ময়মনসিংহ লাইভ : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিবদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম পাঁচ কোটি ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই অভিযোগে ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও সাবেক ভিসি তার বিরুদ্ধে করা মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট ময়মনসিংহ শহরের গোলকীবাড়ি এলাকার ১১/এ রহমান ম্যানসনের বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের পদার্থ বিভাগের শিক্ষক মো: নুরুল বাকী খান বাদী হয়ে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৪০৯ দণ্ড বিধিতে মামলাটি দাযের করেন। বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোজাখ্খির হোসাইন জাকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিবদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম ক্যাম্পাসে বরাদ্দকৃত বাসভবনে বসবাস করলেও প্রতিমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের মাধ্যমে সর্বমোট ২৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। ঢাকাস্থ তার বাসার জন্য আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ক্রয় বাবদ ২৫ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করেছেন। ঢাকার বাসার জন্য প্রতিমাসে স্টেশনারি দ্রব্য, ডিশ বিল, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, ইন্টারনেট, মোবাইল ও পত্রিকা বিলসহ অর্থ কমিটি ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন ব্যতিত নিজেই অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে গ্রহণ করেছেন।
তার মেয়াদকালে এসব খাতে অবৈধ উপায়ে প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মাসাৎ করেছেন। বিভিন্ন মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে প্রতিমাসে ছয় হাজার টাকা মোবাইল বিল গ্রহণ করেছেন। ঢাকায় ভাড়া বাড়ি থাকার কারণে ঢাকায় ভ্রমন করলে ডিএ প্রাপ্য না হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি ও অফিসিয়াল কাজে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন তিনি। যোগদানের পর থেকে বিদায় অবদি ডিএ বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও ভিসি পদে যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ জন কর্মচারি মাস্টাররোলে নিয়োগ দিয়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহন করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বিল্ডিং নর্থ এর ভার্টিক্যাল এক্সটেনশন কাজের প্রায় ২২ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ সর্বনিম্ম দরদাতা আব্দুস সালামকে (জেভি) না দিয়ে দোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে দ্বিতীয় সর্ব নিম্ম দরদাতা ভালুকা থানা বিএনপি’র সভাপতি ফখরুদ্দিন বাচ্চুর প্রতিষ্ঠান ভাওয়াল কনষ্ট্রাকশনকে প্রদান করেছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ উৎকোচের বিনিময়ে ফখরুদ্দিন বাচ্চুর প্রতিষ্ঠান ভাওয়াল কনষ্ট্রাকশনকে প্রদান করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় সম্মানী বাবদ পূর্বের ভিসি ড. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ১৫ হাজার টাকা গ্রহণ করতেন কিন্তু প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম তা বৃদ্ধি করে এক লাখ টাকা করেন। ২০১৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রমোদ ভ্রমনের সময় পাজারো জীপ দুর্ঘটনায় পতিত হলে মেরামত বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি রেজিষ্ট্রার খন্দকার এহসান হাবীব (সাময়িক বরখাস্ত) ও জামাত-বিএনপি সমর্থিত সাদা দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. ইমদাদুল হুদা এবং ভিসির ছাত্র প্রফেসর বিজয় ভূষণ দাসের সহয়তায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় পূর্ববর্তী বছরের ইংরেজি প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেন ভিসি মোহীত উল আলম।
২০১৭ সালে ক্যাম্পাসে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন ও ইন্টারভিউ ছাড়াই তার পিএস আব্দুল হালিমের মাধ্যমে আটজন শিক্ষক নিয়োগে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন বলেও মামলার বিবরণে উল্লেখ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মামলায় উল্লেখিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমার সম্মাণ ক্ষুন্ন করতেই আমার বিরুদ্ধে এসব অযৌক্তিক অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি জানান, ক্যাম্পাসে ভিসির বাংলো নির্মিত হয়েছে দেড় বছর আগে। এরআগে তিনি ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা বাড়িভাড়া নেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য অভিযোগগুলো তিনি অস্বীকার করেছেন। যা কিছু করা হয়েছে তা নিয়ম মেনেই করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: