Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

খানদানি বাহন টমটম

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বার ২০১৬, ০৪:২২

 



লাইভ প্রতিবেদক: ঘোড়ার গাড়িতে কে না চড়তে চাই, ছোট বড় সকলেরই প্রিয় এই ঘোড়ার গাড়ি। শৈশবে ঘোড়ার গল্প অনেকে শুনেছি। পঙ্খিরাজ ঘোড়া। রাজপুত্রের টগবগিয়ে চলা তেজি ঘোড়া। “ও আমার পাগলা ঘোড়া রে, কই থাইকা কই লইয়া যাস ”। কুদ্দুস বয়াতির এই গানটিতেও  ঘোড়ার কথা আছে। এই ঘোড়া দিয়ে যাত্রীদের বসার জায়গার সাথে চাকা লাগিয়ে তৈরি করা হয় ঘোড়ার গাড়ি। প্রাচীন কাল থেকেই এর কদর দেখা যায়। এমনকি এর কথা রূপকথা-উপকথার কল্পকাহিনীতেও আছে যা ঐতিহ্যের অংশ।

একসময়  ঢাকা শহর ও দেশের গ্রামঞ্চলে এই ঘোড়ার গাড়িই ছিল যাতায়াতের অন্যতম বাহন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে দেখা না গেলেও বিশেষ করে পুরান ঢাকায় এখনও এই গাড়ির কদর রয়েছে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই গাড়ি অনেক জায়গায় “টমটম” নামে পরিচিত।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইংরেজ শাসন আমলে এদেশে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। ১৮৫৬ সালে সিরকো নামীষ একজন আর্মেনীয় প্রথম ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন করেন। যা তখন ‘ঠিকা গাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল।

ব্রিটিশ শাসনের সময়ে এই ঘোড়ার গাড়ি ঢাকা শহরে চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা-ঘাটের সংস্কার করা হয়। শুরুর দিকে ইট-সুরকি, সিমেন্ট-বালু পরে পিচঢালা ইট দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হয়েছিল। অতীতে রাজা-বাদশাহ, অভিজাত শ্রেণি এবং রাজপরিবার সদস্যদের পরিবহন ও বিভিন্ন কাজে ঘোড়ার গাড়িকে ব্যবহার করতেন। এছাড়াও রণাঙ্গনের রসদ সরবরাহের প্রধান বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। প্রথমদিকে শুধু অভিজাত শ্রেণি এর ব্যবহার করলেও পরে সাধারণ মানুষও যাতায়াতের কাজে ব্যবহার শুরু করে। দেশের ঐতিহ্যের সাথে ১৫০ বছরেও বেশি সময় পার করেছে এই প্রাচীন বাহন।  

বর্তমানে পুরান ঢাকার সদরঘাট, ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, বকশীবাজার ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় ৩০-৩৫টি ঘোড়ার গাড়ি যাত্রীবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখনও সদরঘাট-গুলিস্তানে যাত্রী পরিহনে ব্যবহার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের তৃত্বীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের জামশেদ আমিন ও রাজিম চৌধুরীর কাছে ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ঐতিহ্যের বাহন হওয়ায় মাঝে মধ্যে সখের বসে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে  গুলিস্তান পর্যন্ত যাতায়াত করি। এমনকি সাধারণ যাত্রীবাহী বাসগুলোর চেয়ে চাপ কম থাকায় ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করা অনেক আনন্দের।  

যাত্রী পরিবহন ছাড়াও বিয়ে, পূজা, বিভিন্ন দিবসের শোভাযাত্রায়, সিনেমার শুটিংসহ রাজনৈতিক কাজে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী গোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এসব কাজে গোড়ার গাড়িকে ফুল, রঙিন কাগজ কেটে নকশা ও বিভিন্ন রঙের ফিতা দিয়ে সাজানো হয়। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বিয়েতে গোড়ার গাড়িকে বিশেষ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই সময় কোচোয়ান ও সহযোগির জন্য থাকে বিশেষ এক ধরণের পোশাক।

লাইনম্যান মোহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, অনেক দিন ধরে আমি এখানে লাইনম্যানের কাজ করছি। ২০-২২জন মালিকের গোড়ার গাড়িগুলো দেখতে হয় আমাকে। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাকে লাইনম্যান হিসেবে ঘোড়ার গাড়িগুলো দেখতে হয়। ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসা আগের মত আর হয় না।

সাধারণত, ঘোড়ার গাড়িতে এক জোড়া ঘোড়া ব্যবহার করা হয়। এমনকি মাঝে মধ্যে একটা ঘোড়ার ব্যবহারও দেখা যায়। চার চাকার এই ঘোড়ার গাড়িতে যাত্রী আসন সংখ্যা ১৪। কোচোয়ান ও সহযোগির জন্য রয়েছে আলাদা আসন। পুরান ঢাকাই লোহা ও স্টীলের বানানো দুই ধরনের ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায়। একটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করতে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। এরমধ্যে একটি ঘোড়া কিনতে গেলে লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়।

কোচোয়ানদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে ঘোড়ার গাড়ির এই ঐতিহ্যের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোচোয়ান শুক্কুর জানান, প্রতিদিন একটি গাড়ি সর্বোচ্চ ১২ বার গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসা-যাওয়া করতে পারে। জনপ্রতি ভাড়া ২০টাকা করে নির্ধারণ করা আছে। তবে মাঝে মধ্যে ২৫-৩০টাকা করে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, ভালো বাজারে গাড়ি চালিয়ে আয় করি ২৩০০টাকা আর খারাপ বাজারে আয় করি ১২০০-১৩০০টাকা। সেখান থেকে মালিক প্রতিদিন আমাকে দেয় ৩০০টাকা।
আগের তুলণায় ঘোড়ার খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। ঘোড়ার খাবারের মধ্যে গম, ছোলা, ভুসি ও ঘাসের দাম বাড়াতে এক জোড়া ঘোড়ার পেছনে খরচ হয় ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা। তাই ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসায় আগের মত লাভ হচ্ছে না। তবুও পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আজও টিকে আছে পুরান ঢাকার খানদানি বাহন “টমটম”।


ঢাকা, ২০, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// এআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ