লাইভ প্রতিবেদক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ফাও খাওয়া, যৌন হয়রানি, শিক্ষক লাঞ্ছনাসহ নানা অপকর্মে সভাপতির নামই ঘুরে ফিরে চলে আসে।
ক্যাম্পাসে কোন অঘটন ঘটলে কোন না কোনভাবে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থর নাম চলে আসে। এরপরই ঘটনায় রং মাখিয়ে বিচারের নামে চলে প্রহসন। শেষতক অপরাধীরা আর শাস্তি পায় না। এতে শাবিতে একের পর এক অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে সুমন চন্দ্র দাস নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে হত্যা করা হয় সঞ্জীবন পার্থর নেতৃত্বে। এঘটনায় তার গ্রুপের কর্মীদের নামই ঘুরেফিরে এসেছে। যদিও তাদের কোন বিচার হয়নি।
সেসময় শাবিতে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা উত্তম কুমার দাসের পা কেটে দেয়া হয়। ওই ঘটনাতেও পার্থের অনুসারীদের নাম চলে আসে।
দেশজুড়ে আলোচিত খাদিজার ওপর হামলায় জড়িত বদরুলও পার্থর গ্রুপের ছিলেন। যদিও তার পরিণতি আমরা দেখেছি। দেশজুড়ে সচেতন মহল সোচ্চার হওয়ায় বদরুলের শাস্তি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পার্থর গ্রুপের অনেক নেতাকর্মী একসময় ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পার্থ তাদের পদ দিয়ে তার গ্রুপে রেখেছেন জামাই আদরে। ছাত্রদল ও শিবির থেকে আসা ওইসব কর্মীই শাবিতে বিভিন্ন সময় নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন আর পার্থ তার মদদ দিচ্ছেন। বিচার না করে সাপোর্ট দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গতবছর র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর নাম চলে আসে। ওই ছাত্রলীগ কর্মীরাও ছিল পার্থর অনুসারি। পরে অবশ্য ওই ঘটনায় ৫ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবুও তাদের নিজদলে রেখেছেন পার্থ। তারা হল শাবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোশাররফ হোসেন রাজু, গণিত বিভাগের নজরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, মাহমুদুল হাসান ও সমাজকর্ম বিভাগের অসীম বিশ্বাস। উল্লিখিত ছাত্রলীগ কর্মীরা বহিষ্কারাদেশ চলাকালেই বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন পার্থর প্রভাব খাটিয়ে।
এছাড়া হলে থেকে ফাও খাওয়া, ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, হুমকি-ধমকিসহ নানা অপকর্মে ঘুরেফিরে পার্থর অনুসারীদের নামই চলে আসে। তবুও তাদের কোন বিচার হয় না।
সর্বশেষ যৌন হয়রানির মত স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে প্রতিবাদ করেও মার খেতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিকের। তাদের একজনকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে দেয়া হয়েছে। অন্যজনকেও গুরুতর আহত করা হয়েছে।
সভাপতি পার্থর সামনেই ছাত্রলীগের কতিপয় উশৃঙ্খল নেতাকর্মী অপকর্ম করছে প্রকাশ্যে। শনিবার যৌন হয়রানি নিয়ে হট্টগোলের সময় পার্থ সেখানে উপস্থিত থাকলেও তিনি তার কর্মীদের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেননি। উপরন্তু এবিষয়ে তার কিছু করার নেই বলে অপকর্মকে উৎসাহিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনার পরে সন্ধ্যায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা দুই সাংবাদিকের অপর হামলা চালায়। অাহতরা হলেন, শাবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার আব্বাস ও সহ-সভাপতি সৈয়দ নবীউল আলম দিপু।
এদিকে ছাত্রলীগের হামলায় দুই সাংবাদিক আহতের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থী, সাংবাদিক সমাজ, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা এঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এতকিছুর পরেও সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত নয়। এসব কথা বলে তিনি আবারও অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তিনি এও বলেছেন ছাত্রলীগ জড়িত থাকলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এমনটাই প্রত্যাশা করছে আপরাধীদের শাস্তি হোক।
তাদের দাবি যৌন হয়রানি ও হামলার ঘটনায় পার্থর সংশ্লিষ্টতা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এঘটনায় পার্থসহ দোষীদের বিচার দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ঢাকা, ০৯ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: