“সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে,
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর উঠে শিরশিরিয়ে…”
শ্রদ্ধেয়া কবি সুফিয়া কামালের কবিতার লাইন আর বাংলার অপরূপ প্রকৃতি মিলে-মিশে একাকার। ষড়ঋতুর এ বাংলাদেশে প্রকৃতি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নিজেকে সাজিয়ে নেয় বৈচিত্র্য আর বিশালতা দিয়ে। আর এ পরিবর্তনের ছোঁয়া এসে লাগে প্রতিটি মানব মনে-প্রাণে, অনুভূতিতে। শিশির সিক্ত কুয়াশাচ্ছন্ন মিষ্টি সকাল, ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস, মনে করিয়ে দেয় শীত এসে গেছে। শীতের আমেজ সর্বত্রই।
প্রকৃতি যেন তার অবারিত হাত বাড়িয়েই আছে সৌন্দর্যের সবটুকু নিয়ে। প্রকৃতির এ ভিন্ন ভিন্ন সাজ মানব মনেও ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব বিস্তার করে। প্রকৃতির এ লাবণ্য যেন প্রতিটি মানব মনকে ছুঁয়ে যায় খু-উ-ব কাছ থেকে। হেমন্তের শেষ লগ্ন, এখনও মাঠে মাঠে পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ। ঘরে ঘরে চলছে নূতন ধানের মুড়ি, মুড়কি, নানা রকম পিঠাপুলি আর পায়েসের বিশাল আয়োজন।
এ যেন বাঙালির চিরায়ত হৃদয়ের, প্রাণের এক বর্ণিল উৎসব। পুরো শীত জুড়ে থাকবে অতিথি আপ্যায়নের এ আয়োজন। শীতের নানা রকম অনুষ্ঠান কিংবা স্বপ্নীল সব অনুসঙ্গ নিঃসন্দেহে শীত ঋতুকে পরিপূর্ণতা দান করে।
অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার প্রতিটি জলাশয়, খাল-বিল, হাওর, নদী-নালা। নাম না জানা কতনা পাখিদের মেলা বসে ঝিলের ধারে, বিস্তৃত জলরাশিতে। কি এক অজানায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে মন-প্রাণ। বিচিত্র সব মুগ্ধতায় চারিদিক হয়ে ওঠে ততোধিক উপভোগ্য আর বর্ণিল।
শীতের আগমনী বার্তা উৎসবের আমেজ নিয়ে আসুক প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে শান্তির পরশ। গাছে গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে রোদের স্বর্ণালি আভার ঝিকি-মিকি, সবার মনকে করুক আরও রঙিন।
বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বেঁচে থাকুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আবহমান নবান্ন উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা সম্প্রসারিত হোক যুগে-যুগে, কালে-কালে। সবশেষে শীতের উষ্ণতায় স্বস্তি আনুক সবার জীবনে এবং শীতের তীব্রতায় অসহায় শীতার্তদের জন্য সহানুভূতির হাত হোক আরও প্রসারিত। নবান্ন উৎসবের সম্প্রীতি হোক সবার, জয় হোক মানবতার। শীতের আবহকে স্বাগতম।
লেখিকা: ইসমত পারভীন রুনু, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মী, সিলেট।
ঢাকা, ১৯, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: