Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

এ কেমন কক্সবাজার!

প্রকাশিত: ২৪ আগষ্ট ২০১৮, ২২:০১

কক্সবাজার লাইভ: এ যেন ভিন্ন এক কক্সবাজার। এরা দেশী না বিদেশী বুঝার উপায় নেই। লেবাসে এক্কবারে ভিনদেশী। চালচলনও আলাদা। মেকআপ-গেটাপে বিদেশীদের ছাপ। যেন অচেনা- অজানা দেশের নাগরিক। আসলে তারা এদেশীয়। কিন্তু সেজেছে ভিনদেশীদের মতো। অনেকেই আপত্তিকর পোষাকও আচরণ করছেন কক্সবাজারে গিয়ে। চেনা দুস্কর।
কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে প্রাণ ফিরেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের শহর কক্সবাজারে।

ঈদের দিন অল্পসংখ্যক পর্যটক এলেও বৃহস্পতিবার এসেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক। ফলে ভরপুর হয়ে আছে এখানকার হোটেল-মোটেল, গেস্ট ও রেস্টহাউসগুলো। পদচারণা বেড়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতেও। বছরের অন্যসময় রুমভাড়ায় কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও ঈদ উপলক্ষে তারকা হোটেলসহ সকল আবাসিক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যেই রুম ভাড়া দিয়েছে। এরপরও ভ্রমণপিপাসুরা রুম বুকিং দেয়ায় কোথাও কক্ষ খালি নেই।

এদিকে সৈকত ছাড়াও জেলার পর্যটন স্পট ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, হিমছড়ি, ইনানী ও রামুর বৌদ্ধপল্লীতেও ভ্রমনপিপাসুদের ভিড় জমছে। তবে এসব পর্যটকদের মাঝে স্থানীয়দের সংখ্যা বেশি। যাদের মাঝে চট্টগ্রাম ও আশপাশের পর্যটকও রয়েছে। যারা একদিন একরাতের জন্য বেড়াতে বের হয়ে ফিরে যাবেন শুক্রবার (২৪ আগস্ট)।

সবমিলিয়ে বর্ষার বিদায় লগ্নেও প্রাঞ্জল পর্যটন স্পট ও সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে চালু হয়নি দেশের প্রসিদ্ধ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের জাহাজগুলো। পর্যটকদের সমুদ্রস্নান ও পর্যটন স্পটে নিরাপদে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন, লাইফ গার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন মানতে পর্যটকদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বলেছেন সাবধানে চলাচল করতে।

কক্সবাজার ভ্রমণ

 

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, টানা ছুটি থাকায় কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন এমনটা ধরে নিয়েই কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে ছিনতাই, ইভটিজিং, হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া প্রদানের শিকার না হন সেটি নিশ্চিত করে শহরের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাব, পুলিশের ৪৫০ সদস্য কাজ করছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুটি পর্যটন জোনে সার্বক্ষণিক অবস্থান করছে।

ঈদের ছুটিতে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে কক্সবাজারে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটছে। কিন্তু বর্ষার শেষ সময় হওয়ায় অন্য বছরের ন্যায় উপচেপড়া ভিড় নেই। আগেই কক্সবাজারের চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট ও রেস্টহাউসের অধিকাংশ রুম বুকিং হয়ে গিয়েছিল। হোটেল-মোটেল মালিকরা বলছেন, পর্যটকরা কক্সবাজার এলে কেবল শহরের সমুদ্রসৈকতেই ঘুরে বেড়ান না; পাশাপাশি ইনানীর পাথুরে সৈকতেও যান ভ্রমন পিপাসুরা।

হিমছড়ির পাহাড়ি ঝরনা ও দরিয়ানগর পর্যটনপল্লী­, টেকনাফের মাথিনকূপ, কুদুমগুহা, নেচার পার্ক, নাফ নদীর জালিয়াদ্বীপ, মিয়ানমার সীমান্ত, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধপলি­সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে যান। পর্যটকদের সমুদ্রদর্শনের জন্য সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে চেয়ার ও ছাতাগুলো সাজিয়ে বসানো হয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈদের বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে প্রিয়জনের সাথে নিয়ে ঈদের দ্বিতীয দিন কক্সবাজারে এসেছে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক। তাদের মাঝে জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে এসেছে আরও ২০-২৫ হাজার ভ্রমণপিপাসু।

তারা আরও জানান, ঈদের আগে থেকেই ২৪ ও ২৫ আগস্ট সৈকতপাড়ের সকল হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং হয়ে যায়। বছরের অন্যসময় রুমভাড়ায় কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও ঈদ উপলক্ষে তারকা হোটেলসহ সকল আবাসিক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যেই রুম ভাড়া দিয়েছে।

সৈকতের চেয়ার-ছাতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে জানান পর্যটকরা সমুদ্র দর্শনের জন্য চেয়ারে বসলে হকার কিংবা বখাটেরা যাতে উৎপাত না করে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

পর্যটকের সঙ্গে ভালো আচরণ করার জন্য কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সদস্য ইয়ার মুহাম্মদ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটক আগমন বেড়েছে। সরগরম হয়ে উঠেছে হোটেল, মোটেল, রেস্তোর্রা, চা দোকানসহ দর্শনীয় স্থানগুলো।

এরপরও ভ্রমণপিপাসুরা রুম বুকিং দেয়ায় কোথাও কক্ষ খালি নেই। সপ্তাতিক ছুটি হিসেবে এ দুইদিন কমপক্ষে দুই লাখ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করবে। কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, শহরের কলাতলীর সৈকত ঘেঁষে এক থেকে দেড় বর্গকিলোমিটারে তারকা মানের ১০টিসহ প্রায় অর্ধসহস্রাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ ও ফ্ল্যাট রয়েছে।

পুরনো শহরের ভেতর রয়েছে আরও ৩০টির মতো হোটেল। সবমিলিয়ে কক্সবাজারে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্র সৈকতের গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের ডায়বেটিকস পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কেউ করছেন গোসল, গান গাইছেন কেউ, আবার কেউ প্রিয়জনকে সাথে খালি পায়ে সাগরের নোনা জলের ছোঁয়া নিচ্ছেন আর বসে ঢেউয়ের নাছন দেখছেন অনেকে। যুবাদের অনেকে ব্যস্ত ছবি তোলায়। উদ্যমী কেউ জেট স্কি আবার কেউ চালাচ্ছেন বিচ বাইক। ঘোড়ার পিঠে সাওয়ারী হয়েছেন কেউ কেউ।

এছাড়াও পর্যটনস্পট হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নিযে ঘুরছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা পেশাজীবীরা। ভিড় বাড়াচ্ছেন কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির ও রামুর বৌদ্ধ বিহারেও।

এছাড়া ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া ঈদগাঁওর ফার্নিসার ব্যবসায়ী আবুল কাশেম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, পর্যটন এলাকায় জন্ম ও বসবাস হলেও কাজের চাপে কখনো তা ঘুরে দেখা হয় না। দুই ঈদে একটু ফ্রি সময় হাতে পাই। ছেলে-মেয়ে বেড়াতে তোড়জোড় করায় সাফারি পার্কে জীবন্ত প্রাণী দেখতে এসেছি।

শুক্রবার সৈকত দেখাতে নিতে হবে বাচ্চাদের। ঈদের ছুটিতে ভিড়ের মাঝে পর্যটকরা যাতে কেনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন তারই লক্ষ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশও বেশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের লোকবল বাড়ানো হয়েছে।

পর্যটক নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সি-ইন ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা থাকছে। এছাড়া হিমছড়ি, দরিয়ানগর ও ইনানী পর্যটন স্পটে রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দফতর বা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ট্যুুরস্ট পুুলিশের এসপি আরও বলেন, গোসলে নামার আগে পর্যটকদের জোয়ার-ভাটার সময় দেখে নেয়ার পরামর্শ সম্বলিত নির্দেশনা রয়েছে সৈকতের বিভিন্ন স্পটে।

এছাড়া মাইকিং করে জানানো হচ্ছে জোয়ারের সময় সৈকতে সবুজ পতাকা ওড়ানো থাকে। তখন সৈকতে নামা যায়। ভাটার সময় ওড়ানো থাকে লাল নিশানা। তখন সমুদ্রে নামা বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেছেন সংশ্লিস্টরা।


ঢাকা, ২৪ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ