Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ভিন্ন আয়োজনে মেডিকেল শিক্ষার্থীর জন্মদিন পালন

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০১৭, ০৪:৪০

 



.


শিশির মজুমদার: হায়রে সমাজ! হায়রে সভ্যতা। হায়রে আধুনিকা। এ কেমন কথা। জন্মধাত্রি মাকে রাখেন আশ্রমে আর সন্তান আরামে সময় কাটান স্ত্রী পুত্রদের নিয়ে। এই হলো আজকের সমাজ। এমন সমাজে ভাল যে নেই এমনটি নয়। অনেকেই ভাবেন অন্তত একটা ভাল কাজ করি। তারই ধারা বাহিকতায় আজকের এই আয়োজন।

মেডিকেল শিক্ষার্থী রাবিয়া সুলতানা রিমি। জন্ম বার্ষিকী ছিল তার। তিনি চাইলেন আয়োজনটি ভিন্নভাবে করতে। যেই ভাবা সেই কাজ। একঝাঁক সহপাঠি মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলে গেলেন বৃদ্ধাশ্রমে। সাহাব উদ্দীন মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী রিমির জন্মদিনটি পালিত হলো অসংখ্য বৃদ্ধাদের ঠিকানা ‘আপন নিবাসে’।

কেক কাটা, বৃদ্ধাদের মাঝে খাবার বিতরণ, আনন্দ ভাগাভাগি ও সুখ-দুঃখের খোঁজ নিলেন রিমিসহ শিক্ষার্থীদের সেচ্চাসেবী সংগঠন ‘ড্রিমার্স গ্রুপ’। আপন নিবাসে অবস্থান করছেন ৩০ জনের মতো বৃদ্ধা। ওই খানেই তাদের শেষ ঠিকানা।

'মা' সন্তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল হলেও বৃদ্ধ বয়সে সেই সন্তানই হয়ে ওঠে মায়ের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে অনেক মায়েরই সৌভাগ্য হয় না সন্তানকে আঁকড়ে থাকার। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রমই হয়ে ওঠে তাদের শেষ ঠিকানা। কিন্তু সেই বৃদ্ধাশ্রমে কেমন আছেন বৃদ্ধ মায়েরা?


তাদের অনেকে ছেলের পরিচয় কিংবা বাড়ির ঠিকানা ও বলতে চান না এখন। যদি সমাজে প্রিয় সন্তানের সম্মান ক্ষুন্ন হয়? তারা জানালেন, দোয়া করেন আমার সন্তান যেন সুখে থাকে।

কথাগুলো আপন নিবাসে অবস্থানরত এক একজন বৃদ্ধার। আলাপচারিকতায় তাদের চোখের পানি যেন চল চল করছিল। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে অনেক কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করেন তারা। শেষ বয়সে নাতি-নাতনির সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে দিন যাপন করার সময় যাদের, ঠিক ওই সময়টিই পার করছে তারা স্বজনহীন আপন নিবাসে।

একদিকে স্বজন ছাড়া একাকী জীবন। অন্যদিকে বৃদ্ধাশ্রমের নানা সীমাবদ্ধতা। সার্বিক দেখাশুনার জন্য রয়েছে তিন নারী কর্মী। তারাই বৃদ্ধাদের দেখাশুনার কাজ করছেন। পরিচালক হিসেবে আছেন আপন নিবাসের প্রতিষ্ঠাতা সেলিনা সুলতানা শেলি।
জানাযায়, দেশে দরিদ্র প্রবীণদের সংখ্যা শতকরা ৩৭ জন। বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা এবং সদস্য দুটোই ধীরে ধীরে বাড়ছে।

বৃদ্ধাশ্রমে যারা থাকেন তাদের শতকরা ৭০ ভাগই নারী এবং তাদের বেশিরভাগই কারো না কারো মা। সেলিনা সুলতানা শেলি জানালেন, মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর সময় একবার ভেবে দেখুন একদিন তো আপনিও বৃদ্ধ হবেন। তখন আপনার সন্তানও যদি আপনাকে রেখে আসে কোনো এক বৃদ্ধাশ্রমে! পারবেন কি তখন বুকের ভেতর পাথরচাপা সেই করুণ কষ্ট সইতে? ঠিক যেমন কষ্ট সয়ে চলেছেন আপন নিবাসে আপনহীনা বৃদ্ধা আপনার মা?


ড্রিমার্স গ্রুপের আমন্ত্রণে আপনহীনাদের পাশে উপস্থিত হয়েছিলেন, মো. ইকবাল হোসাইন পরিচালক (প্রশাসন) বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজ, কুতুব তারিক পরিচালক ড্রিমার্স গ্রুপ, এইচ এম শিশির মজুমদার নিবার্হী পরিচালক ড্রিমার্স গ্রুপ, ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মুকিত সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ সহ অসংখ্য মেডিকেল শিক্ষার্থী।


সোমবার রাজধানীর অদূরে ‘আপন নিবাস’ নামক এক বৃদ্ধাশ্রমে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন অসংখ্য বৃদ্ধা মা খোলা আকাশপানে। পিঠে হাত রেখে জানতে চেয়েছিলাম কেমন আছেন মা? মাথা ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকলেন। শীতল কণ্ঠে বললেন, বেঁচে আছি। অনেকেই আসে আমাদের অবস্থা জানার জন্য। তোমরাও হয়ত দেখতে এসেছো। কেমন আছি, তাই না? তাও তো আমাদের মনে করো তোমরা।

কিন্ত আমাদের সন্তানরা তো ওদের জীবনের সবচেয়ে বড় খুশির দিনগুলোতেও আমাদের মনে করে না। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরের জিয়াবাগে এক হিতৈশী নারী গড়ে তুলেছেন ‘আপন নিবাস’ নামের এক বৃদ্ধাশ্রম। সেখানেই স্থান হয় ৩০ জনের মতো আশ্রয়হীনা বৃদ্ধার।

প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে আপন নিবাসে বয়সী নারীদের সংখ্যা। গাজীপুর গিভেন্সি গ্রুপের বৃদ্ধাশ্রম, সাভার বৃদ্ধাশ্রম এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের বৃদ্ধাশ্রমেও এ সংখ্যা বাড়ছে।


তাদের অনেকেই বাড়ি, গাড়ি বিক্রি করে দুধভাত তুলে দিয়েছিলেন প্রিয় সন্তানের মুখে। বড় করেছে সন্তুানদের। ভেবেছিলেন গাড়ি-বাড়িও টাকা পয়সা দিয়ে কী হবে। সন্তান মানুষের মতো মানুষ হলেই তো তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে, তবে ছেলের কাছে মিলেনি তাদের আশ্রয়। সবকিছু হারিয়ে এখন বৃদ্ধাশ্রমেরই বাসিন্দা তারা।

 

ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ