রাশেদ রাজন, রাবি লাইভ: নেই কোন সাইনবোর্ড। নেই কোন বিজ্ঞাপন। ছোট্ট একটি দোকান। দোকানেও নেই তেমন কোন সাজসজ্জা। তবুও রাজশাহীর বাটার মোড়ের জিলাপির দোকানে ভোজন রসিকদের ভিড় লেগেই থাকে। এই দোকানের আছে সুদীর্ঘ ৬৬ বছরের ঐতিহ্য। ৬৬ বছর আগে জিলাপির যেমন স্বাদ ছিল এখনো ঠিক তেমনি অক্ষুণ আছে।
শুধু রাজশাহী নয় আশপাশের জেলার মানুষের কাছে একনামে পরিচিত ‘বাটার মোড়ের জিলাপি’। জীবনে একবার হলেও এই জিলাপির স্বাদ নেন নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একবার খেলেই যেন জিহবায় স্বাদ লেগে থাকে বহুদিন। জিলাপির বিশেষত্বই হল ৬৬ ধরে একই স্বাদ, একই মান বজায় রয়েছে।
জিলাপি কড়াই থেকে তুলতে না তুলতেই দোকানে উপচেপড়া ভোজনরসিকদের পেটে চলে যায়। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এই জিলাপি কিনতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে, অনেক ভোজনরসিকরা। আর রমযান মাসে ইফতারিতে এ জিলাপি মানে তো কথায় নেই। তাই এখন এ জিলাপির কদর ও চাহিদা দু’টোই বেড়েছে।
সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি এই জিলাপি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন মণ জিলাপি বিক্রি হয়। মজাদার ইফতারের জন্য মহানগরবাসীদের কাছে যেন অমৃত স্বরূপ এই বাটার মোড়ের জিলাপি।
১৯৫২ সালে রাজশাহী নগরীতে ‘রানীবাজার রেস্টুরেন্ট’ নামের একটি দোকানের পথচলা শুরু হয় ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিনের হাত ধরে। তখন মিষ্টির পাশাপাশি জিলাপি বিক্রি করতেন তিনি। ১৯৭৪ সালে তমিজ উদ্দিনের ছেলে শোয়েব উদ্দিন মিষ্টি বাদ দিয়ে শুধু জিলাপি দিয়ে রেস্টুরেন্ট চালু করেন।
সময়ের পরিবর্তনে রানীবাজার রেস্টুুরেন্টের নাম হারিয়ে যায়। যা পরে স্থানের নাম অনুসারে বাটার মোড়ের জিলাপি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কালের বিবর্তনে ছয় যুগ পার হওয়া বাটার মোড়ের জিলাপির বর্তমানে হাল ধরেছেন তমিজ উদ্দিনের চার নাতি।
দোকান মালিক শামীম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমরা চার ভাই শুধুমাত্র বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতেই এখনো ধরে রেখেছি জিলাপি ব্যবসা। যা ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে তিনি সকলের কাছে এই রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী খাবারটি চালু রাখাতে সকলে কাছে আহবান করনে তিনি।
তিনি আরো বলেন, দোকানে এখন দুই জন কারিগর রয়েছেন। মো. সাফাত ২৩ বছর ধরে এবং মো. শফিক ৪২ বছর ধরে এ জিলাপি তৈরি করে আসছেন। বর্তমানে এই দোকানে ৮ জন কর্মচারী কাজ করেন।
জিলাপি কিনতে আসা রাজশাহীর টিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে বিশেষ স্বাদের বাটার মোড়ের জিলাপি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এর জন্য ঐতিহ্যবাহী খাবার জিলাপি কিনতে শুধু রমজান নয় যে কোন সময় যে কোন আয়োজনে এখান থেকেই জিলাপি কিনা হয়।
অনেকেই বলেন, ‘রাজশাহীতে এসে যদি বাটার মোড়ের জিলাপি না-ই খেলেন, তাহলে তো সব মজাই হারালেন।’
ঢাকা, ২২ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: