Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

রাজশাহী বিশবিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি কে হচ্ছেন?

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৭, ২২:০৪

মনিরুল ইসলাম নাঈম, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভিসি পদে কে বসছেন এনিয়ে চলছে সরব আলোচনা-সমালোচনা। ওই লোভনীয় পদের জন্য শুরু হয়েছে নানা ধরনের লবিং ও গ্রুপিং। চলছে রাজনৈতিক তদবীর। জানাগেছে ঢাকামূখী হয়েছেন অনেক সিনিয়র প্রফেসর ও শিক্ষক সমিতির নেতা। তারা আঞ্চলিকতা ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকেও কাজে লাগাচ্ছেন বলে অনেকেই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।

বলেছেন, দল যেহেতু ক্ষমতায় তাই একটু সুযোগ নেয়াটা দোষের কিছু নয়। এদের মধ্যে বিতর্কিত কয়েকজন শিক্ষকও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ওই দুই পদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দাবি প্রশসনে যোগ্য ও সৎ শিক্ষককে ওই দুই শীর্ষ দায়িত্বে দেয়া হোক। 


জানা গেছে, ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান রোববার তাদের কার্যকালের চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। ফলে সোমবার থেকে শূন্য হয়েছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ দুটি। রোববার শেষ কর্মদিবসে প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স রুমে তারা দপ্তর প্রধানদের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন। এসময় তারা দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা প্রদান করায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এদিকে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কারা আসছেন, পুরো ক্যাম্পাসে যেন আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আর নতুন পদ পেতে আগ্রহী শিক্ষকরাও দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। তবে সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যশা, শিক্ষা, গবেষণার মান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা যারা ভালো, তারাই যেন নেতৃত্ব আসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ১০/১১ জন প্রফেসর ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ পদে পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছেন। এই আগেও প্রশাসনের একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন শিক্ষকরাও চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। সাবেক একজন ভিসিও নতুন করে আবারও সেই পদটি নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

গোয়েন্দা ও বিভিন্ন সূত্র বলছে, ‘বর্তমান প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা ভিসি মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান আবারও একই পদে থাকতে পারেন এমনটাও শোনা যাচ্ছে। তাদের দায়িত্বে গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিকভাবে যে উন্নতি হয়েছে তা এরইমধ্যে সরকারের নজর কেড়েছে। তাই বর্তমান সরকার হঠাৎ করে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে নাও পারেন। এর বাইরেও একাধিক শিক্ষক ওই পদগুলোতে দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও ধারণা সূত্রগুলোর। তবে তাদের সম্পর্কে সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় বিষয়টি নিয়ে
নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

বর্তমান প্রশাসনের বাইরে ভিসি বা প্রো-ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি মো. আবুল কাশেমের নাম আলোচনায় রয়েছে। তিনি ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক হলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন বিভাগে শিক্ষা উপকরণের স্বল্পতা হলেও তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সেই সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন।

পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর সাদেকুল আরেফিন। তিনি বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রশাসনের প্রথম তিন বছর ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে তিনি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তিনি দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত রয়েছেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর রকীব আহমেদ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদটি পেতে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় হেকেপ প্রজেক্ট শেষ হলে তিনি কয়েক লাখ টাকার হিসেব দিতে পারেননি বলে অভিযোগ আছে।


সাবেক ভিসি (২০০৯-১২) এম আবদুস সোবহান দৌঁড়ঝাপ করছেন নতুন করে আবারও সেই পদটি নিতে। তিনি ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে একাধিক নিয়োগ দিয়েছিলেন। নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ওই ভিসিকে আদালতের কাঠগড়াতেও দাঁড়াতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু, টিএসসিসিসহ বিভিন্ন স্থায়ী তহবিলের কোটি কোটি টাকা শেষ করেছিলেন আবদুস সোবহান। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই তহবিলের অর্থ পরিশোধ করেন। দায়িত্ব শেষ করে ভিসি বাসভবন থেকে চলে যাওয়ার সময় সোবহান ওই বাসভবনের অনেক আসবাবপত্র নিয়ে যান। এ ঘটনায় পরবর্তীকালে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।


ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মুশফিক আহমেদও পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে ‘মরিয়া’ হয়ে উঠেছেন। বর্তমান প্রশাসনে তিনি ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এসুরেন্স’ সেলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আনন্দ কুমার সাহা চেষ্টা করছেন পরবর্তী প্রশাসনে আসতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি থাকা অবস্থায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। তবে তিনি বিভেদ সৃষ্টির বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বিভেদ নয়, দলের ইউনিফিকেশনের ব্যাপারেই বরাবর কাজ করেছি। আমার অবদানের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই জানেন। ব্যক্তি বিদ্বেষের কারণে আমার বিরুদ্ধে দলে বিভেদ সৃষ্টির অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ভূ-তত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার চেষ্টা করছেন দায়িত্ব পেতে। এর আগে তিনি গত প্রশাসনের সময়ে (২০০৯-১৩) ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ওই প্রশাসনে নিয়ম বহিভূতভাবে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এই শিক্ষকের স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর তানজিমা ইয়াসমিন ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (আইবিএসসি)-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে হেকেপ প্রজেক্টে কয়েক লাখ টাকার হিসেব দিতে পারেননি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে।  

ফলিত-রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মো. রোস্তম আলী ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার পাণ্ডে আগামী  প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে উপর মহলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।


এছাড়া প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর সেলিনা পারভীন ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শাহ্ আজম শান্তনুর কথাও শুনা যাচ্ছে।


তবে শিক্ষকরা বলছেন, অনেকে যোগাযোগ রক্ষা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নিয়োগ দেবেন পরবর্তী প্রশাাসনকে। তাই দেখার বিষয়, পরবর্তীতে কারা গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে বসছেন।


দায়িত্ব পালন শেষ দিনে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা বিগত ৪ বছর বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মান সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছি।


আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল তিনটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল। নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করা। আমরা কোন শক্তির সাথে আপোষ না করে সফলতার সাথে চ্যালেঞ্জ মেকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।


প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন ভিসি প্রফেসর আব্দুস সোবহান ও প্রো-ভিসি প্রফেসর নুরুল্লাহ্ এর কাছ থেকে বর্তমান ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান  দায়িত্বভর প্রহণ করেন। তারা সোমবার থেকে নিজ বিভাগে ফিরে যাবেন। ফলে দুই পদে পুনরায় নিয়োগ দিবেন বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।

 

ঢাকা, ২০ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ