Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিভিন্ন সূচকে আজ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০২:২৬

সৈয়দ নাজমুল হুদাঃ স্বপ্ন সেটাকে বলে যেটা মানুষ কল্পনা করে থাকে। কল্পনাতে সেই জিনিসটা দেখা দেয় যেটা মানুষ তার চিন্তার জগৎতে নাড়াচাড়া করে। মানুষ তার কল্পনার বিষয় সমূহ স্বপ্নের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য অবিরাম চেষ্টা করে থাকে। তেমনি ১৯৭১ সালে রচিত একটি সংবিধান, মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও সর্বোপরি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসাবে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যার জন্ম তিনি হলেন বাঙ্গালি ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বঙ্গালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় দিবস উপলক্ষে ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভাষনে বলেন- “সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। শোষিত, নির্যাতিত ও লুণ্ঠিত বাংলাদেশের সমাজদেহে সমস্যার অন্ত নেই। এই সমস্যার জটগুলোকে খুলে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে।”

১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে বঙ্গবন্ধু বলেন- “আমি কি চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসে খেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক।”

১০ জানুয়ারি ১৯৭২, পালাম বিমান বন্দর, নয়াদিল্লী, বঙ্গবন্ধু বলেন- “এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায় অভিযাত্রা। অবশেষে আমি নয় মাস পর আমার স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলায় ফিরে যাচ্ছি। এ নয় মাসে আমার দেশের মানুষ শতাব্দীর পথ পাড়ি দিয়েছে। আমাকে যখন আমার মানুষদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তখন তারা কেঁদে ছিল, আমাকে যখন বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তখন তারা যুদ্ধ করেছিল, আর আজ যখন আমি তাদের কাছে ফিরে যাচ্ছি, তখন তারা বিজয়ী।

আমি ফিরে যাচ্ছি তাদের নিযুত বিজয়ী হাসির রোদ্রকরে। আমাদের বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন আমাদের সামনে, তাতে যোগ দেওয়ার জন্য আমি ফিরে যাচ্ছি আমার মানুষের কাছে।”

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- “সহকর্মী ভাইয়েরা আমি বলে দিচ্ছি, আমি সেন্টিমেন্টাল বাংলাদেশের মানুষের সাথে অ্যাটাচড্। কথাটা তোমাদের কাছে পরিস্কার করে বলে দেবার চাই। তোমরা সকলে জানতা ইচ্ছা করলে আমি বহু আগে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতাম। এ প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে কাঁটা বলে মনে হয়। আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাঁসি ফুটাতে না পারি, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দঃখী, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় না, তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারব না। পারব না, পারব না।

আমার জীবন বৃথা হয়ে যাবে। আমার যৌবন কারাগারের অন্তরালে কাটিয়ে দিয়েছি এ দেশের মানুষের জন্য। আমি ওদের কাছে থাকতে চাই, ওদের সাথে মরতে চাই, এর বেশি আমি আর কিছুই চাই না।” ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধনমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

এগুলো বাস্তবায়নে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেন। কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিসহ ব্যবসা-বাণিজ্য আমদানি রপ্তানির প্রতি জোরদার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরন, পুন:গঠন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, বিভিন্ন বাহিনীর পুন:গঠন, শিক্ষা উপকরণ সহজলভ্য ও বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিকে নামমাত্র মূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, মদ, গাঁজা, জুয়া, নেশাদ্রব্য নিষিদ্ধকরণ, ইসলাম শিক্ষার প্রসারে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুন:গঠণ, দুস্থ মহিলাদের কল্যাণে নারী পুনর্বাসন ব্যবস্থা, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠণ, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, কৃষিঋণ বিতরণ, নতুন নতুন শিল্প কল-কারখানা স্থাপন ও প্রয়োজনে জাতীয়করণসহ উন্নয়নের বৃহৎ পরিকল্পনা।

ক্ষুধা, দারিদ্র ও শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু। কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তনে সদা সচেষ্ঠ ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা। বঙ্গবন্ধু একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ সেই স্বপ্ন পূরণের পথে। উন্নয়ন কতকগুলো সামষ্টিক সূচক যেমন- প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, মাথাপিছু আয়, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ উর্ধ্বগামী প্রক্রিয়া সমূহ। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত ভারত পাকিস্থান দু’টি দেশ। ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গকিলো মিটার নিয়ে ভারত।

সেখানে বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৮,৪৬০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ভারতে প্রায় ১৩৭ কোটি আর বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭২ সালে বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের ক্যাটাগরির প্রচলন করেছিলেন ১৯৭১ সালে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত করাতে সক্ষম হয়েছিল।

এই ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্তির পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত আশা ছিল, স্বাধীনতার পরবর্তী চরম সংকটজনক অর্থনৈতিক অবস্থা কাটিয়ে ওঠার পর এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের পরিচয় ঝেড়ে ফেলে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণে সক্ষম হবে। সম্প্রতি সময়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব প্রশ্নে বলেছেন- “বাংলাদেশের মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব পেলে অর্ধেক মানুষ ভারতে যাবে।”

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন ঐ দেশেরই জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক করণ থাপার। হিন্দুস্থান টাইম্সে তিনি লিখেছেন- “রেড্ডির এই মনোভাব কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত এবং আক্রমনাত্মক। তিনি জানেনই না যে, অধিকাংশ সূচকে না হলেও জীবনযাত্রার মানসহ অনেক সূচকে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। প্রথমত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার। আমাদের প্রবৃদ্ধি যেখানে ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে সেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ৮ শতাংশের দিকে।

দ্বিতীয়ত, ভারত যখন ১৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স দিয়ে চীনকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন, তখন বাস্তবতা হলো চীনের বিনিয়োগ যে দু’টি দেশে যাচ্ছে, বাংলাদেশ তার একটি। ফলে লন্ডন কিংবা নিউইয়র্কের রাস্তাগুলো এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ভরে আছে। কিন্তু সেখানে লুধিয়ানা কিংবা তিরপুরে তৈরি পোষাক খুবই কম। করণ থাপার আরও লিখেছেন- “বাংলাদেশ পুরুষ ও নারীর গড় আয়ু ৭১ ও ৭৪ বছর।

অন্যদিকে ভারতের ৬৭ ও ৭০ বছর। ভারতে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২২.৭৩ কিন্তু বাংলাদেশে ১৭.২২। ভারতে নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২৯.৯৪, বাংলাদেশে ২৫.১৪। ভারতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার হাজারে ৩৮.৬৯, বাংলাদেশে ৩০.১৬। এরপর আসা যাক নারীদের বিষয়ে। বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি নারীর অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ এবং এটা বেড়েছে।

অন্যদিকে ভারতে এই হার ২৩ শতাংশ এবং গত দশকে তা ৮ শতাংশ কমেছে। ছেলে মেয়েদের হাই স্কুলে ভর্তির বিষয়ে, যা দেখে ভবিষ্যতের উন্নয়নের ধারণা পাওয়া যায়। এটি ভারতে ০.৯৪ আর বাংলাদেশে ১.১৪। বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাস সভ্যতা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ছিলো, ছিল না কোন জাতিসত্ত্বা, কোন ভূখন্ড বা দেশ। দেশ পরিচালনার জন্য ছিলনা কোন দক্ষ শাসক বা জনশক্তি।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, খাদ্য, বাসস্থান, যোগাযোগ, বাণিজ্য, দক্ষ সশস্ত্র বাহিনী ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু নির্দিষ্ট কোন দল বা মতের জন্যেই জন্ম গ্রহণ করে নাই। ইতিহাসের পাতায় ও সভ্যতার বিকাশে এই নামটি লাল সবুজের পতাকায়, রক্তের ধারায়, স্মৃতির পাতায় মিশে আছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অনাগত কাল ধরে অবিস্মরণীয় হয়ে রবে।

আজ ২০২০ সাল এই মহান নেতার জন্মশত বার্ষিকী আর ২০২১ সাল হবে তার স্বপ্নের সোনার বাংলার সূবর্ণজয়ন্তী। এই সূবর্ণজয়ন্তীতে আমরা তাঁর কৃতিকর্ম, আদর্শ ও দিকদর্শন বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু ভারত পাকিস্থান না বিশ্বের অনেক দেশকে পিছনে ফেলে উন্নত জাতিতে রূপান্তরিত হবো। এটাই হবে আমাদের মুজিব বর্ষের দীপ্তযাত্রা।

লেখক: সৈয়দ নাজমুল হুদা।
শিক্ষক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।

ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ