কাউসার,মিশর থেকে: মিশরের কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মেলা এবং পৃথিবীর ২য় আন্তর্জাতিক বৃহত্তম বইমেলা। মিশরের কায়রোর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী ‘৫৪ তম কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা’ ২০২৩।
এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন ১ হাজার ৪৭ জন প্রকাশক। এর মধ্যে ৭০৮ জন মিশরীয় এবং ৩৪০ জন বিদেশি ১৯৬৯ এ এই বইমেলার যাত্রা শুরু হয়। কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী এই বইমেলার সূচনা করেন। কালক্রমে এই বইমেলার পরিধি ও সমৃদ্ধি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, বর্তমানে কোন কোন সমীক্ষায় একে 'ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা'র পর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারিতে শিক্ষাবর্ষের প্রথম পরিক্ষার ছুটিতে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ সহ
মেলায় ইরিত্রিয়া, ভারত, ঘানা, কুয়েত, মরক্কো, আফ্রিকান পাবলিশার্স নেটওয়ার্ক, কুয়েতি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ সেন্টার এবং আমিরাত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অংশ গ্রহণ করেছে হাঙ্গেরি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক।
সহস্রাধিক নিয়মতান্ত্রিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও কালচারাল সেন্টারও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে থাকে সেখানে। মিশরের সাধারণ জনগনের বাইরে এই বইমেলার প্রতি সবচেয়ে বেশি আকাংঙ্খিত থাকে বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা। শাস্ত্রীয় কিতাবাদি ছাড়াও নানা দুর্লভ বইয়ের সন্ধান মেলে সেখানে। লেখক – পাঠক – প্রকাশকের সেতুবন্ধন ঘটে এই মিলনমেলায়। বর্তমানে বাংলাদেশে আরবী কিতাবের যে সহজলভ্যতা দেখা যাচ্ছে এর অন্যতম উৎস হলো কায়রোর এই বইমেলা।
অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে চলে আসা এই বইমেলা এখন আর নিছক বই বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বই বিক্রি ছাড়াও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু এটি এখন। সেজন্য সরকারি – বেসরকারি উদ্যোগে বইমেলা মিলনায়তনে চলে সভা – সেমিনার, কবিতার আসর, নাট্যশিল্প, ডকুমেন্টারি সহ সাহিত্যিক – সাংস্কৃতিক নানা প্রোগ্রাম। মুসলমানদের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারিদের জন্যও রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে পৃথিবীর ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি তা ঘটেছে এবারের বইমেলায় মিশরে সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া,তাই বই বিক্রি হচ্ছে কিস্তিতে।
মানুষ সাধারণত টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, গাড়ি, বাড়ির মতো দামি জিনিস কিস্তিতে কিনতে অভ্যস্ত। কিন্তু মিশরে এখন বইও বিক্রি হচ্ছে কিস্তিতে। সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকাশকরা। খবর বিবিসির।
সেফসাফা প্রকাশনা হাউসের মোহাম্মদ এল-বালি বলেন, মিশরে বই এখন বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত হয়েছে। এটি খাবারের মতো মৌলিক চাহিদার পণ্য নয় এবং মানুষ বিলাসী পণ্য কিনছে না। মেলাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। গত বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই মেলায় গিয়েছিলেন।
এল-বালি জানান, দেশটিতে কাগজ ও কালির দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই তিনি বিদেশে বই ছাপানোর দিকে ঝুঁকেছেন এবং কম কপি তৈরি করছেন। কারণ তিনি মনে করেন, বইয়ের চাহিদাও ক্রমেই কমে যাবে।
এ বারের বইমেলা প্রায় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চার নাম্বার জেনাহতে স্টল থাকলেও সুযোগ হয়নি বাংলাদেশী কোন স্টলের তাই বইমেলায় ঘুরতে আবেগ এবং ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশী দর্শনার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে রাষ্ট্রদূত মুনিরুল ইসলামের কাছে মুঠেফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে দূতাবাস প্রধান ইসমাইল হোসেন বলেন, এই বিষয়ে কিছু জানিনা তাই মন্তব্য করা সমাচীন নয়। যদিও দূতাবাস আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন এবার তারা একটি স্টল দেবেন কিন্তু তা স্বপ্নই থেকে গেল প্রবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য।
উল্লেখ্য, কায়রোর এ বইমেলা আরব বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম। প্রকাশনা শিল্পের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। কিন্তু এ বছর মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা কম বলে মনে করা হচ্ছে। সে জন্যই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কিস্তিতে বই কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে।
মিশরে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ইসলামী সভ্যতা – সংস্কৃতির বিকাশে অন্যতম ভূমিকা পালন করে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। আল আজহারের সুবিশাল প্যাভিলিয়নে প্রকাশিত বই বিক্রির কর্নার ছাড়াও থাকে লেকচার কর্নার, ফতোয়া কর্নার, নারী ও শিশু কর্নার, মাখতুত ও ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ও মিডিয়া ডেস্ক। মেলার প্রতিদিন আজহারের প্রবীন শিক্ষকগণ সমসাময়িক মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন। ফতোয়া কর্নারে অভিজ্ঞ মুফতিগণ সারাদিন জনসাধরণের জীবনমুখী নানা জিজ্ঞাসার জবাব দেন। নারী ও শিশু কর্নারে থাকে দাম্পত্যজীবন ঘনিষ্ট শিষ্টাচারমূলক অনুষ্ঠান এবং শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন – ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ ও ইসলামী ইতিহাসের সচিত্র বর্ণনা।
ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারী (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//কেএ//এমএফ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: