Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
অস্বাভাবিক পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত

২০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে তিন শিক্ষক যে বিশ্ববিদ্যালয়ে!

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০২:২৭

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

মোজতাহীদ প্লাবন,জাককানইবি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) দর্শন বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে। বর্তমানে এই বিভাগটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭০ জন। এই ১৭০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য বিভাগটিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুইজন। মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়েই চালানো হচ্ছে ৪টি ব্যাচের পাঠদান কার্যক্রম।

একই শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। শিক্ষক সংকটের কারণে গুণগত পাঠদানের অভাব এবং ভয়াবহ সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে তিনজন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু হয় দর্শন বিভাগের। এর পরে বিভাগটিতে আরও তিনটি ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও বাড়েনি শিক্ষক সংখ্যা। তিনজন শিক্ষকের একজন চাকরি ছাড়ায় সেই পদটিও এখন ফাঁকা রয়েছে। একই শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ৬০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে তিনজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। চারটি শিক্ষাবর্ষে বিভাগটিতে বর্তমানে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও এখন পর্যন্ত বিভাগটিতে নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ এবং পরিসংখ্যান বিভাগেও৷

স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগে ৬টি ব্যাচে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র পাঁচজন যেখানে আবার একজন শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। পরিসংখ্যান বিভাগে ৪টি ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র চারজন। এ ছাড়াও বিভাগটিতে ৩টি কম্পিউটার ল্যাব থাকলেও সেগুলো পরিচালনা করার জন্য নেই কোনো ল্যাব এটেন্ডেন্ট।

বৈশ্বিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ধরা হয়-প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির দর্শন বিভাগে প্রায় ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগে প্রায় ৭৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন এবং পরিসংখ্যান বিভাগে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। শুধু উপরের চারটি বিভাগ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগের প্রায় অধিকাংশ বিভাগেই শিক্ষকের সংকট প্রকট।

ইউজিসির ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই ফোকলোর বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ , হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, এনভায়ারমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড.এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের সময়ে অনিয়ম করে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রমে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি)। এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষকের সংকট আরো প্রকট হচ্ছে।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষক থাকায় কর্মরত শিক্ষকদের উপর টপিক লোডও অনেক বেশি হচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষককে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪-৫টি করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। আবার অনেক সময় একজনের একাধিক ব্যাচের দায়িত্ব থাকায় সঠিক সময় ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া ব্যাহত হচ্ছে। যদি কোনো ব্যাচের ক্লাস বাদ দেওয়া হয় তাহলে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্তত শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে কষ্টের মধ্যেও অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. রিয়াজুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘আমাদের বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৪ বছর পার হয়ে ৫ বছর চলছে। বিভাগে শিক্ষক মাত্র তিনজন। বিগত প্রায় ৪ বছরে এই বিভাগে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন আমাদের ৪টি ব্যাচে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ৩ জন শিক্ষক দিয়ে। এতে ক্লাস, পরীক্ষা এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ৪টি ব্যাচের পাঠদান কার্যক্রম চালানোর জন্য যেখানে আমাদের শিক্ষক প্রয়োজন ৮-১০ জন সেখানে শিক্ষক আছে মাত্র ৩ জন। পাঠদান এবং গবেষণা কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আমাদের বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’

স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. রাকিবুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘আমাদের বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অস্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। ইতিমধ্যে আমরা শিক্ষক সংকটের কথা অবহিত করে প্রয়োজনীয় বিধি মোতাবেক জনবলের চাহিদাও দিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মৌখিকভাবেও আমরা সেটি জানিয়েছি। এমনকি ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী টিচিং লোড ক্যালকুলেশন করেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইউজিসি আমাদের সংকটটি অনুধাবন করতে পারছে না। এই মুহূর্তে শিক্ষক সংকট যে অবস্থায় উপনীত হয়েছে তাতে করে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ সংকটের তড়িৎ সমাধান প্রয়োজন।’

পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আব্দুল মুয়ীদ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘বর্তমানে পরিসংখ্যান বিভাগে ৪টি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে কিন্তু শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৪ জন, যা বিভাগটি চালানোর জন্য একেবারেই অপ্রতুল। তা ছাড়াও প্রথম ব্যাচের বি এস সি প্রোগ্রাম এই বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তাই এই বছরই বিভাগে এম এস সি প্রোগ্রাম চালু করা উচিত কিন্তু এই স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়ে এম এস সি চালু করা প্রায় অসম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিসংখ্যান বিভাগে ৩টি কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে কিন্তু কোনো ল্যাব এটেন্ডেন্ট নেই যে কারণে ল্যাবগুলির কার্যক্রম পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বিভাগ থেকে প্ল্যানিং কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে লোকবলের চাহিদা চেয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি কিন্তু এখনো কোনো সমাধান হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. তপন কুমার সরকার ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী যে অনুপাত থাকা প্রয়োজন সেই অনুপাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে শিক্ষক নেই। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘আমরা নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি কিছু কিছু বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। আমাদের ভিসি মহোদয়ও এ সংকট নিরসনে কাজ করছেন। আমরাও এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করব।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড.সৌমিত্র শেখর ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘আমরা ইউজিসির কাছে প্রয়োজনীয় চিঠি দিয়েছি। ইউজিসি থেকে পদ এলেই আমরা বিজ্ঞাপন দিব।’

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘যেসব বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে এ রকম ৪০-৪৫ জন শিক্ষকের চাহিদা দিয়ে একটি তালিকা ভিসি মহোদয় আমাদের পাঠিয়েছেন। এগুলো চাইলেই তো আর সাথে সাথে দিয়ে দেওয়া যায় না। সরকারের কাছ থেকে টাকা পেতে হয় তারপর এই পদগুলো ছাড় হয়।’


ঢাকা, ২৩ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএফ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ