Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কুবিতে অন্যরকম ইফতার

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৫:১৪

কুবি শিক্ষার্থীদের ইফতার

চৌধুরী মাসাবি, কুবি: আছরটা ঘনিয়ে আসছে। কুবির নিস্তেজ ক্যাফেটেরিয়া, বিরান হয়ে থাকা কেন্দ্রীয় মাঠ, শহীদমিনার, মুক্ত মঞ্চ, আশে পাশের দোকান গুলোতে উৎসব জেগে উঠছে। ঈদ নয়! বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষার্থীদের গোটা দিনের সিয়াম সাধনা ভেঙে ইফতারের উৎসব।

গতানুগতিক ধারা ভেঙ্গে এই প্রথম রমজান মাসে খোলা রাখা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। সারাদিনের ক্লাস, পরীক্ষার ক্লান্তির অবসান ঘটে ইফতারে। ক্যাম্পাস বিকেল পর্যন্ত নিস্তব্ধ থাকলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই বেশ জমজমাট হয়ে উঠে। তাই ক্যাম্পাসে ইফতারের আমেজটা ভালোভাবে টের পাচ্ছে কুবিয়ানরা।

ইফতারের আগে কৃষ্ণচূড়া রোড ধরে সারিবদ্ধ ভাবে দলে দলে যেতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সবার যাত্রা কেন্দ্রীয় মাঠ। ইফতারের সময় কেন্দ্রীয় মাঠ হয়ে যায় মিলন মেলা। গোল হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে সিনিয়র-জুনিয়র, বন্ধু-বান্ধব মিলে ইফতার করছে। মুক্তমঞ্ছ এবং শহীদ মিনারেও চলে এই রেওয়াজ। অনেকে ইফতার করেছে হল, হলের ছাদে, মেসে কিংবা মেসের ছাদে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশের দোকান গুলো কিংবা ক্যাফেটেরিয়ায়।

সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র সকলে মিলে ক্লান্ত শরীরে দীর্ঘ ১৪ ঘন্টা সিয়াম সাধনার পর ইফতারের আমেজ ভিন্নরকম প্রশান্তি এনে দেয় সবার মাঝে। ইফতারের মধ্যেই এই মিলনমেলা সীমাবদ্ধ নয়। খাওয়া শেষে চলে গান, আড্ডা। একসাথে ইফতার করাতে যেনো অন্যরকম পরিতৃপ্তি। এই অনুভূতি ব্যক্ত করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিথিলা মিনহা, ইফতারের সময় কেন্দ্রীয় মাঠ যেনো এক সম্প্রীতির মিলনমেলা হয়ে ওঠে। ইফতারেই এই মিলনমেলা সীমাবদ্ধ নয়, ইফতার শেষে সবাই বসে সারাদিনে ক্লাস, পরিক্ষা, টিউশন এসব কর্মযজ্ঞ নিয়ে আলোচনা চলে দুই-তিন ঘন্টা। এক এক করে ব্যাচ থেকে দু'বার করলাম এমন মুহূর্তের টানে।

পারিবারিক ভাবে ইফতারে সময় একটি গুরুগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরিবারের সকলের সাথে ঘরের নানান স্বাদের বানানো ইফতারি খাওয়ার মজা অন্যরকম। এবার প্রথম পরিবারের বাহিরে ইফতার করছে অনেক কুবিয়ান। পরিবারে বন্ধন গুলোর সঙ্গ না পাওয়ায় অনেকের হতো চাপা কষ্ট থেকে যায়।

এমন একজন নবীন কুবিয়ান আফরিন জাহান প্রমি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম আবর্তনের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। পরিবার ছাড়া প্রথম ইফতারে অনুভূতি ব্যক্ত করে ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'পড়াশুনার তাগিদে পরিবার থেকে দূরে। সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এবার আমার প্রথম রমযান মাস উদযাপন। ইফতারের সময় পরিবারের সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণ, একেক জনের একেক কাজ ভাগাভাগি করা, খাবার সামনে রেখে আজানের অপেক্ষা ও একসাথে ইফতার করার মজাই আলাদা। এই অনুভূতি বলে বুঝানোর মতো না। একসাথে পরিবারের সকলকে নিয়ে ইফতার করার মধ্যে রয়েছে অন্যরকম প্রশান্তি'।

নবীনদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষার্থীরাও এ বছর প্রথমবার রোজায় উৎসব মুখোর ক্যাম্পাসটা উপভোগ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিভাগে ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে। অনেকে বিদায় জানিয়েছে কুবিকে। যারা আছেন তারাও শেষ বেলায় এমন আমেজ দেখে আবেগ আপ্লূত। যতটুকু পারা যায় তারা এই আমেজের সঙ্গী করে নিচ্ছে নিজেদের।

সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন তার ক্যাম্পাস জীবনের শেষ রমজান নিয়ে ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'ক্যাম্পাস জীবনের শেষ সময়ে এসে এমন একটা সময় পেয়ে খুব ই আনন্দ লাগছে। প্রতিদিনই এটা উপভোগ করার চেষ্টা করি। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হিন্দু-মুসলিম সকল বন্ধু, জুনিয়র, সিনিয়র অংশ নিয়ে থাকে। তারাবিহ শেষে গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে হলে গিয়ে সেহরী খাওয়া। সবকিছু যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরী করে'।

আর কিছুদিন পর রমজান মাস শেষ হয়ে যাবে। লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে বসবে না আর ইফতারের আয়োজন। হতো অন্যকোনো উৎসবে মাতবে লালমাটির ক্যাম্পাস। আবার দীর্ঘ এক বছর প্রতীক্ষার পর দেখা মিলতে পারে এই দিনগুলো।

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ