Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে একটি স্ট্যাটাস

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বার ২০২১, ০২:৪৪

আজাহার ইসলাম: ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের জের ধরে হত্যা, ধর্ষণ, ভাংচুর, মারামারি, গ্রেফতার, বিভিন্ন পদ কিংবা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের ঘটনা অহরহ। পত্রিকা খুললেই প্রায়শই এমন সংবাদ চোখে পড়ে। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই স্ট্যাটাসের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। করোনায় গুজবের প্রবণতা আরো বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও প্রয়োজনীয় নীতিমালার অভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে সব ঘটনা, ভাইরাল ইস্যু নিয়ে স্ট্যাটাস না দিলে বন্ধুমহলে সম্মান থাকবে না, আধুনিক যুগে এসে বন্ধুরা ব্যাকডেটেট ভাবতে পারে। বর্তমান প্রজন্মের এমন কিছু প্রবণতাও এর পিছনে দায়ী।

সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের জন্য অনেকে ভুল তথ্য ছড়ায়। তথ্য শেয়ার করার আগে যাচাই করার সদিচ্ছা প্রায় শূণ্যের কোটায়। গুটিকয়েক ব্যক্তি তথ্য যাচাই করলেও অধিকাংশই করে না। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করেন, ফেসবুকে গুজবের মূল কন্টেন্ট শতকরা এক ভাগ৷ বাকি ৯৯ ভাগ ছড়ানো হয়৷ যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় দাঙ্গার ঘটনাও দেখা গেছে। ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর, রামুসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় ফেইসবুকে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

দেশে ছেলে ধরার গুজবও এই ফেইসবুকের মাধ্যমেই ছড়িয়েছিল। পদ্মা সেতুতে শিশুর রক্ত আর মাথা লাগার ওই গুজব শুধু ফেসবুকেই সীমবাদ্ধ থাকেনি, মানুষের মুখে মুখেও ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ছেলেধরা সন্দেহে অনেককেই জীবন দিতে হয় গণপিটুনিতে৷ ঢাকায় এক মা ও তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তির খোঁজ খবর নিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে জীবন হারান৷ হাস্যকর হলেও সত্য, ফেইসবুকে যেমন গুজব ছড়ায়, আবার সেই গুজবের বিরুদ্ধেও কথা হয়৷ ভুল তথ্য ছড়ানোর পাশাপাশি ফেইসবুকে ধর্মীয় উগ্রতা, সাইবার বুলিং, ট্রলিং, ব্লাকমেইলিংসহ নানা অপরাধ ক্রমশ বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে ফেইসবুক তার বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে।

পৃথীবিতে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ফেইসবুক। পোল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাটের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৫০ কোটি ছাড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ নারী এবং পুরুষ ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা ২ কোটি ১২ লাখ। বর্তমানে মুচি থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত সবাই ফেইসবুক ব্যবহার করছে (পেশাকে ছোট করার উদ্দেশ্যে নয়, উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছি)।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আমাদের জন্য যেমন আশীর্বাদ, তেমনি অভিশাপও। বিজ্ঞানি নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রমতে, প্রত্যেক ক্রিয়াই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ফেইসবুকে তারই ফল দেখা যাচ্ছে। অনেকটা ফুটবলকে দেওয়ালে ছুঁড়ে মারার মত অবস্থা দাঁড়িয়েছে। যত জোরে ছুঁড়বেন, ততটাই ফেরত পাবেন। আপনার একটি স্ট্যাটাসে বা একটি স্ট্যাটাস/ভিডিও শেয়ারে দেশ ও জাতি উদ্ধার হয়ে যাবে না। খুব বেশি উপকারেও আসবে না। কিন্তু আপনার ও আপনার চারপাশের মানুষের জীবন বিষিয়ে তুলতে পারে। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে অনেকের ক্যারিয়ারও। অনেকে হারাতে পারে জীবন কিংবা পঙ্গুত্বের বোঝা বইতে হতে পারে সারাজীবন। তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্কতা খুবই জরুরি। আগে ভাবুন, সত্যতা যাচাই করুন, তারপর তথ্য শেয়ার করুন।

লেখক: আজাহার ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
ই-মেইল: azharislam729@gmail.com

ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ