ফয়জুল আল আমীন: কে না চায় সুখি হতে? সবাই তার জীবন বদলাতে চায়। পাল্টে দিতে চায় ধুলি-কনা। মুছে দিতে চায় সব গ্লাণি। এমন জীবন সবারই চাওয়া পাওয়ায় রয়েছে। সেই বিখ্যাত গানটি হলো,
সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।।
সেই সুখি, সমৃদ্ধিশালী জীবন হোক সকলের। আমরা জীবনে সবাই সুখ পেতে চাই। সুখী হতে চাই। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে সুখ বলতে কী বুঝায়? কীভাবে সুখী হওয়া যায়? তবে সংক্ষেপে বলা যায়, আমরা যা চাই, তা সুখের জন্য চাই। আর চাওয়া পূর্ণ না হলেই যেন সুখের হানি ঘটে। সুখ নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
এক জীবনে আমাদের কত যে চাওয়া, চাওয়ার যেন শেষ নেই। এক চাওয়া পূর্ণ হওয়ার পরই ছুটে চলি নতুন কোনো চাওয়া পূর্ণ করতে। পৃথিবীতে কেউ নেই যে—তিনি সুখ পেতে চান না। কিন্তু এই যে এত কাঙ্ক্ষিত সুখ—এই সুখের উপাদানগুলো কী? টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, নাম-যশ-খ্যাতি-প্রতিপত্তি এমনসব হাজারো বিষয় যে আমাদের চাহিদার তালিকায় থাকে। এসব পেলেই যে সুখ পাওয়া হলো তা কিন্তু নয়! তবে সুখকে যদি আমরা জাগতিক, বৈষয়িক চাহিদার মাপকাঠিতে ব্যাখ্যা করতে চাই তাহলে সুখ বলতে আমাদের এসব ইচ্ছাপূরণকেই বুঝে থাকি।
ভিন্ন অর্থে সুখে থাকা মানে ভালো থাকা। যে ভালো থাকা শুধুই জাগতিক, বৈষয়িক চাহিদা পূরণের মধ্য দিয়ে পাওয়া হয় না। তাই বলা যায়, জাগতিক বিষয়-আশয় সুখী হওয়ার অন্যতম উপাদান হলেও একমাত্র উপাদান নয়। যারা একমাত্র উপাদান ভাবে তাদের জীবনে সুখ আলেয়ার মতোই অলীক।
আমাদের ইচ্ছের পরিতৃপ্তি যে সর্বদাই সুখদায়ক—একথা মানতেই হবে। কিন্তু ইচ্ছের ক্ষেত্রে অবশ্যই আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকা চাই। আমি যা চাচ্ছি, যখন চাচ্ছি, যেমনভাবে চাচ্ছি তেমনভাবেই পাচ্ছি। অতএব আমি সুখী মানুষ। এমনটি কখন সম্ভব? যখন আমার ইচ্ছেগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়ন্ত্রণহারা ইচ্ছে নিয়ে কখনও সুখী হওয়া যায় না। জীবন, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, সম্পর্ক, স্বপ্ন—সবকিছুতেই নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রণ শান্তি আনে আর শান্তিতে মিলে সুখ। এক্ষেত্রে বলা যায়, সুখদায়ক বাহ্যিক উপাদানের পাশাপাশি মানসিক দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ।
সন্তুষ্টি সম্পর্কে আমাদের ধারণা যতটা স্বচ্ছ হবে, সুখের ধারণাও আমাদের জীবনে ততোই অর্থবহ হবে। আবার আমরা আমাদের আবেগ ও অনুভূতিকে কীভাবে পরিচালনা করছি সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে—এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কেননা আবেগ ও অনুভূতির সাথে আমাদের সুখী হওয়া বা দুঃখ পাওয়ার একটা যোগসূত্র রয়েছে। এক্ষেত্রে বলতে হয়, আমাদের রাগ, দুঃখ, অভিমান সবই হয় একটা প্রত্যাশার জায়গা থেকে। প্রত্যাশা পূরণে বাধা এলেই আমাদের দুঃখ হয়। যেমন সারাবছর ভালো কাজ করেও কাজের স্বীকৃতি না পেলে মন খারাপ হয়। এমতাবস্থায় অবশ্যই আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আবেগ নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে দুঃখ বাড়ে। মনে রাখবেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সুখ লাভের অন্যতম প্রধান উপায়।
তিনিই প্রকৃতঅর্থে সুখী, যিনি বৈষয়িক চাহিদার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারও রপ্ত করতে পেরেছেন। এ পর্যায়ে তিনি
আকাশ-কুসুম কল্পনা করে সময় নষ্ট করবেন না। নিজের কাজের সমালোচনা শুনে মর্মাহত হবেন না, বরং সেই অনুযায়ী সংশোধন করার চেষ্টা করবেন। কারও অপ্রত্যাশিত আচরণে রাগ বা দুঃখ হলেও ঝোঁকের মাথায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন না। মনে রাখতে হবে, অনেক সময় পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব না হলেও প্রতিক্রিয়ার ওপর অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে হবে। যা আপনাকে দুঃখ, যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবে এবং সুখ এনে দেবে।
জীবনে কোনো কিছুকেই অপরিহার্য ভাববেন না। যদি ভাবেন তাহলে সেটা না পেলে জগতের সবকিছু পেলেও আপনি সুখী হবেন না। যেমন—টাকা প্রয়োজন। তাই বলে টাকা রোজগার যেন নেশায় পরিণত না হয়। সফল হতে চান, কিন্তু লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে। আবার স্থির করা লক্ষ্য অবশ্যই যৌক্তিক হওয়া চাই। অবশ্যই রক্ষা করতে হবে ভারসাম্য। ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারলে অনেকাংশেই দুঃখ লাঘব হয় এবং সুখের পাল্লা ভারী হয়। আবার একথাও মনে রাখা চাই যে, সুখ-দুঃখের হাত ধরেই জীবন এগিয়ে চলে।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা চাই। এ সময় অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে নিজেকে সংযত রাখতে হবে। পরশ্রীকাতর হবেন না কখনও। অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। দুঃখের মধ্যেও সুখের সন্ধান করতে হবে। যা পাননি তা নিয়ে না ভেবে, যা পেয়েছেন তা নিয়ে তৃপ্ত হোন—দেখবেন সুখ নিজেই ধরা দেবে আপনার কাছে। অনেকের তুলনায় নিজেকে তখন অনেক বেশি সুখী মনে হবে।
পরিবারে অবশ্যই মন খুলে কথা বলার সুযোগ রাখতে হবে। নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, কোনো অন্যায় করা যাবে না, সমব্যথী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতে হবে, সহমর্মী হওয়ার প্রবণতাও থাকা চাই—এসবই কাউকে সুখী করে তুলে। আপনাকে অবশ্যই অন্যের আবেগ, প্রতিক্রিয়া, কষ্টের মাত্রা বুঝতে শিখতে হবে। একবার যদি হিংসার সংকীর্ণ গণ্ডি পার হয়ে জীবনের বৃহত্তর ক্যানভাসে রং দিতে শেখেন তো আপনার জীবনেও সুখের রং লাগতে বাধ্য। জীবনকে ভালোবাসতে হবে। পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন করতে হবে সুদৃঢ়। অন্যের সুখে হাসতে শিখতে হবে। তবেই না নিজের জীবনেরও সুখের সন্ধান মিলবে। মনের অজান্তেই উচ্চারণ করে বসবেন সত্যিই আমি কত সুখী!
ভিডিও:
ঢাকা, ২৪ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// এএসটি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: