Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
বেরোবি’তে ইফতার ও সম্প্রীতির বন্ধনের কথা

‘‘বাবা প্রতিদিন ইফতার হাতে নিলেই তোমাকে মনে পড়ে’’

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২৩, ০২:০৫

বেরোবি’তে সম্প্রীতির বন্ধনে উৎসবমুখর ইফতার

সিদ্দিকুর রহমান,বেরোবি: বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয়েছে সবেমাত্র এক মাস। এই জীবন ঘিরে ভালোলাগাও বাড়ছে। সাথে তাল মিলাতে হচ্ছে অনেক কিছুতেই। সহপাঠী, বড় ভাই-বোন সকলের ভালোবাসায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন বেশ আনন্দেই কাটছে। এর মধ্যে চলে এলো রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমজান। প্রথম রমজানের সেহেরি বাড়ির বাইরে সকলকে ছেড়ে খারাপই লাগছিল। সারাদিন রোজা রেখে বিকেলে বাবা ফোন দিয়ে যখন বললেন, প্রতিবার ইফতারের আয়োজন তো তুমিই কর, এবার তুমি নেই তোমাকে খুব মনে পড়ছে। "আমিও আবেগে কেঁদে ফেললাম। বিকেলে এক বন্ধু ফোন করে বললো ক্যাম্পাসে চলে আয়, সবাই ইফতার করব।’ এভাবেই ক্যাম্পাসে ইফতার করার কথা জানালেন   গনিত বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার।

চলছে রমজান মাস। প্রতিদিন বিকেল হতে না হতেই সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান ও খেলার মাঠে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা । ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বসে পড়েন তারা। উদ্দেশ্য একটাই সবাই মিলে একসাথে ইফতার করা। কেউ ফল কাটাকাটি করছেন, কেউ শরবত বানানোর কাজে লেগে পড়েন কেউ বা আবার ছোলা-মুড়ি মাখানোর কাজ করছেন ।

ক্যাম্পাসে সবাই মিলে একসাথে ইফতার

এমনই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে। রংপুরের প্রাণকেন্দ্র মডার্ন মোড় থেকে হাফ কিলোমিটার উত্তরে গেলেই দেখা মিলবে ৭৫ একরের সবুজ শ্যামলে ঘেরা ক্যাম্পাস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি)। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, দর্শণার্থী ও পাখ-পাখালির কিচির-মিচির শব্দ সবসময় পুরো ক্যাম্পাসকে মাতিয়ে রাখে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে রমজান মাসের ইফতারির মনোমুন্ধকর পরিবেশ। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লেই শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও মাঝে মধ্যে দর্শণার্থীরা ক্যাম্পাসে বসে ইফতারের স্বাদ নেন।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ বলেন, ‘আমি এবং আমার সহপাঠীরা বাড়ির মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছি প্রাণের শহর রংপুরে এবং আপন করে নিয়েছি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে। আমরা এখন রমজান মাসেও ঘাড়ে ব্যাগ ঝুলিয়ে প্রতিদিন পাড়ি জমাই ক্লাসের উদ্দেশ্যে। আমার মতো আরো অনেকেরই এটাই প্রথম বারির বাইরে একা থাকা তাও আবার রমজান মাসে। রমজান মাসে একা বসে ইফতার করার চেয়ে বোধহয় কষ্টের আর কিছুই হয় না। কিন্তু আমাদের এ কষ্টের বোঝা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বন্ধুরা দল বেঁধে একসাথে ইফতার করা। এক পরিবার ছেড়ে এসে আমরা খুঁজে পেয়েছি নতুন আরেক পরিবার।‘

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, স্বাধীনতা চত্বর মাঠ, ক্যাফেটেরিয়ার সামনের মাঠ, সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর আশেপাশে ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে চলে ইফতারির এ মহোৎসব। এখানে শুধু ছেলে নয়, মেয়ে শিক্ষার্থীরাও অংশহগ্রহণ করে থাকে। এছাড়া রোজা শুধু মুসলমানদের ইবাদাত হলেও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকেন অন্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুরাও। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ কাজ করে ইফতারের জন্যে।

সবাই মিলে একসাথে ইফতারে অনুভূতি প্রকাশ করে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জীবন রায় ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘চলছে রমজান মাস সারাদিন রোজার ক্লান্তিতে দিনটা নীরব মনে হলেও ইফতারের পূর্বের এক দেড় ঘণ্টা আমাদের ক্যাম্পাসটা হয়ে ওঠে যেনো সবচেয়ে ব্যস্ততম ক্যাম্পাস। কেউ নিজের প্রিয়জনের সাথে কেউ আবার ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ভিড় জমায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মাঠে। সবাই একসাথে ইফতারের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বসে পড়ে গোল হয়ে। কোনো কোনো সময় দেখা যায় পুরো ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা একসাথে বসে পড়েছে ইফতারের জন্য। আমি হিন্দু হলেও আমার ফ্রেন্ড সার্কেল সেই মুহূর্তগুলো থেকে আমাকে এড়িয়ে চলেনি। আমি ও আমার হিন্দু বন্ধুদের জন্য তাদের ইফতারের দাওয়াত সবসময় থাকে। প্রায় বেশ কয়েকটা ইফতারেই তাদের সাথে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি।’

ইফতারের সময়ে রমরমা আমেজ

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মনোয়ার বলেন, ‘অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের রমজানটা আমাদের জীবনে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবাই যখন ভার্সিটির নবীন সদস্য হয়েও দলবেঁধে সেন্ট্রাল মাঠে ইফতার করি এবং আশেপাশে বড় ভাইয়া আপুদের ইফতারের সময়ে রমরমা আমেজ দেখতে পাই। পরিবার ছেড়ে এসে একা ইফতার করার সকল কষ্ট মুহূর্তেই তখন ভুলে যাই। ইফতারের সময়টা ক্যাম্পাসে যোগ করে এক নতুন আমেজ যা এক কথায় অনবদ্য। আর ভার্সিটির শিক্ষক এবং বড় ভাইয়া- আপুরা এতটা বন্ধুসুলভ যে তারও দ্বিধাহীনভাবে যোগদান করেন আমাদের সাথে। পরিবার ছেড়ে এসেও নতুন একটা পরিবার খুঁজে পেয়েছি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রমজান মাসের ইফতারের সময়টা তাতে যোগ করেছে এক নতুন আমেজ। সবাই একসাথে বসে খাবার রেডি করে ইফতারের জন্য অপেক্ষা করা সে এক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। ইফতারের আগমুহূর্ত দোয়া পড়াটাও উপভোগ করতাম ভালোভাবেই। আজানের আওয়াজ হলেই আন্তরিকতার সাথে সবাই ইফতার করতাম। ইফতার শেষে তারা মসজিদে যেত নামাজ পড়তে এবং আমরা হিন্দু বন্ধুরা তাদের জন্য অপেক্ষা করতাম। অনেক সুদর মুহূর্ত ও আড্ডা আর সন্ধ্যেবেলার আবহাওয়া সেই সাথে ইফতার, সত্যি বলতে সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।‘

সূর্য অস্তে প্রাণবন্ত বেরোবি। প্রস্তুতিটা ভোর থেকেই শুরু দিনব্যাপী আহার বর্জন। পবিত্র মাহে রমাদানের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে নেই কোনো কমতি। সকল শ্রেণী ধর্ম,বর্ণ, জাদ বিভেদ ভুলে গিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য সম্প্রীতি মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে ইফতারে প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস। সাম্প্রদায়িক শক্তির মুখে একমুঠো ছাই ফেলে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় ক্যাফেটেরিয়া থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মাঠ চোখ বুলিয়ে যাওয়ার মত অনাবিল দৃশ্য ভুলবার নয়। এভাবেই জমকালো ইফতারের মাধ্যমেই বন্ধুত্বের বন্ধন হোক অটুট সেই প্রত্যাশা করলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আয়েসা সিদ্দিকা আখিঁ

ঢাকা, ৩১ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএফ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ