Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

‘দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২২, ০২:৫৪

লাইভ প্রতিবেদক: বগুড়ায় এসে টিউশনি করে ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনা মহামারি তার টিউশনির আয়ে বড়সড় আঘাত হানে। একটি বাদে সবকটি টিউশনি হারাতে হয় আলমগীরকে। এ কারণে বাধ্য হয়ে একটি বিজ্ঞাপন দেন তিনি। বগুড়া শহরের জহুরুল নগর এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো সেই ফটোকপির বিজ্ঞাপনে লেখা, ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’।

দু’বেলা ভাত জোটাতে পারছেন না আলমগীর কবির। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেছেন। করোনায় হারিয়েছেন সব টিউশনি। নাস্তার বিনিময়ে কাজ নিয়েছিলেন ফুসকার দোকানেও। কিন্তু চলছে না যে কিছুতেই।

ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এই করুণ গল্প। এতে বলা হয়, চাকরির খোঁজে ২০১৮ সালে ঢাকার সাভার এসেছিল বগুড়ার আলমগীর কবির। থাকতেন বন্ধুর মেসে, বিনা পয়সায়। বন্ধুর খাবারই ভাগাভাগি করে খেতেন।

একসময় বন্ধুর গার্মেন্টসে চাকরি হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যান আলমগীর। তখন সকালের নাস্তার বিনিময়ে রাস্তার পাশের এক ফুচকার দোকানে কাজ নেন। ঢাকার জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে এক পর্যায়ে বগুড়ায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এই বিজ্ঞাপন দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারা ফেলে দেয়। এতে পেশা হিসেবে বেকার লেখা রয়েছে। মোবাইল নম্বরসহ বিজ্ঞাপনে লেখা রয়েছে, সকাল ও দুপুরের খাবারের বিনিময়ে পড়ানো হবে।

৩২ বছর বয়সী আলমগীর হোসেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তিনি এখন বগুড়া শহরের জহুরুলগর একতলা মসজিদ এলাকার পাশের একটি বাড়িতে থাকেন। এখানেও বিনামূল্যে।

তবে ফ্রি পড়ানোর বিজ্ঞাপন ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় এখন কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন আলমগীর। এই সাবেক শিক্ষার্থী জানান, বিজ্ঞাপনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি পোস্ট করেননি। অপরিচিত একজন করেছেন। এই পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর থেকে অনেক ফোনকল পাচ্ছেন বলে জানান আলমগীর। কেউ কেউ এই পোস্টকে সরকারবিরোধী বলেও মন্তব্য করছেন।

দেয়ালে দেয়ালে এমন বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি এখন একটি টিউশনি করান। সেখান থেকে মাসে দেড় হাজার টাকা পান। এই টাকা দিয়ে দিনে একবেলা খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে যায়।

এছাড়া চাকরি আবেদন ও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রায়শই তার ঢাকায় আসতে হয়। এই যাওয়া-আসাতেও অনেক খরচ হয়ে যায়। যে কারণে সংকট দেখা দেয় তার খাবারের খরচে। সবকিছু মিলিয়ে নিজের জন্য দিনে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে কষ্ট হচ্ছিল আলমগীরের। তাই বাসার আশেপাশে ভাতের বিনিময়ে পড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপন দেন।

আলমগীরের সাথে আলাপ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ২০শে মে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শরাইল গ্রামে তার জন্ম। ২০০৭ সালে নিজ এলাকার শরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের কবির এসএসসি পাস করেন।

ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে আলমগীর বলেন, বাবার আয়ে সংসার চলত। তবে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণের টাকা ছিল না। পরে আমার মায়ের কানের দুল বিক্রি করে ফর্ম ফিলাপ করি। স্কুলে ব্যাচের মধ্যে আমার রেজাল্ট সবচেয়ে ভালো ছিল। মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫০ পেয়েছিলাম।

এইচএসসি পরীক্ষাতেও ব্যাচের মধ্যে আলমগীরের ফল সবচেয়ে ভালো হয়। ২০০৯ সালে স্থানীয় এক কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪ দশমিক ৫০ নিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। তার বাবা একজন পল্লী চিকিৎসক। নাম মো. কফিল উদ্দিন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আলমগীর সবচেয়ে ছোট। তার বড় ভাই রুহুল আমিন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। আর বড় তিন বোন রয়েছে।

সংকটে পড়ে পড়ানোর বিজ্ঞাপন দেয়ার ব্যাপারে আলমগীর বলেন, মানুষ বিষয়টি বাজেভাবে উপস্থাপন করছে। অনেকে বলছে, এটা সরকারের ব্যর্থতা। কিন্তু এটা সরকারের কোনো ব্যর্থতা না। মানুষ না বুঝেই বিভ্রান্ত হচ্ছে। এমনকি অনেক গণমাধ্যম আমার এই বিজ্ঞাপন নিয়ে নিউজও করেছে। কিন্তু তারা কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনি। এতে আমিও বিব্রত হয়ে পড়েছি।

চাকরির ব্যাপারে আলমগীরের সঙ্গে কথা হয়। জানালেন, তার বাবা প্রথমে পরামর্শ দিয়েছিলেন সরকারি চাকরির খোঁজ করতে। এরপর বাবা একদিন বলেন, এখন যা পাও, তাই করো। বাবার কথাতেই ঢাকায় এসেছিলেন আলমগীর। তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগুলোতে পাস করেছিলাম। কিন্তু যাওয়ার পরে তারা বলে, আপনার তো অভিজ্ঞতা নেই।

পরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করলাম। চাকরি হয় একদম ছোট একটি পদে। বেতনও কম। মাত্র ৮ হাজার টাকা। পড়ার সময় পেতাম না। চাকরির জন্য পরীক্ষার দিনও ছুটি পেতাম না। এ জন্যই চাকরি ছেড়ে দেই। পরে আবার বগুড়া ফিরে আসেন আলমগীর। কিন্তু মেসে থাকতে খরচ বেশি হচ্ছিল।

ওই সময় জহুরুলনগরের পরিচিত এক আপুর কাছে বাসস্থানের সমস্যার কথা জানাই। ওই আপুর বাবা তাদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু এই বাসায় তারা কেউ থাকেন না। তারা ঢাকায় থাকেন। বাসাতে আমি একা থাকি, বলেন আলমগীর।

কথোপকথনের শেষের দিকে আলমগীর কবির বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। কারো অনুদানের প্রয়োজন পড়েনি। মাস্টার্স পাশ করেছি। এখন চাকরি নেই। চাকরির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে পরীক্ষাও দিচ্ছি। তবে এরমধ্যে সরকারি কয়েকটি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় টিকেছি। এখন ভাইভার জন্য ডাক পড়েছে। একটা সময় অবশ্যই চাকরি পাব।

বিজ্ঞাপনের শোরগোলে আলমগীর যথেষ্টই বিব্রত। তিনি বলেন, দুবেলার খাবারও আমি এমনি চাইনি। পড়ানোর বিনিময়ে চেয়েছি। এটা খুবই স্বাভাবিক চাওয়া। কিন্তু মানুষ একে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে এখন লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। আমি এই বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের উন্নয়নবিরোধী কোনো কথা বলিনি। এমন কিছু বোঝাতেও চাইনি। এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। [কার্টেসি: মানবজমিন]

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ