি তিনি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে অথবা এক কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

(মাহফুজ আনাম। দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক। আজ ডেইলি স্টারে প্রকাশিত তার মন্তব্য কলামের অনুবাদ এটি)


ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ