Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

তারুণ্যের ভাবনায় বাংলা ভাষা

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০০:৫৭

১৯৫২ থেকে ২০২২। আজ থেকে সত্তর বছর পূর্বে সালাম, বরকত, জব্বারেরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের লক্ষ্যে ঢাকার পিচঢালা পথে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। বিশ্বে এমন ইতিহাস বিরল যে জাতিকে ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, বাংলা জুড়ে আছে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পূর্তির লগ্নে এসে একুশে ফেব্রুয়ারি ও বাংলা ভাষাকে নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নরত কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিগুলো তুলে ধরেছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪ডটকম-এর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

একুশে ফেব্রুয়ারি যেনো ম্লান হয়ে না যায়

ফুলের কদর প্রথম বুঝতে পারি একুশে ফেব্রুয়ারিতে। তখন বুঝতাম ফুলের জন্ম শুধু শহীদ মিনারের জন্য। ভাষার জন্য যে ভায়েরা নিজের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করেছে, এই ফুল শুধু তাদের শুভা পায়। উপশহরের উপকণ্ঠে আমার বিদ্যালয় ছিল। ছিল না কোন শহরের কৃত্তিমত্তা। জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে তেমন হৃদয় জাগানো আয়োজন হত না যতটা হতো একুশে ফেব্রুয়ারিতে। দিবস মানেই আমরা বুঝতাম একুশে ফেব্রুয়ারি কে, বছরের এই একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করতাম অধীর আগ্রহে। আমরা আমাদের বিদ্যালয় কে নিজের হাতে সাজাতাম। বর্ণিল সাজে বিদ্যালয় সেজে উঠত।

শারমিন আক্তার

 

সারা রাত জেগে বড় ভাইয়ারা শহীদ মিনার বানাত। আমাদের বিদ্যালয়ে তখন স্থায়ী কোন শহীদ মিনার ছিল না। বাঁশ বেত রঙিন কাগজে তৈরী করা হত শহীদ মিনার। সেদিন কাঁচা হাতের ছোঁয়ায় বাঁশ ও বেত যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠত। সেই শহীদ মিনারে একটা ফুল দিতেই হবে। বসন্তের হিমেল হাওয়ার ভোরে, খালি পায়ে বিদ্যালয়ের পথে ফুল নিয়ে হাজির হতাম।চারদিকে যেন সেই বায়ান্নর আবহ বিরাজ করত। চারদিকে ভেসে আসত..."আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি"। হাজারো দিবসের মাঝে যেন আমার একুশে ফেব্রুয়ারি ম্লান না হয়ে যায়।

শারমিন আক্তার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

একুশে ফেব্রুয়ারি চেতনার উৎস

ভাষা আন্দোলন বাঙালি বা বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম বিপ্লব ও ইতিহাসের চিরন্তন স্বাক্ষর। এই আন্দোলন আমাদের জাতীয়তাবাদের প্রতীক। এই আন্দোলন প্রমাণ করেছিলো শুধু ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের জীবন, সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে না। একসাথে বসবাস করতে হলে ভাষাগত, আত্মিক, মানবতা, আদর্শিক সাদৃশ্য থাকা বাঞ্চনীয়। একইসাথে মাতৃভাষার অধিকার, সম্মান রক্ষার্থে রক্তস্রোতে ভাসা রাজপথে নিজেদের জীবন বিলিয়ে পুরো পৃথিবীকে জানিয়ে দিলো যে প্রত্যেক ভাষার সম্মান দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আশরাফুল ইসলাম

 

এই অনন্য দৃষ্টান্ত পৃথিবীর বুকে মাতৃভাষার সম্মানে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে যাতে আর কোনও শাসক কোনও ভাষার অধিকার খর্ব করতে না পারে। যারা ভাষার সম্মানহানী করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে বুলেটের সামনে বুক পেতে লড়াই করতে হবে। তবে বাঙালির কাছে এই বিপ্লব কেবল ভাষার অধিকারের বিপ্লব নয় এই বিপ্লব পরবর্তী সকল আন্দোলনের প্রেরণা! ১৯৫২ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে ছাত্র সমাজ প্রত্যেকটি আন্দোলনে ভাষা আন্দোলনকে উৎসাহের বীজ মেনে সামনে এগিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যত অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই হবে সেখানেও ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য কমবে না।

শাহ মো. আশরাফুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

একুশের চেতনায় স্বাধীনতার বীজমন্ত্র

একুশ ভাষার প্রাণ
একুশ করেছে দান
একুশ মোদের পাথেয়
একুশকে করো না নাকো হেয়

একুশ জাতীয় চেতনার মানসপটে নতুন সংস্কৃতি- চেতনার স্বাক্ষরই বহন করে।তবে তা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে নি।।ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গে। যাকে ভিত্তি করেই পরবর্তীতে প্রতিটি আন্দোলনের মূলে ছিল একুশের চেতনা যা জনমনে মাইল ফলক হিসেবে।

মো. হাবিবুল্লাহ

 

তার পরে সেই ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বিজয়, ১৯৬৬ এর ৬ দফা, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন, তার পরে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে মহান বিজয়। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ এনামূল হক বলেন "একুশে ফেব্রুয়ারি কোন বিশেষ দিন, ক্ষণ বা তিথি নয়, একটি জাতির জীবন্ত ইতিহাস"!! এ ইতিহাস অগ্নিগর্ভ! বাঙালি জাতীয় চেতনায় উপলব্ধির ক্রমবিকাশ এখানে এসে গাঢ়তায় রূও নেয়!! এ ইতিহাস মৃত নয়, একেবারে জীবন্ত!!!

মো. হাবিবুল্লাহ
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিকৃতির কবল থেকে মুক্ত করতে হবে

পৃথিবীতে কেবল একটি জাতি এবং একটি ভাষাই আছে, যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। সত্যিই এমন একটি জাতির একজন হতে পেরে আমি খুবই গর্ববোধ করি। এ ভাষা আমার মায়ের মুখের ভাষা, আমার প্রাণের ভাষা 'বাংলা ভাষা'। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাংলা ভাষার ব্যবহার যেন জগা-খিচুড়ির ভাষায় রূপ নিয়েছে। বেশি আধুনিক সাজতে গিয়ে অবজ্ঞা করছি আমাদের সংস্কৃতিকে। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে পড়াচ্ছি ইংরেজি মাধ্যমে, ইউরোপ, আমেরিকায়। পড়ানো দোষের নয়,এখানে আমাদেরকে লক্ষ্য রাখা উচিত সন্তানরা যেন বাংলা ভাষাটাও ভালো করে বলতে ও লিখতে পারে।

মোমেনা আক্তার

 

বাংলা ভাষাকে বিকৃতির কবল থেকে মুক্ত করতে হবে। আমরা জাতির জন্য ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি এবং তাঁদেরকে শ্রদ্ধা করি। বছরের প্রতিটা দিনই আমাদের সচেতনভাবে ভাষা শহীদদেরকে এবং আমাদের ভাষাকে ভালোবাসা উচিত। ভাষাকে বাঁচাতে হলে, ভাষার মর্যাদা ও অধিকারকে সমুন্নত রাখতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ভাষা পরিকল্পনা। বাংলা ভাষা প্রত্যেকটা বাঙালীর অন্তরে শ্রদ্ধার সাথে স্থান করে নেক।

মোমেনা আক্তার
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

২১'শ আমার অহংকার

বাংলা ভাষা জন্ম লগ্ন থেকে বহু যুদ্ধের মাধ্যমে, বহু পথ পারি দিয়ে আজকের রূপে এসেছে। বলা হয়ে থাকে প্রাচীন "শতম" ভাষা থেকে আজকের বাংলা ভাষার জন্ম। সৃষ্টির সময় হতে বাংলা ভাষা লড়াই করে আসছে। ১৯৪৭-১৯৫২ এক রক্তাক্ত ইতিহাসের মাঝে দিয়ে আজকের মাতৃভাষা বাংলাকে আমরা পেয়েছি। বিনিময়ে দিয়েছি ২ লক্ষ প্রাণ। বিশ্ব দিয়েছে আমাদের ২১'শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে বাংলার নিজস্ব স্বকীয়তার মাঝে পরিবর্তন দেখা দেয়।

ইরতাজ আরা

 

বিশ শতকে দেশে, বিদেশি সংস্কৃতির প্রবেশে তরুণ সমাজ নিজের ভাষার প্রতি তাদের প্রগাঢ় ভালোবাসা কিছুটা হলেও হারিয়ে ফেলেছে। আমি, আপনি একা কোনদিন তরুণ সমাজকে সঠিক পথ দেখাতে পারবো না, যদি এক না হয়। আজ ভাষার মাসে, আমাদের গর্বের মাসে আমরা পুরো তরুণ সমাজ মুস্টিবদ্ধ হয়ে শপথ নেই- "আমরা আমাদের ভাষাকে পুনরায় তার সম্পুর্ণ মর্যাদা ফিরিয়ে দেব"

ইরতাজ আরা
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চা করা জরুরি

ভারতীয় উপমহাদেশে একটি কালজয়ী ইতিহাসের নাম ভাষা আন্দোলন। যা সংগঠিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে। তৎকালীন আন্দোলনে সকল শ্রেণীর মানুষের অবদান থাকলেও, ছাত্র সমাজের অবদান ছিল অন্যতম। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আজও অবধি মূল্যায়ন হয়নি শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার।

শেখ মনিরুল ইসলাম

 

সরকারি আমলাতন্ত্র, এমপি, মন্ত্রী, শিক্ষক মহোদয়, ছাত্র সমাজ, বণিকদল, এমনকি উচ্চ শিক্ষিত মানুষের মাঝেও, শুদ্ধ করে বাংলা ভাষা বলার অভ্যাস গড়ে উঠেনি। যা বাঙালীদের জন্য কলঙ্কজনক। আর এভাবেই বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিদেশি ভাষা ভাষী মানুষ। তাই, বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও মর্যাদা সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে হবে।।

শেখ মনিরুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি আকবর আলী কলেজ উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।

ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ