Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

করোনার টিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০২:৫৯

দেশে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা চলে এসেছে এবং গত ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকা দেওয়ার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু কারা পাবে এই টিকা, কাদের বা নেয়া উচিত হবে টিকা? টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে জনমনে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন, টিকা নিলেই কি ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে। টিকা নিয়ে এই জল্পনা-কল্পনা, টিকা গ্রহণ, ব্যবস্থাপনা নিয়ে কি ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?

দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) এর কয়েকজন শিক্ষার্থীর টিকা নিয়ে ভাবনা তুলে ধরেছেন আমাদের ক্যম্পাসলাইভ২৪ প্রতিনিধি 'আর এস মাহমুদ হাসান'

পিউলি মৃধা, রসায়ন বিভাগ (চতুর্থ বর্ষ)

শিক্ষার্থী ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দিতে হবে: করোনার কারণে স্থবির জীবনযাত্রা, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভবিষ্যত। চলতি মাসে দেশে ভ্যক্সিন আসলেও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ অনুযায়ী "৭৪.৬ শতাংশ নাগরিক একটি কার্যকর, নিরাপদ এবং চিকিৎসকের সুপারিশকৃত ভ্যাক্সিন চান বিনামূল্যে, ৭.৮ শতাংশ একেবারেই নিবেনা, ১৭.৮ শতাংশ নিবেন কিনা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন।"

পিউলি মৃধা

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে আসা অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় তৈরি এই ভ্যাক্সিন নিরাপদ, করোনার পরিবর্তিত মিউটেশন প্রতিরোধ করতে সক্ষম। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, প্রথমত সবধরনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির উর্দ্ধে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্তদের ভ্যক্সিন প্রদান করতে হবে।

শিক্ষার্থী, নিম্নবিত্ত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করতে হবে। ভ্যাক্সিন নিয়ে ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে সতর্ক এবং কঠোর থাকতে হবে। ভ্যাক্সিন নিতে অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থা বাতিল করে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সারাদেশে ভ্যাক্সিনের সুষ্ঠু বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।

তোফায়েল আহমেদ, ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ (তৃতীয় বর্ষ)

ভ্যাক্সিন বয়ে আনুক স্নিগ্ধ সুন্দর বার্তা: সৃষ্টিকর্তার কাছে অবারিত শোকরিয়া যে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশ এত অধিক জনসংখ্যার অধিকারী হয়েও করোনা মহামারির ভয়াবহতা থেকে অনেকাংশেই বেচেঁ গিয়েছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাস এর ভ্যাক্সিন। পাশের দেশে তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিনের ৭০ লাখ ডোজ এখন দেশে মজুদ আছে। সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তা দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ভ্যাক্সিন গ্রহণ করেছেন।

তোফায়েল আহমেদ

 

পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট যাচাই বাছাইয়ের পর জনসাধারণের মাঝে ভ্যাক্সিন বিতরণ করা হবে। দেশের একজন সচেতন নাগরিক ও ছাত্র হিসেবে আমি অবশ্যই সকল জল্পনা-কল্পনা কে পাশ কাটিয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনায় টিকা গ্রহণ করতে আগ্রহী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ জানাই বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে তিনি যেভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন আর ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন করেছেন তা অতুলনীয়।

রুকাইয়া বাশার বর্না, পরিসংখ্যান বিভাগ (তৃতীয় বর্ষ)

টিকা নিয়ে সংশয়, তাহলে সমাধান কি?: ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশের জন্য সরকারি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে টিকা কেনা হচ্ছে, তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসেছে ২৫ জানুয়ারি । কিন্তু এ করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে সংশয়ে আছে মানুষ।

এই সংশয়ের কারণ যদি আমরা খুঁজি তাহলে বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন নেয়ার ফলে যে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এবং মানুষ মারাও যাচ্ছে সেটাকে দায়ি করা যায়। যদিও এটা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্যই কিনা- সেটা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। তারপরও গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন খবরে এগুলো এসেছে। সেটার কারণে জনমনে একটা ভয়, আতংক বা সংশয় থেকেই যাচ্ছে যে, টিকা নেয়ার সুযোগ হলে আমি নেবো কি নেবো না?"

রুকাইয়া বাশার বর্না

 

এইসব কারনেই বিভিন্ন পেশার বা সাধারণ মানুষের অনেকেই এখন নানাভাবে তাদের আস্থার অভাব বা সংশয় প্রকাশ করছেন। আমার মনে হয় যদি সাধারণ মানুষের মনে যে ভয় বা সংশয়গুলো রয়েছে, সেটা থেকে যদি তাদের বের করে আনা যায় বা তাদের মধ্যে করোনার টিকা নিয়ে যে প্রশ্নগুলো আছে, সেটার সমাধান দেওয়া যায়, হয়তো তবেই এই করোনা টিকা নিয়ে মানুষের চিন্তা, সংশয়ের সমাধান সম্ভব।

জাকির হোসাইন, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ (তৃতীয় বর্ষ)

করোনার টিকা, অগ্রাধিকার পাওয়া উচিৎ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের: করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে যে পাঁচটি টিকা বিশ্বময় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে সেগুলো হলো- যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডেনের ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ টিকা, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের যৌথ টিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকা। বাংলাদেশকে করোনার ভ্যাকসিন হিসেবে আনা হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় তৈরি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের (SII) প্রতিষেধক ‘কোভিশিল্ড’। শুরুতে টিকা গ্রহণ নিয়ে জনমতে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও, এখন প্রথম পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

জাকির হোসাইন

 

টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে এবং দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে সরকারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিৎ। করোনার কারণে দীর্ঘ ১১ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাখাত। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জট বাড়ছে। তাই প্রথম সারির করনোযোদ্ধাদের টিকা দেওয়ার পর জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনার টিকা দেওয়া উচিৎ। সারাদেশে শিক্ষা ব্যাবস্থার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এর কোন বিকল্প দেখছিনা।

জাহিদ হাসান, লোক প্রশাসন বিভাগ (দ্বিতীয় বর্ষ)

টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যেহেতু করোনা ভাইরাসের টিকা আমাদের দেশের জনগনের তুলনায় একেবারে সীমিত তাই দেশ ও জাতি পরিচালনায় যারা সামনে থেকে ভূমিকা পালন করছে তাদের আগে টিকা প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তারপর দেশের যে অঞ্চলে ভাইরাসের প্রাধান্য বেশি সেই অঞ্চলে লোকদের টিকার আওতাভুক্ত করা উচিত।

জাহিদ হাসান

 

এছাড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে প্রায় ১১ মাস দূরে আছে তাই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনা জরুরি। অবশেষে বলব টিকা নিয়ে একটি অসাধু গোষ্ঠী সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভিন্নভাবে কুৎসা রটাচ্ছে, আমাদের এই অপপ্রচারে বিশ্বাস না করে সকলকেই সচেতন হতে হবে।

সজিবুর রহমান, বাংলা বিভাগ (প্রথম বর্ষ)

টিকাকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছি: আমি মনে করি এই টিকা অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখবে, যদি না এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। দীর্ঘ এক বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে টিকার বিকল্প কিছুই নেই বর্তমান পরিস্থিতিতে। এমতাবস্থায় টিকাকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছি। বাড়ির বন্দিদশা জীবন কাটিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্ব্যালয়ে ফিরতে মুখর হয়ে আছে শিক্ষার্থীরা।

সজিবুর রহমান

 

এই টিকাই পারে শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরাতে। শুধু টিকা না, টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও হতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে সকলে টিকা গ্রহণ করতে পারবে। অন্যথায় এটি ব্যবসার পুঁজি হবে। টিকার সকল জল্পনা-কল্পনা কাটিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমিও টিকা নিতে প্রস্তুত।

ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ