Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

জৌলুস হারিয়েছে ‘হালখাতা’ উৎসব

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ২২:২৯

জৌলুস হারিয়েছে ‘হালখাতা’ উৎসব

রিদুয়ান ইসলাম, জবি: বছর ঘুরে আবারও আসছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের প্রথমদিন। নববর্ষে আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি ‘হালখাতা’। নববর্ষের অবিচ্ছেদ্য বলা যায় এই হালখাতাকে। বাংলা সন চালুর পর থেকেই নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে হালখাতা দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে কালের বিবর্তন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে ভাটা পড়েছে হালখাতা সংস্কৃতিতে। ব্যবসায়ী মহলে হালখাতার রেওয়াজ থাকলেও তা আর আগের মতো জৌলুসপূর্ণ নয়।

ব্যবসায়ের পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ করে নতুন হিসাবের খাতা খোলার আনন্দ আয়োজন, আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিকতার নামই ‘হালখাতা’। নতুন বছরের শুরুতেই নতুন খাতা খোলার উৎসব হালখাতা। এমন বিভিন্নভাবে হালখাতার সংজ্ঞা করা যায়। একটা সময় ছিল বৈশাখ আসলে গ্রামে-গঞ্জে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা নিয়ে আলাদা উদ্দীপনা কাজ করতো, উৎসবের আমেজে মেতে উঠতো তারা। তবে বর্তমান সময়ে এসে হালখাতার উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকটাই কমে গেছে। এ ছাড়া কম্পিউটারের মাধ্যমে হিসাব করার ফলে লালসালুতে বাঁধাই করা হিসাব খাতার চল অনেক কমে গেছে। এখন অনেকটা নিয়ম রক্ষার জন্যই হালখাতার আয়োজন করা হচ্ছে।

তথ্যমতে, ১৬১০ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে ঢাকায় সুবেদার ইসলাম খান চিশতি তাঁর বাসভবনের সামনে প্রজাদের শুভ কামনা করে মিষ্টি বিতরণ ও উৎসবের আয়োজন করতেন। খাজনা আদায় ও হিসাব নিকাশের পাশাপাশি চলতো মেলা, গান বাজনা ও হালখাতার অনুষ্ঠান। পরবর্তী সময় ব্রিটিশ আমলে ঢাকার মিটফোর্ডের নলগোলার ভাওয়াল রাজার কাচারিবাড়ি, ফরাশগঞ্জের রূপলাল হাউস, পাটুয়াটুলীর সামনে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে পুণ্যাহ অনুষ্ঠান হতো। সেই থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলায় পয়লা বৈশাখে হালখাতা উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

আগেরকার দিনে হালখাতা উৎসবে মিষ্টিমুখ করানো হতো ক্রেতাদের, এ সময় তাদেরকে লুচি আর রসগোল্লা, জিলাপি, বালুশাই বা রসগ্গজা, খাজা ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। এখন আর সেই দিন নেই। তবে এ ঐতিহ্য মেনে কোথাও কোথাও হালখাতা হয়। কিন্তু ক্রেতারা আগের মতো সাড়া দেন না। কেউ ব্যাংকে কিংবা বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেন। এখন আর উৎসব হয় না আগের মতো। এ সময়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কম্পিউটার দখল করে নিয়েছে এ খাতার জায়গা। তবে পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী তাদের ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ককে আজও অমলিন করে রেখেছেন। হালখাতার রীতি অনুসরণ করেই বৈশাখের প্রথম দিনে উৎসব বাঙালির অনন্য ঐতিহ্য ‘হালখাতা’ উদ্‌যাপন করেন। তারা প্রতিবছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশেষ করে জুয়েলারি ও মুদি দোকানিরা ক্রেতাদের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য হালখাতার আয়োজন করেন।

একটা সময় রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ধুমধাম করে হালখাতা অনুষ্ঠিত হলেও বর্তমানে এই ঐতিহ্যের প্রভাব তেমন একটা নেই বললেই চলে। দেখা মেলে না নিত্য পণ্যের কোনো আড়তে ব্যবসায়ী-ক্রেতার সেতুবন্ধনের এ আনুষ্ঠানিকতা। সেসময় বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের শেষ দিন ধুঁয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নানা জাতের ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হতো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান। জুয়েলারিসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের সামনে ‘শুভ নববর্ষ, ‘শুভ হালখাতা’ ইত্যাদি লেখা ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে দিয়ে বর্ণিলরূপে রাঙিয়ে তুলতেন তাদের দোকান পাট। মাইকে বাজানো হতো- ‘যাবার আগে দোহাই লাগে একবার ফিরে চাও, আবার তুমি আসবে কবে আমায় কথা দাও ... ।’ ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, রইবোনা আর বেশিদিন তোদের মাঝারে...' ইত্যাদি গান।

তবে নিয়ম রক্ষার জন্য হলেও রাজধানীর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা হালখাতা উৎসবের আয়োজন করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য হালখাতার আয়োজন করা হয়। আগের মত আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন এখন করা হয় না।

শুক্রবার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, বাংলাবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজার, ও চকবাজারের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধোয়ামোছার কাজ করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। সাজিয়ে-গুজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সরঞ্জাম। পয়লা বৈশাখের জন্য অনেকে আবার মিষ্টির দোকানে মিষ্টিন্ন অর্ডার দিয়েছেন।

হালখাতা উপলক্ষ্যে দোকান সাজসজ্জা করে বসছেন শাঁখারীবাজার স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী সবুজ রায়। তিনি বলেন, 'ছোটবেলা থেকে বাবা-জ্যাঠাদের হালখাতার আয়োজন করতে দেখে এসেছি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো আমাদের অনেকেই হালখাতার আয়োজন করে। যদিও এখন ডিজিটাল যুগ। কম্পিউটারে সব হিসাব করা হয়। বাকিও তেমন থাকে না। ফলে তেমন একটা বকেয়া আদায় হয় না। তারপরও ঐতিহ্য রক্ষায় হালখাতা করব।'

বাংলাবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী জগমোহন দাস বলেন, ‘প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের দিন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা হালখাতা উৎসবের আয়োজন করেন। এবারও অল্প পরিসরে করেছি বলা যায় নিয়ম রক্ষার জন্য। সকাল থেকেই দোকান খোলা হলেও ক্রেতা ও দেনাদারদের সমাগম নেই বললেই চলে। এমনটা যে হবে তা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম।’

সর্বজনীন উৎসব হিসেবে ‘হালখাতা’ ছিল বাংলা নববর্ষের প্রাণ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের বাপ-দাদার বংশ পরম্পরায় পাওয়া আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে এখন আর আগের মতো বর্ণিল নয়। ব্যবসায়ীদের চিরায়ত সংস্কৃতির ঐতিহ্য ‘হালখাতা’ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ।

 

ঢাকা, ১৪ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএফ

 

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ