Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

৫১ বছর বয়সে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী হাসিনা খাতুন!

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:৫৮

৫ম শ্রেণির ছাত্রী হাসিনা খাতুন

ঝিনাইদহ লাইভ: অন্ধকার থেকে আলোয় আসতে চান ৫১ বছর বয়সী হাসিনা খাতুন। নিজে লেখাপড়া না জানলেও তার বিশ্বাস, যার ভিতরে শিক্ষার কোনো আলো নেই, সে অন্ধকারে আছে। তাই তিনি মধ্য বয়সে এসেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চান। আলোকিত করতে চান সমাজকে।

হাসিনা খাতুন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল কাশেমের স্ত্রী। ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়া হয়নি হাসিনা খাতুনের। অভাবের কারণে দ্রুত বিয়েরপিঁড়িতে বসতে হয়। সংসারের বেড়াজালে আটকে যায় জীবন। সেই থেকে সংসার ছেলেমেয়ে নিয়ে হাসিনার ব্যস্ততম জীবন। তার সংসারে স্বামী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। নিজে লেখাপড়া না জানলেও ছেলেকে বানিয়েছেন গ্র্যাজুয়েট।

হাসিনা খাতুন এখন ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ৫ম শ্রেণিতে মোট ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল ২৭। বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতিদিনই স্কুলে আসেন হাসিনা খাতুন। লেখাপড়ায়ও খুব মনোযোগী তিনি। তার সঙ্গে পড়া সহপাঠীরাও খুব খুশি তাকে পেয়ে।

হাসিনা খাতুন জানান, তার ইচ্ছা ছিল সে লেখাপড়া করবেন। এই বয়সে চাকরি কিংবা অন্য কোনো কারণে তিনি লেখাপড়া করতে চান তা নয়। জ্ঞানার্জন করায় তার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সময়-সুযোগ আর হয়ে উঠছিল না হাসিনা খাতুনের। পাশের বাড়ির এক পুত্রবধূর কাছে পরামর্শ করে ভর্তি হয়ে যান প্রাইমারি স্কুলে। তার লেখাপড়া করার ইচ্ছা দেখে শিক্ষকরা ভর্তি করে নেন তাকে।

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন জানান, সহপাঠীরা তাকে কেউ দাদি আবার কেউ চাচি বলে ডাকে। অবসর সময় তাদের মাঝে মাঝে বিভিন্ন গল্প শোনান। তাদেরও ভালো সময় কাটে। প্রতিদিন তাদের সঙ্গেই স্কুলে আসেন হাসিনা। আবার স্কুল ছুটি হলে একসঙ্গেই বাড়ি যান।

তৌহিদুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী জানায়, প্রথম শ্রেণি থেকেই তাদের সঙ্গে হাসিনা দাদি পড়েন। একসঙ্গে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করছে সে।

স্কুলটির শিক্ষক সীমা রানী ভট্টাচার্য ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘লেখাপড়ার প্রতি হাসিনা খাতুনের খুব আগ্রহ। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন। লিখতে ও পড়তে পারার জন্য তিনি স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। এখন তিনি সবই পারেন। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে খুবই সহযোগিতা করেন।’

ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমেনা বেগম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘এই বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ছাত্রী হওয়া সত্যিই বিরল। হাসিনা খাতুনের লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। তার আগ্রহের ফলে তাকে ভর্তি নিয়েছি। সংসার সামলে নিয়মিত স্কুলে আসেন তিনি। শিক্ষকরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। যারা লিখতে ও পড়তে পারেন না তারা হাসিনা খাতুনের মতো স্কুলে আসলে দেশ নিরক্ষরমুক্ত হবে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হাসিনা খাতুন ৫১ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় একটি জিনিস প্রতিয়মান হয় যে শিক্ষার কোনো বয়স নেই, শিক্ষার কোনো বাধা নেই, যদি যে কেউ যে কোনো বয়সে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হয়, শিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হয়, সরকারের দোয়ার অগণিতভাবে খোলা আছে।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমি যদি আমার লোকলজ্জা ফেলে ভালো কাজে এগিয়ে যেতে চাই সমাজ তার পাশে আছে। যার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে হাসিনা খাতুন।’


ঢাকা, ২৫ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিইউ //এমএফ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ