Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

১৫তম বছরে দীপ্তিময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবার ২০২২, ০৫:২২

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

উত্তরবঙ্গসহ সারাদেশে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে পদার্পণ করলো উত্তরবঙ্গের আলোচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশের বিভিন্নক্ষেত্রে অবদান রাখতে শুরু করেছে। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ‌প্রতিষ্ঠা দিবসের অঙ্গীকার, সেশনজটমুক্ত হবে এবার'- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪ডটকম-এর বেরোবি প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:
আধুনিক যুগে শিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে পড়া রংপুরবাসীকে এগিয়ে নিতে ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে আনন্দ দেখা দিয়েছিল, তা নিমিষেই বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে রংপুরের কারমাইকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবি করা হয়। এটিও মতানৈক্যের কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আবারও গণআন্দোলন শুরু হয়।

পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রংপুরে আসেন। রংপুরের সাংবাদিকরা তার কাছে এ দাবিটি জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন। ওই বছরেরই ১২ অক্টোবর ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এক্ষেত্রে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ না করে ২০০১ সালে ‘রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে’র নামে অধিগ্রহণকৃত জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে একটি কালো আইন জুড়ে দেওয়া হয়। আইনটি হলো- বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হবে নিজস্ব অর্থায়নে।

২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রংপুরে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে রংপুরে একটি স্বতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তৎকালীন মহাজোট সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামানুসারে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর’ নামকরণ করে। নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হওয়ার আইনটিও বিলুপ্ত করা হয়।

স্থায়ী ক্যাম্পাস:
সকল চড়াই উতরাই পেরিয়ে স্থায়ী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাস আজ এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের হাতছানি। ২০১১ সালের ৮ই জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ৬ টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক, ৩ জন কর্মকর্তা ও ৯ জন কর্মচারী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে রংপুর শহরের ডিসি মোড়ের সন্নিকটে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) পরিত্যক্ত কয়েকটি কক্ষ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এটি রংপুর ক্যাডেট কলেজের ও কারমাইকেল কলেজের মাঝে ৭৫ একর জমির উপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২২ টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার জন, শিক্ষক ১৮৬ জন, কর্মকর্তা ১৩৫ জন এবং কর্মচারী রয়েছে মোট ৪৮৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৬টি অনুষদ ২২টি বিভাগ, ১টি ইনস্টিটিউট, ৪টি ডরমেটরি, সেন্ট্রাল মসজিদ, লাইব্রেরী, প্রশাসনিক ভবন, মেডিকেল সেন্টার নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল এবং ড. ওয়াজে রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।

তীব্র সেশনজট থেকে মুক্তি:
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে সেশনজট নামক ভয়াল অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। এ সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। একসময় চার বছরের স্নাতক শেষ করতে সময় লাগতো ৬ থেকে ৭ বছর। ১ বছরের স্নাতকোত্তর শেষ করতে সময় লাগতো ২ বছর। বাংলাদেশের শিক্ষানীতি অনুযায়ী যেখানে চার বছরে স্নাতক এবং এক বছরে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করার কথা। সেখানে সেশনজটের ফাঁদে পড়েছিল (বেরোবি)। বর্তমান সময়ে যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রধান চাওয়া ছিল সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি। সময়মতো স্নাতক শেষ না হলে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। যার কারণে নিজের মাঝে কাজ করে হতাশা, গ্লানী ও নানামূখী দুশ্চিন্তা। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক বিভিন্ন জটিলতায় অনেক সময়ই নির্ধারিত সময়ে ক্লাস পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব হয় না যার কারনে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় সেশন জটের কবলে।

বেরোবিতে এই হতাশার সেশন জটের তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি শুরু হয়, ১৪ জুন, ২০২১ অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ উপাচার্যের পদে আসার পর থেকে। তিনি সাবর আগে গুরুত্ব দিয়ে সেশন জোট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ অল্প সময়ের মধ্যে সফলতার মুখ দেখেছেন। সবার আগে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের। বৈশ্বিক করোনাকালীন সময়ে চালু রেখেছেন অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা। সেই সাথে জট নিরসনে ছয় মাস মেয়াদী সেমিস্টার ফাইনাল ৪ মাসে নেওয়ার এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তিনি। শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা উপাচার্যের সফল নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার ফলে সেসনজট নিরসন সম্ভব হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে।

সাড়া জাগানো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন:
গান, নাচ, বিতর্ক, শুদ্ধাচার,সাংবাদিকতা, পরিবেশবাদী সংগঠন গুলো এখন পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। তার মধ্যে অন্যতম পরিবেশবাদী সংগঠন 'গ্রীন ভয়েস'। সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো ক্যাম্পাস প্রানবন্ত করতেছে সুরের মূর্ছনা গান, বাজনা ও মনোরম পরিবেশনা দিয়ে, টঙ্গের গান, রণন, উদীচী, গুনগুন, বিছনবাড়ি সাহিত্য আড্ডা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংসদ ফিল্ম এন্ড আর্ট সোসাইটি (ফ্লাস) বেরোবি।

সাংবাদিকদের একমাত্র সংগঠন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস)। বিতর্ক চর্চায় রয়েছে বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ডিবেট ফোরাম(বিআরইউডিএফ) ও বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ডিবেট অ্যাসোসিয়েশন (ব্রুডা), এছাড়াও ইংলিশ কালচার সোসাইটি (ইসিএস), ইকোনমিকস স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, ডিবেটিং হাউজ অফ পলিটিকাল সায়েন্স, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন স্টুডেন্ট সোসাইটি, এআইএস ক্লাব-একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ক্লাব, বেরোবি ম্যানেজমেন্ট নেট ও আদিস।

বৃক্ষ জাদুঘর:
সবুজে ঘেরা বেরোবি ক্যাম্পাসে চোখে পড়ে নান্দনিক ও অপরূপ সৌন্দর্যের হরেক রকমের গাছপালা। এই গাছ গুলো দেখে মনে হয় এ যেন এক বৃক্ষ জাদুঘর। আর এই জাদুঘরে সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নানান রকমের ফল- ফুল ও সৌন্দর্য বর্ধন কারি গাছ। ক্যাম্পাসে প্রকৃতির আশীর্বাদ ও নিবিড় চর্চায় গাছগুলো আরও সতেজও সবুজ হয়ে উঠেছে। পথ চলতে চলতে মনে হয় এ যেন বৃক্ষশোভিত নান্দনিক কোন বৃক্ষ জাদুঘরে হাঁটছি।

চিরচেনা এই ক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় ৪'শ প্রজাতির ৩৬ হাজার ফল, ফুল ও সুন্দর্যবর্ধন কারি গাছ। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আছে শাল, দেবদারু, পলাশ, কাউফল, আঁশফল, সফেদা, আলুবোখারা, আমলকী, বট, পাকুড়, হরীতকী, বহেরা, অর্জুন, কাইজেলিয়া, রাবার, সোনালু, বিলাতি গাব, জাত নিম, বুদ্ধ নারিকেল, কাঠবাদাম গাছগুলি সতেজ শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছায়ার পাশাপাশি সৌন্দর্য যেন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এখানে।

এছাড়াও একাডেমিক ভবনগুলোর সামনে দেখা মিলে অনেক দুর্লভ গাছের গ্লিরিসিডিয়া, জয়তুন, পারুল, হৈমন্তী, জয়ত্রী, ঢাকি জাম, তেলসুর, পুত্রঞ্জীব, কানাইডিঙা, হলদু, দইবোটা, ডুমুর, মহুয়া, পানিয়াল, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, চিকরাশি, নাগেশ্বর গাছ।

গুরুপূর্ন স্থাপত্যসমূহ:
সবুজে ঢাকা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে নান্দনিক স্থাপনা সমূহ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের স্মরণে রয়েছে 'স্বাধীনতা স্বারক'নির্মাণাধীন, শহীদ মিনার(অস্থায়ী), স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, 'বঙ্গবন্ধু মুরাল'। একটু বেলা গড়াতেই ভিড় জমে এই সব স্থানে, কেউ বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেতে উঠে, কেউ বা ব্যস্ত সহপাঠীদের সাথে স্টাডি সার্কেলে, কেউ বা গিটারের টুংটাং শব্দে গানের সুর তুলে। নানান রকম গানে সুরের মূর্ছনা তুলে শিল্পীরা।

এক নজরে উপাচার্য বৃন্দের নাম ও সময়কাল:
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান। মাত্র ৭ মাসের মাথায় ড. লুৎফরকে সরিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মু. আব্দুল জলিল মিয়াকে। অধ্যাপক ড. এম. লুৎ‌ফর রাহমান ২০ অক্টোবর, ২০০৮ [৬] হতে ৭ মে, ২০০৯ পর্যন্ত। অধ্যাপক ড. মু. আবদুল জলিল মিয়া ৮ মে, ২০০৯ [৭] থেকে ৭ মে ২০১৩ পর্যন্ত। অধ্যাপক ড. এ. কে. এম নুরুন্নবী ৮ মে, ২০১৩থেকে ৫ মে, ২০১৭ পর্যন্ত। অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ [৮] ১৪ জুন, ২০১৭ ১৩ জুন থেকে ২০২১পর্যন্ত। অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ [৯] ১৪ জুন, ২০২১ থেকে বর্তমান অবদি।

ঢাকা, ১২ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ