Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় যবিপ্রবির একঝাঁক ফুটবল প্রেমী

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বার ২০২২, ০৭:২৩

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় যবিপ্রবির একঝাঁক ফুটবল প্রেমী

খেলা মানে আনন্দ, এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ। আর ঠিক এই মুহূর্তে দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২। মাত্র চার দিনের অপেক্ষায় বিশ্ব ফুটবলপ্রেমীদের। আগামী ২০ নভেম্বর আল খুরের আল বাইত স্টেডিয়ামে কাতার এবং ইকুয়েডরের ম্যাচের মধ্য দিয়ে এবারের আসর শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী শুরু হয়ে গিয়েছে ফুটবলীয় উন্মাদনা, চলছে পছন্দের প্রিয় ফুটবল দলের টি-শার্ট সংগ্রহ-কেনা বেঁচা, পতাকা ওড়ানোর উৎসবসহ নানান রোমাঞ্চকর ঘটনা। যা স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে জনপ্রিয় ফুটবল দেশের পতাকা ওড়ানো দেখেই বোঝা যায়। এবারের আসরের ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনায় ক্যাম্পাসলাইভের পর্দায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক ফুটবল ভক্তদের উজ্জীবিত ভাবনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪ডকম-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এ টি এম মাহফুজ

ব্রাজিলের সমর্থক শাওন আহমেদ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, সেই ২০০২ সালে যখন সবে মাত্র খেলা একটু একটু বুঝি, তখনই ব্রাজিল দলের তারকা ফুটবলার রোনালদিনহো এবং রোনাল্দো লুইসের ফুটবল নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে যাই। তার ওপর সেবার তাদের পাঁচ বারের মতোন বিশ্বকাপ অর্জন, রাস্তায় মিছিল বের করলাম বন্ধুরা মিলে। তখন থেকেই মুলত ভালো লাগা দলটির প্রতি।

ব্রাজিল সমার্থক শাওন আহমেদ

ব্রাজিল ফুটবল দল মানেই বিরাট একটা আবেগ কাজ করে, যদিও যথার্থ কারণ আমার জানা নাই, হয়তো ভালো লাগার জন্য এমনটা হয়ে থাকে। অবশ্যই পছন্দের দলের থেকে প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে বরাবরের মতোই। আমি চাই ব্রাজিল ভালো খেলে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলুক। আর বিশ্বকাপে পছন্দের দলকে কেন্দ্র করে দেশে যেনো কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেদিকে আমাদের সবার দৃষ্টি রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।

পর্তুগাল ভক্ত মো: মিরাজুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, এবার বিশ্বকাপে বরাবরের মতোই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বাইরে আমি একজন পর্তুগাল সাপোর্টার। খুব ছোট থেকেই আমি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর (CR-7) ভক্ত। সুতারাং এবারও তার দল পর্তুগাল কেই সাপোর্ট করছি। তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সাপোর্টার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। এর বাইরে যে মানুষগুলো অন্য দল কে সাপোর্ট করে তাদেরকে আমার কাছে ইউনিক মানুষ মনে হয়।

পর্তুগাল ভক্ত মো. মিরাজুল ইসলাম

যাই হোক, আমি অবশ্যই চাইবো এবার বিশ্বকাপে আমার দল চ্যাম্পিয়ন হোক। এবার বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি একটা ম্যাচ দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। আমি চাই এই দুই দলের যেকোন একটা দল ফাইনালে উঠুক আর তাদের বিপক্ষে আমার দল থাকুক। তবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, স্পেন- পর্তুগাল যে দলই হোক না কেন দিন শেষে আমরা কিন্তু ভাই-ভাই। আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই, তবে আমাদের উচিত হবে সেটা সহনীয় মাত্রায় রাখা। আর খেয়াল রাখবো এই দল করা নিয়ে যেন এমন কিছু না হয় যার ফলে নিজেদের ভিতর সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। খেলাতে হার-জিত থাকবে এটাই হলো খেলার সৌন্দর্য। সর্বোপরি বিশ্বকাপের সব দল গুলোর জন্য শুভকামনা রইলো।

ব্রাজিলের ভক্ত ফুটবলপ্রেমী শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, বিশ্বকাপ মানেই চারিদিকে তুমুল উত্তেজনা। নিজেদের দেশ বিশ্বকাপে নেই তাতে কি? ব্রাজিল আর্জেন্টিনাতো আছে! আমার মতো ব্রাজিল ভক্তরা তাদের পছন্দের দলটির প্রতি অন্যবারের তুলনায় একটু বেশিই আশাবাদী। তাদের রয়েছে নেইমার, ভিনিসিয়াস, জেসুস, ক্যাসিমিরো, রাফিনা আর গোলকিপার হিসেবে আছে সুদক্ষ এলিসন। অর্থাৎ এবারের ব্রাজিল ফুটবল দল খুবই খুবই শক্তিশালী। অন্যদিকে আর্জেন্টাইন ভক্তদের আশা মেসি একাই বিশ্বকাপ জিতিয়ে দিবেন, তবে ডেনমার্ক এরও সম্ভাবনা দেখছি।

ব্রাজিল ভক্ত মো. মেহেদী হাসান

ব্রাজিল, একটি দেশের নাম। এর চেয়েও বড় কথা একটি ফুটবল রাষ্ট্রের নাম এটি। ব্রাজিল ১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক খেলা শুরু করে। তাদের ফুটবল ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এপর্যন্ত ব্রাজিল ফিফা নিয়ন্ত্রিত ১৯টা আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে। সৃষ্টিশীল পাসিং, ছন্দময় ও নান্দনিক ফুটবলের জন্য এই দেশটিই সেরা। আমার প্রত্যাশা ব্রাজিল এইবার হেক্সা মিশন জয়ে সফল হবে।

মেসি ভক্ত জান্নাতুল ফেরদৌস আশা ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, আমার কাছে ফুটবল মানে মেসি আর মেসি মানে আর্জেন্টিনা। মেসি একটা আবেগ, যেটা ফুটবল খেলার জয়-পরাজয় থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। সালটা ২০১০,এতো দিনে আমি মেসি, ফুটবল আর আর্জেন্টিনাকে অনেকটা জানি । মেসির ছোটবেলা, বেড়ে ওঠা আর বার্সেলোনার সাথে সম্পর্ক কোন রুপকথার থেকেও কম না।আর আর্জেন্টিনা! "ফুটবলের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে সে দেশের মানুষ প্রতিটা মুহূর্ত কাটায়, ফুটবল খেলাকে যে এতোটা ভালোবাসা যায় সেটা আর্জেন্টিনার দিকে তাকালেই বোঝা যায়।" ২০১০ সালে প্রিয় দলটাকে হারতে দেখলাম খুবই খারাপ ভাবে।আমার মনে আছে ওই দিন আমি সারারাত কাঁদছিলাম পরের দিনও কিছু খেতেও চাইছিলাম না, তখন আম্মু ভয় দেখিয়ে বলে আমাকে আর কোনো দিন খেলা দেখতে দিবেনা।আমাদের বাড়ির পাশে একটা পাঠাগার তৈরি হয় সেই সময়।প্রতিদিন বিকালের ডেইলি রুটিন মেনে পাঠাগারে গিয়ে প্রথম আলো পত্রিকার শেষের পেজটা আগে উল্টানো আর খেলার খবর দেখা আর বার্সোলোনার খেলা কখন সেটা জানা আমার নির্ধারিত কাজ ছিল। আমার একটা ডাইরী আছে যার প্রতিটা পেজে সেই সময়ের পত্রিকা গুলোর মেসির প্রায় সব ছবির কাটিং লাগানো আছে।

মেসি ভক্ত জান্নাতুল ফেরদৌস আশা

তিনি আরো বলেন, ২০১৪ তে আর্জেন্টিনার কোটি কোটি ভক্তের মতো ফাইনাল ম্যাচের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পুরা বিশ্বকাপটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো সুন্দর ছিল।ফাইনাল খেলা শেষে আমি পুরো হতোভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।কষ্ট হচ্ছিল প্রিয় মেসির জন্য, প্রিয় দল আর্জেন্টিনার জন্য। কিন্তু তাতে কি ! আমি জানি, আমার মতো আর্জেন্টিনার কোটি কোটি ভক্তের মনে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা একবিন্দুও কমেনি বরং আরো তীব্র হয়েছে। ২০২২ সালেও যদি বিশ্বকাপ না পায় আর্জেন্টিনা তাতে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা একচুলও কমবে না বরং অপেক্ষাটা আরো একটু বাড়বে না হয়। কিন্তু, মেসি নামের ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির এই সুন্দর মনের মানুষটার জন্য, অসম্ভব অসম্ভব কষ্ট হবে। মেসির হাতে বিশ্বকাপটা না উঠলে বিশ্বকাপ নিজেই তার রং হারাবে। মেসির হাতেই যে কাতার বিশ্বকাপ সব থেকে বেশি মানাবে। পুরো ফুটবল বিশ্বই যে ঋণী থাকবে আজীবন মেসির কাছে। আর ফুটবল না পাবে তার পূর্ণতা।

জার্মান সমর্থক দেবজ্যোতি সরকার ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, এবার বিশ্বকাপ ফুটবল খুবই অনন্য হবে। কারণ দীর্ঘ করোনা মহামারী এর পর সমগ্র বিশ্ব আনন্দে মেতে উঠেছে। আমার সর্বক্ষেত্রেই পছন্দের টিম জার্মানি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই। জার্মানে ফুটবল খেলার শুরু অনেক আগে থেকেই।

জার্মান সমর্থক দেবজ্যোতি সরকার

১৯০০ সালেই তাদের ফুটবল খেলা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৭ সালে ফিফা কনফেডারেশন কাপের জয়ী দল জার্মান যারা চিলিকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছিল। ব্রাজিলের পর সর্বাধিক ৪ বার ফিফা বিশ্বকাপে জয়ী। এবারের বিশ্বকাপ ইউরোপের দেশ জার্মানির হাতেই পড়ুক এমন প্রত্যাশা রাখছি।

ব্রাজিলের ভক্ত সৈয়দ ইশতিয়াক কাইয়ুম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনায় বাগড়া দিতে আছে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা তবে খেলা তো দেখবোই। বরাবরের মতোই পছন্দের দল ব্রাজিল আর আমার মনে হয় এবার স্পেন ফ্লপ করবে কারণ ওদের স্কোয়াড সিলেকশন ভালো মনে হয়নি।

ব্রাজিলের ভক্ত সৈয়দ ইশতিয়াক কাইয়ুম

ব্রাজিল আর্জেন্টিনা দুই টি দলই এবার বেশ শক্তিশালী দল নিয়ে খেলবে। তবে নিজের দেশকে এসব জায়গায় দেখতে পেলে ভালো লাগবে। বাংলাদেশ ফুটবল টিম কে জয়ের ধারায় দেখতে চাই। বাফুফের নেতৃত্বে গলদ আছে তবে প্লেয়ার দের ফিটনেস ও বাড়াতে হবে। অন্তত বড় বড় ম্যাচ খেলতে না হারার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামবে এই প্রত্যাশা করি।

পর্তুগাল সমর্থক হাসান শাহরিয়ার ফাহিম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, বরাবরের মতো এইবারের ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে সবার মধ্যে বেশ উত্তেজনা, এর থেকে আমিও ভিন্ন নই। তবে শৈশবের মতো সেই আনন্দ টা হয়তো নেই। নিজের দল হেরে গেলে পরের দিন স্কুলে বন্ধুদের সামনে কিভাবে যাবো তা চিন্তা করে রাত পার করা, খেলাটা বুঝা আর না বুঝা নিয়ে কত আড্ডা হতো সেই বন্ধুদের মাঝে। আমার পছন্দের দল হচ্ছে পর্তুগাল। এবার পর্তুগালের কাছ থেকে বেশ ভালো একটা বিশ্বকাপ আশা করি তাদের একজন ভক্ত হিসেবে।

পর্তুগাল সমর্থক হাসান শাহরিয়ার ফাহিম

যারা আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল বাদে খেলা নিয়ে খবর রাখে তাদের অন্তত জানা আছে পর্তুগাল টিম কতটা শক্তিশালী। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এদার মিলিতাও তো বলেই ফেলেছেন যে তারা (ব্রাজিল) পর্তুগাল টিমকে নকআউট ফেস করতে চায় না। ফারনান্দ সান্তোসের আন্ডারে পর্তুগাল টিম ২০১৬ সালে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৯ সালে নেশনস লিগ জিতে নেয়। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো এর শেষ ওয়াল্ড কাপ (হয়তো) হিসেবে আমি চাই এইবার কাপ টা পর্তুগালের মাটিটেই যেন যায়।

আর্জেন্টিনার সমর্থক মোতালেব হোসাইন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, সেই ছোট থেকেই যখন খেলা দেখা শুরু করছি তখন থেকেই লিও মেসির ভক্ত। লিও মেসি ছিল আবেগের কেন্দ্র বিন্দু। ক্লাবের খেলা,জাতীয় দলের খেলা কখনো দেখা বাদ যেত না। ফুটবল থেকে আমি মেসিকে চিনি না, মেসি থেকে ফুটবল কে চিনি এটা বললে ভুল হবে না! আর মেসি ভক্ত থেকেই মেসির দেশ ও দল আর্জেন্টিনা কে ভালোবাসা। ভালোবাসা কেন মেসির প্রতি সেটা বলে ও লিখে বুঝানো সম্ভব নয়, কারণ ফুটবলের রাজা, ফুটবলের যাদুকরকে কী ভালো না বেসে থাকা যায়!

আর্জেন্টিনার সমার্থক মোতালেব হোসাইন

এবার কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে আমার আগ্রহ ও উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলছে, কারণ এটাই তো বস লিও মেসির শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। আর এবারের আর্জেন্টিনার স্কোয়াডটা হয়েছে আমাদের আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মনের মতো। ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ড, ডিফেন্ড, গোলবার জায়গাতেই রয়েছে নির্ভরযোগ্য ও ভালোমানের ফুটবলারা। তাই এই দলের কাছে প্রত্যাশা একটাই সেটা হলো সবাই মিলে লিওর জন্য খেলবে এবং মেসির হাতে বিশ্বাকাপের ট্রফি তুলে দিবে। মেসি ও আর্জেন্টিনাময় একটি বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। শুভকামনা প্রিয় দলের প্রতি ও প্রিয় মেসির প্রতি।

ঢাকা, ১৫ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ