Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

করোনাকালীন ঈদে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২১, ২৩:৩০

করোনাকালে আবার এসেছে ঈদ, বছরের সবচেয়ে খুশির দিন। কিন্তু এ ঈদের আনন্দ এবারও অনেকটাই ম্লান। গত দুই ঈদের পর এবারের ঈদকে ঘিরে নানা আয়োজন, পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাস আবারব সকল আয়োজন, পরিকল্পনা শেষ করে দিয়েছে। তবে ঈদের প্রকৃত আনন্দ ভোগে নয় ত্যাগে। সামাজিক দূরত্ব বজায়ের বাধ্যবাধকতায় স্বজনের সঙ্গে ঈদে আমরা আক্ষরিক অর্থে কোলাকুলি করতে পারব না।

তবে আমরা পরস্পরকে অদৃশ্যভাবে জড়িয়ে রাখতে পারব প্রীতিতে, স্নেহ, ভালবাসায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঈদ আনন্দটা যেনো একটু অন্যরকমই হয়। তেমনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন এবারের ঈদ ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

ঈদ আনন্দ হোক পারস্পরিক সহমর্মিতার
রিদুয়ান ইসলাম, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ: ঈদের দিনটি সবার মতো আমারও অত্যন্ত পছন্দের। মা-ভাবির হাতের রান্না খাওয়া, স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর আড্ডা-গল্পের উপলক্ষ তৈরি হয় ঈদেই। বন্ধুদের সঙ্গে কিছু ঘুরব। আত্মীয়-প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাব। এভাবে ঈদের দিনটি পার করব। পরিবারের সবার সাথে ঈদটা কাটাবো। বাবা, মা, ভাই, ভাবির সঙ্গে ঈদ করার আনন্দই অন্যরকম।

এই আনন্দ সত্যিই অন্যরকম। আর ঈদ মানে শুধু নিজে ভালো খেয়ে, ভালো পড়ে, নিজে ভালো থাকা নয়, পাশাপাশি অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে নিয়ে আনন্দকে ভাগ করে নেওয়া আমরা বন্ধুরা মিলে ঈদের আগে গরিব-দুঃখী পরিবারদের সব সময় সাহায্য-সহযোগিতা করি।

রিদুয়ান ইসলাম

 

এবারও করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঈদের দিন স্বল্প পরিসরে স্কুলবন্ধুদের নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার বিশেষ আড্ডা-আয়োজন করবো। এর বাইরে এলাকার আরও বন্ধু-বড় ভাই, আত্মীয়-পরিজন তো রয়েছেন; তাদের সবার সঙ্গে ভার্চুয়ালভাবে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেবো। ঈদের এই আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মজাই আলাদা। ঈদ সবার জীবনে আনন্দ বয়ে আনুক এটাই প্রত্যাশা।

ঘর-ছাদ আর নেট ঘেঁটে নিরানন্দের ঈদ
সাদিয়া আফরিন মৌরি, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ: ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আবারও আসছে ছাদে বেড়ানোর ঈদ। এবারের ঈদ ও কোভিড-১৯ কালের ঈদ সবার ঘর এবং ছাদ এই দু’য়েই ছিল সীমাবদ্ধ থাকছে। কোভিড-১৯ বিশ্বে মানব শরীরে হানা দেয় ২০১৯ এ। আমাদের দেশে এলো আজ প্রায় বছর দেড়েক ছুঁই ছুঁই। এরই মধ্যে দুটি ঈদ পার করেছি আমরা। পূর্বের দুটি ঈদের মতো সারাদিন ঘরে বসে, শেষ বিকেলে বাসার ছাদে আর ইন্টারনেটে বসে কেটে যাবে ঈদের দিন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে ভার্চুয়ালি।

সাদিয়া আফরিন মৌরি

 

বিকেল বেলা পরিবার নিয়ে ছাদে হাটাহাটি করেই এবারের ঈদটা কেটে যাবে। করোনাভাইরাস থেকে বাচঁতে হলে এর বাইরে তো কিছু করার নেই। ঘরে বন্দি থেকে আর কেমন ঈদ উৎসব পালন করতে হবে। কেননা এবারের ঈদটাও ঠিক আগের মতোই এসেছে আমাদের জীবনে। এবার বেঁচে থাকাই আমাদের বড় ঈদ হবে। শুধুমাত্র মানবিকতা টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাড়িতে থেকেও মলিন ঈদ আনন্দ
মোঃ মেহেদী হাসান, শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ: করোনা ভাইরাসের উপস্থিতিতে অনুপস্থিত ঈদ আনন্দ। করোনার নতুন এক আতঙ্কের নাম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। যা ঈদের আনন্দকে করে দিয়েছে নশ্যাৎ। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে ঈদকে উপভোগ করতাম মনের গভীরতর অবস্থান থেকে কিন্তু এখন আর সেই অনুভূতি কাজ করে না। ঈদকে সামনে রেখে দশদিন আগেই অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কেটে রেখে বাড়ি এসে ঈদ করার যে আনন্দ ছিলো তা এখন বাড়িতে থেকেও নেই।

মোঃ মেহেদী হাসান

 

তবুও কেটেছে সময়, এসেছে ঈদ, কেটেও যাবে ঈদের দিন। পরিবার, পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে কাটাবো ঈদের দিন। চেষ্টা করবো গরীব দুঃখীদের সহায়তার মাধ্যমে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার। পাপ মোচনের এ মাসে করোনা মোচন হোক এটিই সবার প্রার্থনা।

ত্যাগে নয় উদযাপনে হোক ভিন্নতা
নাজিয়া আফরিন, শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ: ঈদ মানেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা, ঈদ মানেই ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপে টানা দ্বিতীয় বারের মতো রয়েছে সবকিছুতে বিধিনিষেধ। গতবছরের মতো এবারোও চলছে লকডাউন নামক বিধিনিষেধ। যদিও ঘরমুখো মানুষের আপন ঠিকানায় ছুটে চলা কিছুতেই আটকানো যাচ্ছেনা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে যা মোটেও কাম্য নয়।

নাজিয়া আফরিন

 

রমজানের একমাসের সিয়াম সাধনার পর ত্যাগের মহীমায় উজ্জীবিত করতে আসে ঈদ। দেশের এই কঠোর সময়ে নিজেদের সাধ্যমতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এটিই সঠিক সময়। সকল স্তরের মানুষ তাদের ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে সাধ্যমতো সকলের পাশে দাড়ালে উজ্জীবন ঘটবে ত্যাগের মহীমার। ভিন্ন স্বাদের এই ঈদে ত্যাগের মহীমায় উজ্জীবিত হতে পারলেই পূর্ণতা পাবে ঈদের অপূর্ণ আনন্দ।

এবারের ঈদ হোক সম্প্রতি ও ভালোবাসার
আসাদুজ্জামান আপন, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ: শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্কদের আকাশেও উঁকি দেয় শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ। বেজে উঠে উৎসবের সাইরেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে ঈদের সেই চিরচেনা আমেজ। প্রতি মুহূর্তেই নতুন সংক্রমণ, নতুন মৃত্যুর খবরে সবাই বিপর্যস্ত। প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি থাকে তুঙ্গে। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বিপরীত। ছাদ উপচে পড়া যাত্রীসহ ট্রেনের ছবি এবার দেখা যাবে না। তারপরও ঈদের আনন্দ কিছুটা উপভোগ করতে যে যার মতো করে নিচ্ছে এবারের ঈদ প্রস্তুতি।

আসাদুজ্জামান আপন

 

আমার বেলায়ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। করোনাকালীন এবারের ঈদের পুরো সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাব বলে মনস্থির করেছি। আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে এরই মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষের মধ্যে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছি। আর্থিক ব্যাপার বড় কথা না। মন মানসিকতাই মুখ্য। আমরা কিছু বন্ধুরা মিলে গরিব দুঃখী মানুষের মুখে ঈদের দিনে কিছু সেমাই মিষ্টি তুলে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি ঈদের টাকায় কর্মহীন এই মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি।

করোনায় আবারও বিবর্ণ ঈদ
সিদরাতুল মুনতাহা, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ: সমগ্র মুসলিম জাতির আনন্দ উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ঈদ। প্রতিবার এই ঈদকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন পরিকল্পনা, আনন্দে মেতে ওঠে সকলে। কিন্তু গতবছর করোনা মহামারি বিবর্ণ করে দিয়েছিল এই ঈদ আনন্দকে।

তাই এবছরে ঈদ উপলক্ষে প্রায় সকলেরই ছিল বিভিন্ন পূর্বপরিকল্পনা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ঈদের আনন্দ যেন আবার বিবর্ণ রুপ ধারণ করেছে। এবার ও হয়তো চার দেয়ালের মধ্যেই কাটবে সকলের ঈদ, হবেনা ঈদগাহে নামাজ আদায়, আত্নীয়-স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার যে প্রচলিত রীতি আছে তা এবারও পালিত হবে না। কারণ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা অত্যন্ত জরুরি।

সিদরাতুল মুনতাহা

 

তাছাড়া ঈদ যেমন ধনী-গরীব, ছোট-বড় সকল ভেদাভেদ দূর করে একত্রিত হতে শেখায় তেমনই ভালোবাসতে শিখিয়ে ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হতেও শেখায়। তাই এবছরও না হয় নিজের পরিবারের সাথে কিংবা যে যেখানে অবস্থান করছি সেখানেই ছোট্ট পরিসরেই পালন করব ঈদ। পৃথিবী থেকে একদিন করোনা ভাইরাস বিদায় নেবে ইনশাআল্লাহ এবং সেইদিন ঈদের আনন্দেই আনন্দিত হবে সকলে, চারেদিকে হবে বিভিন্ন আনন্দ উৎসব। সেই দিনটি শীঘ্রই আসুক এই পৃথিবীর বুকে-এটাই প্রত্যাশা।

ঈদের দিনটি হোক দীপ্তিময়
সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি, শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট: দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ। আগমন হচ্ছে ঈদুল ফিতরের, এরই পাশাপাশি শেষ হচ্ছে মাহে রমজান। দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের পর সেই মহা আনন্দময় দিনটি আগমন হতে চলেছে। বরাবরের মতো এবারের ঈদের দিনকে নিয়েও অনেক আশা থাকলে ও পুরোটাই যেন সময়ের কাছে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি

 

করোনার জন্য এবার আর আমার স্বপ্নগুলো গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে ডানা মেলতে পারছেনা। চাঁদ রাতের দিন বা ঈদের দিন কেবল নিশ্চুপ নগরীর বদ্ধ করিডোরে নির্জনে কাটাতে হবে আমাকে এইটা ভেবে এবং আনন্দগুলো সবার মাঝে ভাগ করতে না পারায় আমার মন যেন দুঃখের সাগরে ডুবে যাচ্ছে। তাও মনে মনে আশা রাখি যে করোনার এই ভয়াল অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলো পরিবর্তন হয়ে আসন্ন ঈদের দিনটি হয়ে উঠবে অনেক বেশি দীপ্তিময়।

ব্যতিক্রমধর্মী ঈদ আনন্দ
শেখ শাহরিয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ: শত বিপত্তির মাঝেও এক চিলতে আনন্দ হিসেবে এসেছে এবারের ঈদ। করোনাকালীন ঈদ আমাদের উপহার দিতে চলেছে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র সব ভেদাভেদ ভুলে মানবতার শত্রু অহমিকা এবং বিদ্বেষের অদৃশ্য দেওয়াল ভাঙ্গতে হয় কীভাবে। এই মহামারীর ভেতরে আগেও দুটো ঈদ কাটিয়েছি। তাই করোনাকালীন সময়ে এবারো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শেখ শাহরিয়ার হোসেন

 

কারন নিম্নবিত্ত যে কেউ সাহায্য চাইতে পারলেও সবচেয়ে বিপাকে পড়েন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি। তারা তাদের সম্মান হারানোর ভয়ে কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারেনা। এভাবেই করোনাকালীন ঈদের আনন্দ উপভোগ করুক পৃথিবীর সব মানুষ সমান ভাবে। সকল বিভেদ ভুলে এই ঈদে সকলে ভ্রাতৃত্বের এক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হোক।

ঢাকা, ১৩ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ